১৯৯৬ সালে হাই কোর্ট এক রিট মামলার রায়েই সিদ্ধান্ত দিয়েছিল, রাষ্ট্রপতির পদ ‘লাভজনক নয়’।
Published : 14 Feb 2023, 07:03 PM
আইনের দৃষ্টিতে রাষ্ট্রপতি পদটি রাষ্ট্রের কোনো ‘লাভজনক’ পদ কি না, সেই আলোচনায় নিজের মতামত জানালেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।
মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনের নিজের দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতির পদটি লাভজনক কোনো পদ নয়। এটি সাংবিধানিক পদ। সেক্ষেত্রে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি দুদকের সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিনের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণে আইনগত কোনো বাধা নেই।”
এবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. সাহাবুদ্দিন, যিনি দুদকের একজন সাবেক কমিশনার। ইতোমধ্যে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করে গেজেটও প্রকাশ করা হয়েছে।
দুদক আইনে বলা আছে, কোনো কমিশনার অবসর নেওয়ার পর প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদে নিয়োগের যোগ্য হবেন না।
এখন মো. সাহাবুদ্দিনের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর দুদক আইনের ওই সূত্র ধরে নতুন করে আলোচনা তৈরি হয়েছে রাষ্ট্রপতি পদটি ‘লাভজনক’ কি না।
এ নিয়ে মঙ্গলবার দৈনিক প্রথম আলো একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে, যেখানে আইন বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয়েছে এবং তারা পক্ষে-বিপক্ষে দুই রকম কথাই বলেছেন।
রাষ্ট্রপতি পদ লাভজনক কি না, সে বিষয়ে সংবিধানে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। তবে এর আগেও এ নিয়ে বিতর্ক হয়েছে এবং ১৯৯৬ সালে হাই কোর্ট এক রিট মামলার রায়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছিল, রাষ্ট্রপতির পদ ‘লাভজনক নয়’।
ওই বছর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেছিল। বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে মামলায় বলা হয়েছিল, প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নিয়ে রাষ্ট্রের কোনো লাভজনক পদে বসা যায় না।
শুনানি শেষে আদালত রায় দিয়েছিল, রাষ্ট্রপতির পদ ‘লাভজনক নয়’; সুতরাং সাহাবুদ্দীন আহমদের রাষ্ট্রপতি হতে বাধা নেই।
সেই রায়ের প্রসঙ্গ ধরে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “ওই রায়ে স্পষ্ট বলা রয়েছে, রাষ্ট্রপতির পদটি অফিস অব প্রফিট নয়। এটা কন্সটিটিউশনাল পদ। অতএব বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদনের রাষ্ট্রপতি পদ গ্রহণ ছিল সম্পূর্ণভাবে বৈধ। ওই মামলা সম্পূর্ণ খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
“যেহেতু উচ্চ আদালতের রায় আইন হিসেবে বিবেচিত হয়, সেহেতু বর্তমানে যিনি রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন, যদিও তিনি দুদকের কমিশনার ছিলেন, উনি রাষ্ট্রপতি পদ গ্রহণের ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই।”
আলমগীর বলেন, “দুদকের আইনে বলা আছে যে, কমিশনাররা লাভজনক পদে যেতে পারবেন না। কিন্তু আপনারা জানবেন যে, নির্বাচন কমিশন যখন এটা (রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাছাই) করেছে, তখন আইন কানুন জেনেই এটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
লাভজনক পদ কি, কেন
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আমাদের সামনে উচ্চ আদালতের একটি সুনির্দিষ্ট উদাহরণ রয়েছে যে, মহামান্য রাষ্ট্রপতির পদকে লাভজনক পদ বলা যাবে না। ওই রায়ে বলা আছে, অফিস অব প্রফিট বলতে বোঝাবে প্রজাতন্ত্রের যারা কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদেরকে। এটা স্পষ্ট বলা আছে।”
তিনি দাবি করেন, লাভজনক পদ বলতে কী বোঝায়, আইন তা স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, যদিও তালিকা দেওয়া হয়নি।
“লাভজনক পদের ক্ষেত্রে বলা আছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত এবং কোনো প্রতিষ্ঠানে যদি সরকারের ৫০ ভাগের অধিক অর্থ থাকে, তাহলে সেই পদে নিয়োগকে বলা হবে লাভজনক পদ।
“এখানে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী– উনারা কিন্তু প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী না। এগুলো হল সাংবিধানিক পদ। যেহেতু সাংবিধানিক পদ, অতএব লাভজনক পদের ডেফিনেশনে এরা পড়ে না।”
বৈধ হওয়ার পরেই নির্বাচিত ঘোষণা ‘আইনসিদ্ধ’
মঙ্গলবার ছিল রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। কিন্তু বাছাইয়ের দিন সোমবারই একক প্রার্থীকে নির্বাচিত ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। এ বিষয়টি আইনসিদ্ধ হয়েছে কি না– সেই প্রশ্ন করা হয়েছিল নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরকে।
উত্তরে তিনি বলেন, “এটা অবশ্যই আইনসিদ্ধ। আইনে স্পষ্ট লেখা আছে, যদি একাধিক প্রার্থী না থাকে এবং মনোনয়নপত্র বাছাই করার পরে যদি দেখা যায় যে, উনার মনোনয়নপত্র সঠিক আছে, বৈধ আছে। তাহলে ওই সময় তাকে নির্বাচিত ঘোষণা দিয়ে দেবেন। এটার জন্য আর প্রত্যাহার করার জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই।”