২০১২ সালে হাই কোর্ট ফুটপাত হকারমুক্ত রাখতে আদেশ দিয়েছিল; পুলিশকে প্রতি মাসে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল।
Published : 23 Dec 2023, 08:45 AM
গুলিস্তান- রাজধানীর ব্যস্ততম অথচ চরম বিশৃঙ্খল একটি জায়গার নাম। যানবাহনের এলোমেলো চলা, আর ফুটপাত জুড়ে নানা পণ্যের পসরা- এই নিয়ে গুলিস্তান। বিশেষ করে, হকাদের দখলে এখানকার ফুটপাতগুলো এমনভাবে ঢেকে গেছে যে, পথচারীদের জন্য হাঁটার জায়গা খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর।
পুলিশের সহায়তায় মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চললেও অভিযান শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর আবার পুরনো চেহারায় ফেরে এই এলাকা।
জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে এক যুগ আগে হাই কোর্ট আদেশ দিলেও তা প্রতিপালনের কোনো নামগন্ধই নেই।
এ বিষয়ে প্রতি মাসে ট্রাফিক পুলিশের একটি দলকে ওই রায় বাস্তবায়ন বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষে এ প্রতিবেদন দেওয়া হয় দাবি করা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন।
সরেজমিন দেখা গেছে, জিরো পয়েন্টের পর পীর ইয়ামেনী মার্কেট এলাকা থেকে ফুটপাত ও সড়কে হকাররা নির্বিঘ্নেই ব্যবসা করে যাচ্ছেন। একই অবস্থা গোলাপশাহ মাজার, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হয়ে নর্থসাউথ রোডের শুরু পর্যন্ত। কোথাও কোথাও রাস্তার অর্ধেকই দখল করে নিয়েছেন হকাররা।
এরপর সিদ্দিকবাজার, আলুবাজার, সুরিটোলা, নয়াবাজার, মালিটোলা হয়ে রায়সাহেব বাজার পর্যন্ত সড়কের পাশের দোকানগুলোর মালপত্র, মাল ওঠানো-নামানোর গাড়িও দিনের বেশিরভাগ সময়ই সড়কের বেশিরভাগ জায়গা দখল করে রাখে।
রায়সাহেব বাজার থেকে সদরঘাট যেতে জনসন রোডের দুই পাশে ঢাকা জজ কোর্ট এলাকায় ফুটপাত ও সড়কে বেশ কয়েকটি স্থানে নিয়মিত হকাররা বসছেন। আদালতপাড়া পার হয়ে সদরঘাট বাস স্ট্যান্ড, যেখানে রয়েছে বাহাদুর শাহ পার্ক। এরপর সড়ক চলে গেছে বাংলাবাজার হয়ে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল।
এই দীর্ঘ এলাকায় সড়কের দুই পাশ থেকে হকার উচ্ছেদে হাই কোর্ট আদেশ দেয় ২০১২ সালে।
যানজটের ভোগান্তি দূর করতে এর প্রতিকার চেয়ে ২০১২ সালে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী ‘সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’– এইচআরপিবি হাই কোর্টে একটি রিট করে।
শুনানি শেষে আদালত জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ফুটপাত দখলমুক্ত করতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষকে। পাশাপাশি ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি পার্কিং বন্ধ, রাস্তার পাশের ফুটপাত বা রাস্তায় দোকানের পণ্য রাখা বন্ধ, রাস্তা-ফুটপাতে যেন ফেরিওয়ালা ও ফলের দোকান বসতে না পারে, সেজন্য ব্যবস্থা নিতে বলা হয় আদেশে।
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের সভাপতি, আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জনস্বার্থে এইচআরপিবির করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্ট একটি রায় দিয়েছিল। ওই রায়ে জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত এলাকার ফুটপাত ও রাস্তার ওপর দোকান, ফেরিওয়ালা, ফলের দোকান; ফুটপাত বা রাস্তার ওপর বালু, রড বা যে কোনো মালামাল রাখা এবং ভ্যান ও ঠেলা গাড়ি পার্কিং ইত্যাদি দখলমুক্ত করতে বলা হয়েছে।
“একইসঙ্গে ৩০ দিন পরপর ট্রাফিক পুলিশের একটি দলকে ওই রায় কতটা কার্যকর হচ্ছে, তার প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে হয়েছিল। কিন্তু এখনও ফুটপাত ও রাস্তা দখলমুক্ত হয়নি।”
তিনি বলেন, সংবিধানের বিধানে আদালতের আদেশ কার্যকর করার কথা বলা আছে। কেউ যদি সেই নির্দেশনা কার্যকর না করে, তাহলে সংবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা আছে। সংশ্লিষ্ট অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
আদালতের আদেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে অবমাননার আবেদন করবেন কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এর আগে কয়েকবার অভিযোগ করেছিলেন; কিন্তু কিছুদিন তৎপরতা চলে, আবার বন্ধ হয়ে যায়। আবার আবেদন করবেন।
ট্রফিক পুলিশকে দেওয়া আদেশের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্থানীয় লিগ্যাল সেকশন আছে, তারা নিয়মিত প্রতিবেদন দেয়।”
প্রতিবেদন প্রতি মাসে দেয় কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমাদের জানা মতে নিয়মিতই দেয়।”