মন্ত্রী বলেন, “কিছু কিছু জায়গায় প্রশ্ন ছিল। সেটা যখন স্থায়ী কমিটিতে যাবে, সেগুলো স্পষ্ট করা হবে।”
Published : 26 Oct 2023, 04:08 PM
আনসারকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়ে পুলিশের আপত্তি আমলে নিয়েই সংসদে বিল পাস হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বলেছেন, বিলে যেসব জায়গায় প্রশ্ন উঠেছে, সংসদীয় কমিটিতেই তার সুরাহা হয়ে যাবে।
গত সোমবার জাতীয় সংসদে বিলটি তোলার পর তুমুল বিতর্কের মধ্যে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
আইনমন্ত্রী বলেন, “এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, এইসব (গ্রেপ্তার) কোনো ক্ষমতা আনসারকে দেওয়া হচ্ছে না।
“এই আইনটা নিয়ে যেসব বিষয়ে প্রশ্ন ছিল, সেসব ব্যাপার দেখা হয়েছে। তদন্তের কথা বলা হয়েছে, যেগুলো পুলিশ বাহিনীর যেখানে বক্তব্য, সেই বক্তব্যগুলো প্রাধান্য দিয়ে এই আইনটা পাস হবে।”
গত সোমবার সংসদে ‘আনসার ব্যাটালিয়ন বিল-২০২৩’ সংসদে উত্থাপন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বিলের প্রস্তাব অনুযায়ী, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমোদনক্রমে অপরাধীকে ‘আটক, দেহ তল্লাশি ও মালামাল জব্দের ক্ষমতা’ পাচ্ছে ব্যাটালিয়ন সদস্যরা।
বিলটি উত্থাপনের সময়ই আপত্তি জানান সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম। সেদিন তিনি বলেন, “এখানে ‘বাঁশের চেয়ে কঞ্চি শক্ত হয়ে গেছে’। পুলিশের কাজটা যদি বিভক্ত এবং সমান্তরাল করা হয়, তাহলে কাজটা করা যাবে না। দেশে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর আলাদা আলাদা কাজ আছে। এলিট বাহিনীও করা হয়েছে।’
এই প্রস্তাবকে ‘ভয়াবহ দুশ্চিন্তার ও আতঙ্কের বিষয়’ হিসেবে বর্ণনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “পুলিশিং কিন্তু আলাদা জিনিস… এখানে সব কিছু কোড অব কনডাক্ট আলাদা, আইন আলাদা সবকিছু আলাদাভাবে পরিচালিত হয়। আনসারের কাজটা এমন না… তারা একটা ভিন্ন প্রতিষ্ঠান।”
বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই বিলে আপত্তি জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে পুলিশ।
এতে বলা হয়, আটক, তল্লাশি, জব্দ ও জব্দ তালিকা প্রস্তুত করার বিষয়টি অপরাধ দমন ও উদঘাটন ধারাবাহিক কার্যক্রম, যা ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুলিশই ক্ষমতাপ্রাপ্ত। এ ক্ষেত্রে আনসার বাহিনীকে ওইসব কার্যক্রমের কর্তৃত্ব প্রদান করা হলে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হবে। কোনো আইন প্রয়োগের জন্য একাধিক বাহিনীকে ক্ষমতা প্রদান করা হলে প্রয়োগের সময় পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝি ও দায়বদ্ধতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে মতভেদসহ নানাবিধ সমস্যাসহ আন্তঃবাহিনীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হতে পারে।
তুমুল আলোচনার মধ্যে বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বিল আকারে সংসদে উত্থাপিত হওয়া আইনের খসড়া নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, “এটা একটা মিস ইনফরমেশন, আপনাদের ভুল ধারণা। এই প্রশ্নটা ভুল ধারণার প্রেক্ষিতে করছেন।
“আনসার বাহিনীকে গ্রেপ্তার করার পারমিশন কখনও দেওয়া হয়নি, আজকেও দেওয়া হয়নি এবং কোনো আইন দ্বারা সেটা দেওয়ার কোনো ক্ষমতা আমাদের নেই। আমাদের ফৌজদারি কার্যবিধির আওতার ভেতরে থেকে সমস্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজ করতে হবে, এ হল মূল কথা।”
মন্ত্রিসভায় পাস হওয়া আইনের খসড়ায় কোনো শব্দ বা বাক্যের কারণে প্রশ্ন উঠলে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা তা পরিশুদ্ধ করবেন বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আইনমন্ত্রী বলেন, “কিছু কিছু জায়গায় প্রশ্ন ছিল। সেটা যখন স্থায়ী কমিটিতে যাবে, সেগুলো স্পষ্ট করা হবে।”
চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর বিলটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রস্তাবিত বিলের ৮ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যাটালিয়ন সদস্যের সামনে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমোদনক্রমে অপরাধীকে আটক করে অবিলম্বে পুলিশের কাছে সোপর্দ করবে এবং ক্ষেত্রমতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশক্রমে আটক ব্যক্তির দেহ তল্লাশি, কোনো স্থানে প্রবেশ ও তল্লাশি এবং মালামাল জব্দ করতে পারবে।’