আদালত অবমাননা: সকালে বিচারকের সাজা, বিকালে রায় স্থগিত

উচ্চ আদালতের আদেশ ‘উপেক্ষা’ করায় কুমিল্লার সাবেক মুখ্য মহানগর হাকিম সোহেল রানাকে আদালত অবমাননার দায়ে শাস্তি দিয়েছিল হাই কোর্ট।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2023, 03:02 PM
Updated : 12 Oct 2023, 03:02 PM

আদালত অবমাননার দায়ে অতিরিক্ত জেলা জজ পদমর্যাদার বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. সোহেল রানাকে হাই কোর্টের দেওয়া এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার রায় স্থগিত করা হয়েছে।

হাই কোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে তার করা আবেদনের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন।

কুমিল্লার সাবেক মুখ্য মহানগর হাকিম সোহেল রানা এখন আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত। রায়ের বিরুদ্ধে তার আবেদনটির ওপর আগামী ২০ নভেম্বর আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির দিন রেখেছেন চেম্বার বিচারপতি।

বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের হাই কোর্ট বেঞ্চ এদিন বেলা সোয়া ১১টায় আদালত অবমানায় অভিযুক্ত করে সোহেল রানাকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার রায় দেয়।

পাশাপাশি তাকে সাত দিনের মধ্যে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার শর্তে তিন ঘণ্টার মাথায় একই বেঞ্চ বেলা সোয়া ২টার দিকে ৩০ দিনের জামিন দেয় সোহেল রানাকে। এরপর হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন তিনি। বিকাল ৫টার পর শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালত তার দণ্ড স্থগিতের আদেশ দেয়।

চেম্বার আদালতে সোহেল রানার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী পলাশ চন্দ্র রায় ও সেলিম আশরাফ চৌধুরী।

আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক পরে সাংবাদিকদের বলেন, দণ্ড স্থগিত করে সোহেল রানার আবেদনটি ২০ নভেম্বর আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানো হয়েছে। সেদিন কার্যতালিকার ২০ নম্বর ক্রমিকের পর বিষয়টি থাকবে।

Also Read: আদালত অবমাননা: বিচারককে সাজা, তিন ঘণ্টা পরই জামিন

মামুন চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি এবং তার স্ত্রী রিয়া আক্তারের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা হয়। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে করা ওই মামলার বৈধতা নিয়ে তারা হাই কোর্টে রিট মামলা করেন।

তাদের আবেদনের শুনানি করে ২০১৮ সালের নভেম্বরে হাই কোর্ট রুল দেয়। পাশাপাশি মামলার কার্যক্রম চার মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। পরে ২০১৯ সালের ৬ মার্চ হাই কোর্ট এক আদেশে বলে, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।

কিন্তু কুমিল্লার মুখ্য বিচারিক হাকিমের দায়িত্বে থাকা সোহেল রানা গত ১০ এপ্রিল ওই মামলায় অভিযোগ গঠন করেন। মামলার আসামি মামুন তখন ফের হাই কোর্টে আবেদন করেন। 

সেই প্রেক্ষিতে হাই কোর্ট গত ১৪ অগাস্ট বিচারক সোহেল রানাকে তলব করে। উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গত ২১ আগস্ট তাকে হাই কোর্টে হাজির হতে বলা হয়।

সোহেল রানা নির্ধারিত তারিখে হাই কোর্টে হাজির হন এবং পরে নিজের ব্যাখ্যা দাখিল করেন। কিন্তু তার জবাবে সন্তুষ্ট না হওয়ায় গত ২৮ অগাস্ট তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল দেয় হাই কোর্ট। সেই সঙ্গে ৯ অক্টোবর তাকে ফের তলব করা হয়।

সেই রুলের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার হাই কোর্ট সাজার রায় দেয়, যা কয়েক ঘণ্টা পর স্থগিত হয়ে গেল।