রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র আরও ৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দেবে।
Published : 13 Jul 2023, 10:39 PM
বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাবের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আবারও অনুরোধ জানিয়েছে সরকার।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়ার সঙ্গে বৈঠকে এই অনুরোধ জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর যৌথ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “আমরা নাগরিক অধিকার ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা ও মতবিনিময় করেছি। মানবপাচারসহ বেসামরিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে আমরা কথা বলেছি।
“র্যাবের উপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আমাদের অনুরোধ আন্ডার সেক্রেটারির কাছে পুনরায় ব্যক্ত করেছি।”
গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বর র্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
এরপর বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া মেলেনি। যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বলে আসছে, নিষেধাজ্ঞা উঠানোর প্রক্রিয়া বেশ ‘জটিল’।
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকার মধ্যে গত মে মাসে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার; নির্বাচনে বাধাগ্রস্তকারীদের দেশটির ভিসা না দেওয়ার বিধি রাখা হয়েছে সেই নীতিতে।
র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধের জবাবে আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া কী বলেছেন, তা অবশ্য জানাননি পররাষ্ট্র সচিব।
আগামী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপের মধ্যে মঙ্গলবার চারদিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া। তার সঙ্গে প্রতিনিধিদলে আরও রয়েছেন এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডনাল্ড লু এবং যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) উপ-সহকারী প্রশাসক অঞ্জলী কৌর।
বুধবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের যায় মার্কিন প্রতিনিধিদল। পরদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক হয় তাদের।
এরপর দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে আজরা জেয়ার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়, যেখানে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি আলোচনায় আসে।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফিজুর রহমান, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এহসান-ই-ইলাহি, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম সারওয়ার এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান অংশ নেন।
ওই বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান এবং ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট, শ্রম ও মানবাধিকার, নির্বাচন, মানবপাচার রোধ, উন্নয়ন সহযোগিতাসহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক আলোচনায় আসে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের কথা তুলে ধরে আজরা জেয়া ব্রিফিংয়ে বলেন, “রোহিঙ্গাদের বিষয়ে অব্যাহত সহযোগিতার জন্য অন্য দাতা ও সম্ভাব্য দাতাদেরকে আহ্বান জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
“এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা, সম্মানজনক, ওয়াকিবহাল ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানাই আমরা।”
রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারের রাখাইনে ফেরানোর পরিবেশ বর্তমানে নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আজরা জেয়া বলেন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার আরও ৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দেবে।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চীনের উদ্যোগে ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বলেন, “রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এগিয়ে যাওয়ার পথনির্দেশ পেতে সব ধরনের বিকল্প নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি, যার একটি হচ্ছে অল্প সংখ্যক রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের আমাদের ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ।
“সর্বশেষ পরিস্থিতি আমরা তাদেরকে (মার্কিন প্রতিনিধিদল) অবগত করেছি। তারা আমাদের উদ্বেগ আমলে নিয়েছে এবং এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনে তাদের চিন্তা আমাদের সঙ্গে বিনিময় করেছে। সুতরাং আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগে থাকব।”