ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ
আলো ছড়ানোর দিক থেকে সৌদি প্রো লিগের খেলোয়াড়রা চলতি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে কারো চেয়ে কম নয় মোটেও।
Published : 29 Jun 2024, 08:05 AM
ইউরোপ ছেড়ে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো, এনগোলো কঁতেদের সৌদি প্রো লিগের ক্লাবগুলোতে যাওয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। অর্থের মোহে তারা ছুটেছেন মরুভূমিতে, জাতীয় দলে থিতু হতে পারবেন না- উঠেছে এমন তীর্যক কথাও। কিন্তু চলমান ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে দেখা যাচ্ছে, মরু দেশের লিগে গেলেও রোনালদো, কঁতেদের ধার কমেনি। মানের প্রশ্নে তারা পিছিয়ে নেই কারো চেয়ে একটুও।
জার্মানিতে চলমান ইউরোতে খেলছেন সৌদি আরবের ক্লাবগুলোতে খেলা ১৪ জন ফুটবলার। এদের মধ্যে কঁতে, নিকোলাই স্তানচু জিতেছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কারও। বাকিরাও প্রমাণ দিচ্ছেন, সৌদিতে তাদের যাওয়া নিয়ে নাক সিঁটকানো ভুল ছিল।
চোটের থাবায় জেরবার কঁতে দুই বছর পর ফেরেন ফ্রান্স দলে। অথচ ইউরো মিশনে ফরাসিদের হয়ে এরই মধ্যে দুই ম্যাচে পেয়েছেন সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি। খেলার পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা অপটার তথ্য অনুযায়ী, ৩৩ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডারের ধার, গতি-ক্ষিপ্রতা, ফিটনেস কমেনি একটুও।
দূরত্ব ‘কাভার’ করার ক্ষেত্রে কঁতে আছেন তৃতীয় সর্বোচ্চ স্থানে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে বিশ্বকাপ জয়ী এই মিডফিল্ডার ছিলেন দ্বিতীয় দ্রুততম গতিময় খেলোয়াড়, তার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন কেবল ২৫ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপে।
দীর্ঘ চোট কাটিয়ে সৌদি ফুটবলে মান ধরে রাখা নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন কঁতেও। আল ইত্তিহাদে যোগ দেওয়া এই ফরাসি বলেছিলেন, সৌদি প্রো লিগের মান অনেক উঁচুতে।
“সেখানে প্রত্যাশা খুবই উঁচু মাপের। আমি সেখানে সবসময় সর্বোচ্চটা দেই এবং স্রেফ সেই একই কাজ আমি এখানে করতে চাই। এখানে থাকাটা তারই পুরস্কার।”
অন্য এক তুলনায় এগিয়ে সৌদি প্রো লিগ। ইউরোপের বাইরে থেকে মধ্যপ্রাচ্যের লিগের সর্বোচ্চ ১৪ জন খেলোয়াড় খেলছেন এবারের ইউরোতে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর সকার লিগের মাত্র ৮ জন খেলছেন।
ইউরোতে আলো ছড়াচ্ছেন রোমানিয়ার স্তানচুও। ৩১ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার গত বছর যোগ দেন দামাক এফসিতে। ইউক্রেইনের বিপক্ষে রোমানিয়ার ৩-০ গোলে জেতা ম্যাচে প্রথম গোলটি করেন স্তানচু; ম্যাচ সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জিতে নেন তিনি। এরপর থেকে রোমানিয়ার অন্য যেকোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে বেশি সুযোগও তৈরি করছেন স্তানচু।
সৌদি প্রো লিগের ‘পোস্টার বয়’ রোনালদো এখনও যদিও জালের দেখা পাননি, কিন্তু ৩৯ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড খুব একটা আড়ালেও নেই। এবারের আসরে সবচেয়ে বেশি আক্রমণ শাণানো খেলোয়াড় আল নাস্রের এই তারকাই।
ইউরোপের ক্লাব ফুটবল মাতানো রোনালদোর সৌদিতে পাড়ি জমানোর সময় তার পর্তুগাল দলে জায়গা পাওয়া, ইউরো খেলা নিয়ে সংশয় ছিল কারো কারো মনে। কিন্তু নতুন মিশন নিয়ে সবসময় আশাবাদী ছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রেয়াল মাদ্রিদে মুঠো ভরে পাওয়া এই মহাতারকা।
সৌদি লিগ নিয়ে রোনালদোও সবসময় উচ্চকিত; দৃঢ় কণ্ঠে একাধিকবার বলেছেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ’ এবং আল নাস্রে খেলা তার ইউরোতে সেরাটা দেওয়ার পথে অন্তরায় হবে না। হচ্ছেও না। রোনালদোর ক্লাব সতীর্থ স্পেনের এমেরিক লাপোর্তও বলেছেন, কঁতের ফর্ম প্রমাণ দিচ্ছে সৌদি লিগের মান কেমন।
“সৌদি লিগ নিয়ে মানুষের মধ্যে কুসংস্কার আছে। প্রতিটি লিগের নিজস্ব মান আছে। (ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের সঙ্গে তুলনায়) সেখানকার ছন্দও একই রকম।”
উয়েফার পরিসংখ্যান অনুযায়ীও, ফিটনেসের দিক থেকে সৌদির ক্লাবগুলোর খেলোয়াড়দের ঘাটতি নেই। চলতি ইউরোতে অনেক পাতায় ছড়ি ঘোরাচ্ছে তারা। গতি এবং দূরত্ব কাভার করার দিক থেকে আল নাস্রে খেলা মার্সেলো ব্রোজোভিচ ক্রোয়েশিয়া দলে দ্বিতীয়। স্তানচু রোমানিয়া দলে সর্বোচ্চ দুরত্ব কাভার করা খেলোয়াড়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ১৩ দশমিক ৯ কিলোমিটার দৌড়ে প্রথম রাউন্ডের তালিকায় শীর্ষে আল হিলালের সার্বিয়ান, সের্গেই মিলেনকোভিচ-সাভিচ।
চলতি ইউরোয় যে সৌদি লিগে খেলা সবাই সমান দ্যুতি ছড়াচ্ছে, ঠিক তাও নয়। যেমন আল হিলালের হয়ে গোলের পর গোল করে, দারুণ একটা মৌসুম কাটানো সার্বিয়ান ফরোয়ার্ড আলেক্সান্দার মিত্রোভিচ পাননি জালের দেখা। যদিও আক্রমণ শাণানোর দিক থেকে তিনি আছেন দ্বিতীয় স্থানে। তার দল সার্বিয়াও ছিটকে গেছে আসর থেকে।
আবার পর্তুগিজ রুবেন নাভাস (আল হিলাল), নেদারল্যান্ডসের জর্জিনিয়ো ভেইনালডাম (আল ইত্তিফাক), বেলজিয়ান ইয়ান্নিক কারাসকো (আল শাবাব) এবং তুরস্কের মেরিহ দেমিরাল (আল-আহলি) গড়ে ১০১ মিনিট খেলা সুযোগ পেয়েছেন এ পর্যন্ত।
তা সত্ত্বেও, মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিকের কারণে মধ্য প্রাচ্যের লিগে যাওয়ারা তরুণ মেধাবীদের সঙ্গে লড়তে পারবে না, জাতীয় দলে ব্রাত্য হয়ে যাবে-এমন সমালোচনা শেষ পর্যন্ত পাচ্ছে না শক্ত ভিত। সম্প্রতি যেমন আলোচনা উঠেছে বেলজিয়ামের কেভিন ডে ব্রুইনেকে নিয়ে। ম্যানচেস্টার সিটির এই ৩৩ বছর বয়সী মিডফিল্ডার নিজেও সৌদি আরবে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি পুরোপুরি।
সৌদিতে উড়াল দেওয়ার পথ অনেকের সামনে দ্রুতই খুলে যাবে বলে মনে করেন মধ্যপ্রাচ্যের ফুটবল নিয়ে কাজ করা লিয়াম উইকস। স্কাই স্পোর্টসের সঙ্গে আলাপচারিতায় এই বিশেষজ্ঞ বলেছেন, সৌদিতে রোনালদো থাকায় ডে ব্রুইনে হতে পারেন একজন ‘গেম চেঞ্জার।‘
“এটা আসলেই সবার চোখ খুলে দেবে এবং আরও বেশি খেলোয়াড়ের এই লিগে পাড়ি দিতে দেখা যাবে।”