ফখরুল ও আব্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে: ডিবির হারুন

বিএনপির এই দুই নেতাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে? পুলিশ বলছে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে তারপর সিদ্ধান্ত।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2022, 06:00 AM
Updated : 9 Dec 2022, 06:00 AM

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার আট ঘণ্টা পর তাদের ডিবি কার্যালয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা জানাল পুলিশ। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস আমাদের কম্পাউন্ডে আছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”

কী অভিযোগে তাদের ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে এবং কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “তাদেরকে আনা হয়েছে, আমাদের কিছু বিষয় তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি, জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করে বলতে পারব তাদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে?”

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদ করছি, জিজ্ঞাসাবাদ তো আমরা করতেই পারি, বিএনপির সমাবেশ নিয়ে দুদিন আগে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে আমাদের প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন এবং সেখানে অনেক ভাঙচুর হয়েছে, জানমালের অনেক ক্ষতি হয়েছে। সব কিছু মিলিয়েই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Also Read: ফখরুল ও আব্বাস ‘আটক’, জরুরি বৈঠকে বসছে বিএনপি

Also Read: ফখরুল ও আব্বাস ‘আটক’, বলছে পরিবার, ডিএমপি কমিশনার ‘অবগত নন’

বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় উত্তরার বাসা থেকে মির্জা ফখরুল এবং ও শাহজাহানপুরের বাসা থেকে মির্জা আব্বাসকে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

ফখরুলের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম এবং আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস দুজনেই সকালে বলেছিলেন, ‘সাদা পোশাকের পুলিশ’ এসে তাদের আটক করে নিয়ে গেছে।

তাৎক্ষণিকভাবে এ ব্যাপারে পুলিশের তরফ থেকে কোনো বক্তব্য না এলেও আট ঘণ্টা পর ডিবি কার্যালয়ে রেখে দুই নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা জানায় পুলিশ।

তাদেরকে কোনো মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না– এই প্রশ্নে পুলিশ কর্মকর্তা হারুন বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদ করছি, পরে জানানো হবে।"

এদিকে ঢাকায় বিএনপির শনিবারের সমাবেশের কয়েক ঘণ্টা বাকি থাকলেও সমাবেশ ঠিক কোথায় হচ্ছে সে ব্যাপারে পুলিশ ও বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা এখনো আসেনি।

পুলিশ কর্মকর্তা হারুন সাংবাদিকদের বলেন, “গত রাতের (বৃহস্পতিবার) আলোচনায় দুটি স্থান নির্দিষ্ট করা হয়েছে- কমলাপুর স্টেডিয়াম ও মিরপুর বাঙলা কলেজের মাঠ। কমলাপুর স্টেডিয়ামে খেলা চলছে। এ ছাড়া স্টেডিয়ামের নিচে সিনথেটিক টার্ফ রয়েছে, অনেক কিছু রয়েছে। মাঠটি নষ্ট হয়ে যাবে। সে কারণে পুলিশের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, সমাবেশটি করতে পারে মিরপুর বাঙলা কলেজের মাঠে।

“কিন্তু তাদের (বিএনপি) পক্ষ থেকে আরেকটি স্থানের কথা বলা হয়েছে, গোলাপবাগ মাঠ; আসলে এই মাঠ নিয়ে আগে কোনো কথা হয়নি।”

এখন বিএনপির এই প্রস্তাব নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলেন হারুন।

বিএনপি ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে গত কিছুদিন ধরে উত্তেজনা চলছে দেশের রাজনীতিতে। সহিংসতার শঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরকার তাদের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে।

নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু পুলিশ তাদের অনুমতি দিয়েছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের। এ নিয়ে অনড় অবস্থানে ছিল দুই পক্ষ।

এর মধ্যে গত বুধবার বিএনপি কর্মীরা নয়া পল্টনে জড়ো হলে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের মধ্যে আহত স্বেচ্ছাসেবক দলের এক ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতার মৃত্যু হয় হাসপাতালে।

এরপর বিএনপি অফিসে অভিযান চালিয়ে হাতবোমা পাওয়ার কথা বলা হয় পুলিশের তরফ থেকে। গ্রেপ্তার করা হয় প্রায় পাঁচশ নেতাকর্মীকে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল তারপরও বলে আসছিলেন, ১০ ডিসেম্বর তাদের সমাবেশ ‘হবে’। তবে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের সঙ্গে ‘সমঝোতা বৈঠকের’ পর অবস্থান বদলের ঘোষণা আসে।

রাতের সেই বৈঠকের পর ভোর হওয়ার আগেই মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে আটক বরে নিয়ে যাওয়ার খবর আসে; কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশ জানায়, ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।