বাংলাদেশে অনেক নতুনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম পেরিয়ে এল ১৬ বছর; আরও নতুন নিয়ে আসার কথা বললেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান সম্পাদক।
Published : 24 Oct 2022, 01:19 AM
বাংলাদেশে সংবাদ সেবাকে ডিজিটাল যুগে নেওয়ার কাণ্ডারি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম; ২৪ ঘণ্টা সচল বার্তা কক্ষ চালুর দৃষ্টান্তও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমেরই; মোবাইল ফোনে বাংলায় এসএমএস, সেটাও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মাধ্যমেই প্রথম পড়ল বাংলাদেশের মানুষ; শিশুদের জন্য প্রথম বাংলা ভাষার ওয়েবসাইট কিংবা শিশু সাংবাদিকদের প্রথম ওয়েবসাইট, তাও এসেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমেরই হাত ধরেই।
এতসব নতুনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাণ্ডারি তৌফিক ইমরোজ খালিদী ১৬ বছরের পথচলা পেরিয়ে সামনের দিনে পাঠককে আরও অভিনব বিষয় উপস্থাপনের ইচ্ছার কথা জানালেন।
বাংলাদেশের প্রথম ইন্টারনেট সংবাদ মাধ্যমের ১৬ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি বললেন, “আমরা নতুন অনেক দিয়েছি এবং নতুন আরও দিতে চাই।”
এত সব নতুনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে নানাভাবে বাধার মুখেও যে পড়তে হয়, তাও মনে করিয়ে দেন তিনি।
“তবে সমস্যাটা হচ্ছে যে, আমরা বারবার বাধাগ্রস্ত হই,” বলার সঙ্গে সেই সব বাধা পেরিয়ে যাওয়ার সাহসী উচ্চারণও আসে তার কাছ থেকে।
‘১৬ পেরিয়ে, প্রতিক্ষণ খবরে’ প্রতিপাদ্য নিয়ে রোববার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম তার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেছে। কেক কেটে ঘরোয়া আয়োজনে এই উদযাপনে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান কর্মীদের সঙ্গে ১৬ বছরে বিভিন্ন সময় পথচলার সঙ্গী সাবেকরাও অংশ হন।
২০০৬ সালের ২৩ অক্টোবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পথচলার শুরু। তবে প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল তার এক বছর আগে ২০০৫ সালে। তখন অবশ্য অন্যান্য বার্তা সংস্থার মতো ‘বিডিনিউজ’ সংবাদ মাধ্যমগুলোর জন্য খবর সরবরাহ করত। দেশের অন্য সংবাদ সংস্থাগুলো টেলিপ্রিন্টারে খবর সরবরাহ করলেও বিডিনিউজ কাজটি শুরু করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে।
২০০৬ সালে বার্তা সংস্থাটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা বদলের পর এটি খোল-নলচে বদলে যায়। সাংবাদিক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর নেতৃত্বে নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এ সংবাদমাধ্যমকে দেশের প্রথম ডটকম কোম্পানির রূপ দেয়। ২৩ অক্টোবরপথ চলা শুরু হয় নতুন আঙ্গিকে।
২৩ অক্টোবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীই শুধু নয়, বাংলাদেশে ইন্টারনেট সংবাদপত্রেরও যাত্রা শুরুর দিন, বাংলাদেশে কোনো বার্তা কক্ষের ২৪ ঘণ্টা সচল থাকারও সূচনা লগ্ন।
সেই শুরুর কথা স্মরণ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক খালিদী বলেন, “আমরা জেগে থাকি প্রায় ২৪ ঘণ্টাই, সবসময়ই। আমরা কখনোই ঘুমাই না।
“এখন কেউ কেউ আছে হয়ত… তবে আমরা যখন শুরু করেছিলাম, তখন আমরা দেশের একমাত্র নিউজরুম ছিলাম, যা কখনোই ঘুমাত না।”
জাতীয় তথ্য-প্রযুক্তি দিবসে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান সম্পাদককে বিশেষ সম্মাননা
‘সবার আগে নির্ভুল খবর’ - এই মন্ত্র দিয়ে সংবাদ পরিবেশন শুরুর পর দ্রুতই পাঠকের মনোযোগ কাড়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। এখনও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ফেইসবুক পাতায় প্রায় কোটি ‘লাইক’ পাঠকের সেই আস্থারই পরিচয় দেয়।
এরপর শিশুদের জন্য প্রথম বাংলা ভাষার ওয়েবসাইট ‘কিডজ’ আনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ইউনিসেফের সঙ্গে মিলে শিশু সাংবাদিকদের প্রথম ওয়েবসাইট ‘হ্যালো’ও আসে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাত ধরে।
চালু হয় মোবাইল ফোনে ব্রেকিং নিউজ সেবা, যা দেশে সেটাই প্রথম। মোবাইলে এসএমএসে যে বাংলায় খবর দেওয়া যায়, তাও দেখিয়ে দেয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
দীর্ঘ পথচলায় চড়াই-উৎরাই পেরোনোর কথা স্মরণ করে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “আমরা সবসময় ভালো থাকি না, মাঝেমাঝে খুব ভালো থাকি, কখনও কখনও খুব যন্ত্রণায় থাকি, কষ্টে থাকি। তারপরও আমরা ভেসে থাকার চেষ্টা করি, বেঁচে থাকার চেষ্টা করি, জেগে থাকার চেষ্টা করি।”
সহকর্মী আর পাঠকদের সঙ্গে নিয়ে বন্ধুর পথে এগিয়ে চলার কথা তুলে ধরেন প্রায় চার দশক ধরে সাংবাদিকতায় থাকা তৌফিক খালিদী।
“এখনও টিকে আছি, বেঁচে আছি, ভেসে আছি, সেটাই যথেষ্ট। আমি কৃতজ্ঞ সবার প্রতি। আমার সহকর্মীদের প্রতি, আমাদের লক্ষ লক্ষ পাঠকদের প্রতি, শুভানুধ্যায়ী যারা আছেন, যারা আমাদেরকে সমর্থন করেন, সাহায্য করেন, আমাদেরকে রক্ষা করেন, বিভিন্ন রকম ঝামেলা থেকে, বিপদে-আপদে। সবার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।”
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে সাবেক-বর্তমান সহকর্মীদের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
“আমাদের সহকর্মীরা কেউ ১০ বছর, কেউ পাঁচ বছর, কেউ ১৬ বছর ধরে কাজ করেছেন। তাদের সবার পরিশ্রমে, ঘামে, রক্তে এবং ত্যাগে আমরা আজকে এখানে দাঁড়িয়ে আছি।”
ঘরোয়া আয়োজনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কার্যালয়ে উদযাপন করা হয় ১৬ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান। বর্তমান সহকর্মীদের সঙ্গে সাবেক অনেক সহকর্মীও উপস্থিত হন মিলনমেলায়।
স্মৃতি তর্পণের পাশাপাশি বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিরবচ্ছিন্ন খবর প্রকাশের অভিজ্ঞতার কথা উঠে আসে সাবেক-বর্তমান সহকর্মীদের কথায়।
এই উদযাপনে আকস্মিকভাবেই সঙ্গী হন কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাহাস পাশা।
তিনি বলেন, “আসুন আমরা সবাই একসাথে হই এবং এটাকে আরও শক্তিশালী করি, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও।”
যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত জনমতের সম্পাদক, কারি লাইফ সাময়িকীর প্রধান সম্পাদক নাহাস পাশা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমেও যুক্ত আছেন দীর্ঘদিন ধরে।
ব্রিটেনে দীর্ঘদিন সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি সবসময় তাদেরকে বলি, এটা এমন পোর্টাল যেটা আপনি পড়তে পারবেন বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষাতেই।
“আপনি যদি বাংলাদেশের সম্পর্কে বেশি কিছু জানতে চান, রাজনীতি বা অন্য কিছু- আপনার উচিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম পড়া।”
বার্তাকক্ষের নেতৃত্বের পাশাপাশি নতুন-পুরাতন সহকর্মী থেকে শুরু করে প্রায় সব বিভাগের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
সুন্দর আগামীর স্বপ্নের কথা তুলে ধরে হেড অব নিউজরুম জাহিদুল কবির বলেন, “এই ১৬ বছর টক ছিল, মিষ্টি ছিল, ঝাল ছিল। সামনের দিনগুলো নিশ্চয় আরও অনেক নতুন স্বাদ, নতুন অভিজ্ঞতা আমাদের দেবে, আমরা সেই অপেক্ষায় থাকলাম। সুন্দর একটা আগামীর স্বপ্ন আমরা দেখি। আর সেটা যেন মিষ্টিই হয়।”
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই সময়ে দাঁড়িয়ে আগামী কয়েক দশকের দিকে তাকিয়ে পথচলা ঠিক করার কথা বলেন হেড অব ইংলিশ নিউজ অরুণ দেবনাথ।
তিনি বলেন, “একটা সংবাদপত্রের বিষয় যখন আসে সেটার ভবিষ্যতে কী হবে, তার একটা চিন্তা থাকে, দশকের পর দশক কীভাবে চলবে, সেটা ভাবনা আসে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই সময়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা আমরা করছি।”
বার্তা সম্পাদক মুনীরুল ইসলাম বলেন, “বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আমার যাওয়া-আসার সম্পর্ক। আমি যাই, আবার ফিরি। যাই, আবার ফিরি। এটা হচ্ছে অনেকটা ঘরের মতো।
“ঘরটাকে আমরা অনেক দিন ধরে রক্ষা করে আসছি। এই ঘরটাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য, বাঁধন মজবুত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সবাই এভাবে থাকব, এটাই প্রত্যাশা।”
পাঠক হিসেবে ১৬ বছর ধরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রাজীব নূর স্পেশাল অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর হিসেবে কর্মরত এই নিউজ পোর্টালে।
তিনি বলেন, “আমি অনেকগুলো জায়গায় কাজ করে এসেছি, কিন্তু এমন সহকর্মী, এটা একটুও বাড়িয়ে বলছি না আমি, অন্য সহকর্মীদেরকে আমি ছোটও করছি না, কিন্তু এই রকম ঘরোয়া এবং একদম নিজের ঘর মনে করবার যে অনুভূতি, এটা বিডিনিউজের মতো বোধহয় আর কোথাও নাই।”
কিডজ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নির্বাহী সম্পাদক মাজহার সরকার বলেন, “বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরে সাংবাদিকতা শিখছি, সেই শেখার প্রক্রিয়াটা জারি আছে। এই পথচলা আমাদের সবার জন্য আনন্দের।”
সাবেক কর্মীদের মধ্যে কাজী শাহরিন হক বলেন, “বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে আমার আসা বাসায় ফেরার মতো। সেই ছোটো বয়স থেকে আমি এখানে কাজ করেছি, শিখেছি। এখন হয়ত অন্য জায়গায়। কিন্তু বাসায় কোনো না কোনো সময়ে ফিরতে হয়। অন্তত বছরে একবার হলেও মানুষ বাসায় ফেরে।”
আড্ডা, স্মৃতিচারণ, হুল্লোড়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বার্তাকক্ষ অন্যরকম রূপ নিয়েছিল এদিন; তবে এর মধ্যেও ছেদ পড়েনি সংবাদ সেবায়, পাঠকদের জন্য সংবাদ দিয়ে যাওয়া প্রাত্যহিক কাজটিও করে গেছেন সংবাদকর্মীরা।