ছেলে না মেয়ে? গর্ভাবস্থায় প্রকাশ করা যাবে না লিঙ্গ পরিচয়

হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো যাতে লিঙ্গ পরিচয় শনাক্তকে নিরুৎসাহিত করে এবং গাইডলাইন কঠোরভাবে মেনে চলে, সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2024, 11:01 AM
Updated : 25 Feb 2024, 11:01 AM

মাতৃগর্ভে থাকা সন্তানের লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ না করতে আদেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

চার বছর আগে করা এক রিট আবেদনে দেওয়া রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের বেঞ্চ রোববার এই আদেশ দিয়েছে।

দেশের হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো যাতে গর্ভাবস্থায় লিঙ্গ পরিচয় শনাক্তকে নিরুৎসাহিত করে এবং গাইডলাইন কঠোরভাবে মেনে চলে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

এ ছাড়া গর্ভের শিশুর পরীক্ষার রিপোর্টের ডেটাবেজ সংরক্ষণ করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালতে রোববার রিটকারী পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট তীর্থ সলিল রায়। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।

গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় শনাক্ত বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে ২০২০ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এই রিট আবেদন করেন আইনজীবী ইশরাত হাসান।

ওই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় চিহ্নিত করা রোধে নীতিমালা তৈরি করতে বা নির্দেশনা দিতে সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা কেন ‘অবৈধ ও বেআইনি’ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ।

সেইসঙ্গে গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় শনাক্তকরণ ও প্রকাশ রোধে নীতিমালা বা নির্দেশনা প্রণয়নে সরকারকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয় রুলে।

রুল জারির পর ওই দিন রিটকারীর পক্ষে শুনানিকারী আইনজীবী আব্দুল হালিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় শনাক্ত করলে বা লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করলে সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গর্ভের শিশুর মায়ের ‘রাইট টু লাইফ’ এবং ‘রাইট টু ডিগনিটি’ লঙ্ঘন করা হচ্ছে।

“দেখা যাচ্ছে, পর পর দুটি কন্য শিশুর পর তৃতীয় শিশুটিও যদি মেয়ে হয়, সেটি শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই মায়ের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়, অনেক সময় অত্যাচারও সহ্য করতে হয়।

“তাছাড়া লিঙ্গ পরিচয় শনাক্ত হলে অনেক মাকে গর্ভনাশ করতে বাধ্য করা হয়। তাতে তার মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হয়। অনেক সময় মায়ের ওপর শারীরিক মানসিক অত্যাচার, নিপীড়নের কারণে গর্ভের শিশুটির শারীরিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জন্মের পর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।”

বিশ্বের অনেক দেশে গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় শনাক্তকরণ এবং পরিচয় প্রকাশের ক্ষেত্রে নীতিমালা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গর্ভের শিশুটি ছেলে না মেয়ে তা জানার প্রয়োজন আছে, যদি তা চিকিৎসক মনে করেন, যদি মা অথবা গর্ভের শিশুটির কোনো ধরনের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

“কিন্তু আমাদের দেশে এ নিয়ে কোনো নীতিমালা বা নির্দেশনা না থাকায় গড়পরতাভাবে গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করা হয়।”

আরও পড়ুন-

Also Read: গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ নিয়ে হাই কোর্টের রুল