ব্লক ইট: তিন বছরে অগ্রগতি ‘শূন্য’

দেশে প্রায় ১০ হাজার ইটভাটা প্রতিবছর তিন হাজার কোটি ইট সরবরাহ করছে, সে জায়গায় ব্লক ফ্যাক্টরি তৈরি হয়েছে আড়াইশর মত।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2022, 07:50 PM
Updated : 8 Oct 2022, 07:50 PM

কথা ছিল বায়ু দূষণ কমাতে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদের পাশাপাশি ২০২৪-২০২৫ সালের মধ্যে সরকারি নির্মাণ কাজে শতভাগ ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব ব্লক ইট ব্যবহার করবে বাংলাদেশ। কিন্তু পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হতাশা নিয়ে দেখতে পাচ্ছেন, গত তিন বছরে বলার মত কোনো অগ্রগতিই নেই! 

সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, পরিকল্পনা করা যত সহজ, বাস্তবায়ন ততটা নয়। আর সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলছেন, ব্লক ইট নিয়ে ওই পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে চাইলে কর্মপরিকল্পনা সাজাতে হবে নতুন করে।

কিন্তু তিন বছরে অগ্রগতি হল না কেন? বড় বাধা ছিল করোনাভাইরাস মহামারী। তাছাড়া নানা ধাপে সমন্বয়ের অভাব ছিল। যত দরকার তত ব্লক ফ্যাক্টরিই তৈরি হয়নি। অভাব রয়েছে সচেতনতা আর কারগরি জ্ঞানেরও।

দেশে প্রায় ১০ হাজার ইটভাটা প্রতিবছর তিন হাজার কোটি ইট সরবরাহ করছে। সে জায়গায় ব্লক ফ্যাক্টরি আছে আড়াইশর মত। আবার ব্লক ব্যবহার যে আর্থিক দিক দিয়েও লাভজনক, সেটা প্রচারেই আসছে না।

বুয়েটের অধ্যাপক মেহেদী আনসারি বলছেন, ব্লক ইটের ববহার বাড়াতে চাইলে সচেতনতা যেমন বাড়াতে হবে, ইটভাড়া মালিকদের সহযোগিতা ও সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে সব পক্ষের সমন্বয়ও জরুরি। আগে থেকে সব ঠিক করে না এগোলে কোনো কর্মপরিকল্পনাই অশানুরূপ ফল দেবে না।

কর্মপরিকল্পনায় কী ছিল?

কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার করে তৈরি পোড়ামাটির ইটের ব্যবহার থেকে সরে এসে ধাপে ধাপে ২০২৪-২০২৫ সালের মধ্যে শতভাগ ব্লক ইট ব্যবহার নিশ্চিত করার ওই পরিকল্পনা নেওয়া হয় ২০১৯ সালে।

ওই বছর ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন-২০১৯  সংসদে পাস হয়। এরপর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইনের ক্ষমতা বলে মাটির ব্যবহার ধীরে ধীরে কমানোর উদ্দেশ্যে সরকারি নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার কাজে ভবনে দেয়াল, সীমানা প্রাচীর, হেরিং বোন বন্ড রাস্তা এবং গ্রাম সড়ক টাইপ ‘বি’ এর ক্ষেত্রে ইটের বিকল্প হিসেবে ব্লক ব্যবহারের কর্মপরিকল্পনা ও লক্ষ্যমাত্রা বাধ্যতামূলক করা হল।

তবে সড়ক, মহাসড়কের বেইজ ও সাব-বেইজ নির্মাণ, মেরামত, সংস্কারে এ নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে না বলে জানানো হয় ওই প্রজ্ঞাপনে।

অর্থ বছরভিত্তিক ব্লক ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রায় বলা হয়, ২০১৯-২০ সালের মধ্যে সরকারি নির্মাণ কাজের ১০%; ২০২০-২১ সালের মধ্যে ২০%; ২০২১-২২ সালের মধ্যে ৩০%; ২০২২-২৩ সালের মধ্যে ৬০%; ২০২৩-২৪ মধ্যে ৮০% এবং ২০২৪-২৫ সালে ১০০% ব্লক ইট ব্যবহার করতে হবে। 

ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী, এখন সব সরকারি নির্মাণ কাজে অন্তত ৩০ শতাংশ ব্লক ইট ব্যবহার করার কথা। কিন্তু বাস্তবে যে তার প্রায় কিছু হচ্ছে না, সে কথা জানিয়ে হতাশা প্রকাশ করলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ব্লক ইট ম্যানুফ্যাকচার নিয়ে অনেক কথাবর্তা হয়েছে, সরকারের সিদ্ধান্তও ছিল।… কিন্তু ওখানে জিরো, কোনো অগ্রগতি নেই।”

যারা ব্লক ইট ব্যবহার করার কথা, তাদের কাছ থেকেই সাড়া মিলছে না জানিয়ে এই সংসদ সদস্য বলেন, “কারো কোনো রেসপন্স নেই। স্থানীয় সরকার, সিটি করপোরেশন, মন্ত্রণালয়সহ যারা সম্পৃক্ত, কেউ কোনো কিছু করেনি এখানে।”

সাবের হোসেন চৌধুরীর মতে, এভাবে এগোলে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ২০৩০ সাল লেগে যাবে, সুতরাং সরকারের ওই ‘রোডম্যাপ’ নতুন করে সাজানো ছাড়া বিকল্প নেই।

আসলেই ‘জিরো’?

বর্তমানে সরকারি কত শতাংশ ক্ষেত্রে ব্লক ইট ব্যবহার করা হচ্ছে, তা জানার চেষ্টা করেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য কারও কাছেই মেলেনি।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ অনুবিভাগ) মো. মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কী পরিমাণ হচ্ছে তা আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা থেকে জানতে পারব। অনেকগুলো অর্গানাইজেশন জড়িত এখানে…।”

আশানরূপ অগ্রগতি কেন হল না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “টার্গেট তো রয়েছে, করোনাভাইরাসের একটা পরিস্থিতি পার হতে হচ্ছে, অর্থনৈতিক অবস্থা ও বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিতে হবে। অনেক পরিকল্পনা করা যায়, কিন্তু বাস্তবায়ন করার বিষয় রয়েছে।”

যা হয়নি, তা নিয়ে না ভেবে মন্ত্রণালয় এখন সামনের দিকে সচেষ্ট হবে জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব বলেন, “সংসদীয় কমিটির সভাপতি মহোদয় খুবই সিরিয়াস। আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করব। পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে কথা বলে একটা গাইড লাইন দেওয়া হবে।”

সরকারের সবচেয়ে বেশি নির্মাণ কাজ চলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য– এ চারটি প্রকৌশল দপ্তরে।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সংস্থাপন ও সমন্বয়) মো. শহীদুল আলম সরাসরিই বললেন, কত শতাংশ কাজে ব্লক ইটের ব্যবহার হচ্ছে, তার সুনির্দিষ্ট হিসাব তিনি দিতে পারবেন না।

তিনি বলেন, “পুরনো ইটের ব্যবহার বন্ধের জন্য বলা হয়েছে। নতুন প্রকল্পে পুরনো ইটের ব্যবহার ধীরে ধীরে শূন্যের ঘরে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা সবাইকে দেওয়া হয়েছে। সরকারি স্থাপনা নির্মাণে কিছু কিছু ব্লক ইটের ব্যবহার এখন হচ্ছে।”

অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জানালেন, আগে যাই হোক, নয় মাস আগে তাদের নতুন প্রধান প্রকৌশলী দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্লক ইট ব্যবহারের বিষয়ে সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছেন। ব্লক ইট ব্যবহারের বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহও শুরু হয়েছে।

নির্বাহী প্রকৌশলীদের পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, “লক্ষ্য করা যাচ্ছে, অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোয় ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে ইটের ব্যবহার আশানুরূপভাবে হচ্ছে না। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্টদের জরুরিভিত্তিতে তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে।”

তবে বাস্তবে তেমন কোনো অগ্রগতি হওয়ার মত পরিস্থিতিই যে এখনও তৈরি হয়নি, সে কথা জানালেন একজন উদ্যোক্ত, যিনি ব্লক ইটের একটি কারখানা চালান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে গড়ে ৩১৪৫ কোটি ইট ব্যবহার হয় প্রতিবছর। এর ৩০ শতাংশ ব্লক ইট ব্যবহার করতে চাইলে ব্লক লাগবে ১০০০ কোটি।

“এত ব্লক কোথায় পাবে? তার মানে ব্লক ইটের ব্যবহার তো কোনো পার্সেন্টেজেই নেই। সামান্য কিছু ব্যবহার হলেও তা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় খুবই নগণ্য।”

তিনি জানান, ভাসানচরে, স্থানীয় সরকারের কিছু গ্রাম্য রাস্তাঘাটে, শহরে রোড ডিভাইডারে কিছু ব্লক ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ ব্লক ব্যবহারে অভ্যস্ত না, ফলে ছোট উদ্যোক্তারা ভালো করতে পারছেন না।

একই কথা বললেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপ-মন্ত্রী সংসদ সদস্য হাবিবুন নাহার।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ব্লক ইট তৈরি হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বাজার নেই, তাহলে তো আর দ্রুততার সঙ্গে এগোবে না। দামের দিক থেকেও একটু বেশি হয়ত… মানুষেরও বাস্তব জ্ঞান না থাকলে পিছিয়ে থাকতে হবে।”

ব্লক ইট কী, কেন

বাংলাদেশে সব ধরনের পাকা বাড়ি নির্মাণে পোড়া মাটির ইট ব্যবহার হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে ইট বানাতে যে মাটি ব্যবহার হয়, তা সংগ্রহ করা হয় কৃষি জমির উপরিভাগ থেকে, একে বলে টপ সয়েল। এতে কৃষি জমির উর্বরতা নষ্ট হয়, যা খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে।

বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এইচবিআরআই) সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭০০ একর কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে, যা মোট চাষযোগ্য জমির এক শতাংশের বেশি। এই ৭০০ একর জমির ৮০ শতাংশ ব্যবহার হচ্ছে অপরিকল্পিত গ্রামীণ আবাসনের কারণে এবং ১৭ শতাংশ নষ্ট হয় ইট পোড়ানোর ভাটার কারণে।

ইট পোড়াতে কয়লা, কাঠ বা গ্যাস ব্যবহার করা হয়। ইটের ভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া পরিবেশের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর। বাংলাদেশে বছরে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ প্রায় ৪০ মিলিয়ন টন, যার ২২ দশমিক ৫ শতাংশের নিঃসরণ হয় ইট ভাটা থেকে।

ভাটায় জ্বালানি কাঠের ব্যবহার এক দিকে যেমন বনভূমি উজাড় করছে, অন্যদিকে পরিবেশে কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলছে।

এসব বিষয় বিবেচনা করে এইচবিআরআই পোড়া মাটির ইটের বিকল্প উদ্ভাবন ও প্রচলনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর সেখানেই আসছে ব্লক ইটের কথা।

এইচবিআরআই এর সিনিয়র রিসার্চ ইঞ্জিনিয়ার (স্ট্রাকচারাল অ্যান্ড কন্সট্রাকশন) মো. আরিফুজ্জামান জানান, বালি, সিমেন্ট ও নির্দিষ্ট মাত্রায় কিছু রাসায়নিক ব্যবহার করে উচ্চচাপে ব্লক ইট বানানো হয়।

বাংলাদেশে মূলত দুই ধরনের ব্লক ইট তৈরি হচ্ছে। সলিড ও হলোটাইপ। হলো ব্লক দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করলে ইটের তুলনায় ভবনের ওজন কম হয়। আর সব মিলিয়ে প্রকল্পের খরচও কমে আসে।

ব্লক তৈরিতে প্রয়োজন হয় পলিবালু। ফলে ড্রেজিংয়ে তোলা মাটি দিয়ে ব্লক ইট বানানো যায়। যন্ত্রের মাধ্যমে উৎপাদন করে শুকানো হয় বলে দূষণও অনেকাংশে কমে আসে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (পরিকল্পনা শাখা-২) মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বরেন, টপ সয়েল এর ক্ষতি এড়ানোই ব্লক ইট ব্যবহারের সিদ্ধান্তের মূল কারণ।

“প্রকল্প পাসের সময় একটা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দিলে এক ধরনের বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। সেটা করা গেলে অগ্রগতি অর্জন সহজ হবে। তাছাড়া সচেতনতাও বাড়াতে হবে।”

বাধা কোথায়?

এক্সিস এনার্জি লিমিটেড পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও পরিবেশবান্ধব নির্মাণ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে। এ কোম্পানির এমডি ইঞ্জিনিয়ার মো. মনিরুল ইসলাম বললেন, বাজার তৈরি না হওয়ার বিষয়টি ব্লক ইটের জন্য এখনও বড় বাধা।  

তিনি জানালেন, দেশে প্রায় ১০ হাজার ইটভাটা রয়েছে এবং বছরে ৩৫-৪০ হাজার কোটি টাকার বাজার আছে পোড়া মাটির ইটের। অন্যদিকে ব্লক তৈরি করছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আড়াইশর মত।  

“পুরো মার্কেট তো ইটভাটার মালিকদের দখলে। ফলে ব্লক ইটের মার্কেটিং কম হচ্ছে। তারা যদি ব্লক বানানোর ব্যবসায় আসে এবং কনট্রিবিউট করে, তাহলে এ ইটেরও মার্কেট তৈরি হত।”

এই প্রকৌশলী জানালেন, ইট ভাটার চেয়ে ব্লক ইটের কারখানা খুলতে কম টাকা লাগে। ৪০-৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলেই ব্লক ফ্যাক্টরি শুরু করা যায়। কিন্তু বাজার তৈরি না হওয়ায় উদ্যোক্তারা হতাশ হয়ে পড়ছেন। ব্যবসা করতে পারছে কেবল কয়েকটি বড় কোম্পানি।

সরকারের সব মন্ত্রণালয় ব্লক ব্যবহারের বিষয়ে সমন্বয় করলে এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা পেলেই ব্লক নিয়ে ‘অনেক দূর’ এগোনো সম্ভব বলে মত দিলেন মনিরুল।

সাধারণ মানুষ ব্লক ইট নিয়ে খুব বেশি জানে না, এটাকেও বড় বাধা হিসেবে দেখছেন টাঙ্গাইল ইকো ব্লক লিমিটেডের অন্যতম মালিক শামীম সাকিব।

তিনি বললেন, প্রতিটি ইটের দাম গড়ে ১১ টাকা, অন্যদিকে ব্লকের দাম পড়ে ৪০ টাকার মত। সে কারণে অনেকে মনে করেন, ব্লকে গেলে খরচ অনেক বেশি লাগবে।

কিন্তু একটি কংক্রিট ব্লক পাঁচটা ইটের সমান। ফলে ১২০০-১৩০০ বর্গফুটের একটি ভবনে ব্যয় অন্তত ২০-২৫% সাশ্রয় হবে এবং ভবনের ভেতরে ব্যবহারযোগ্য জায়গাও বাড়বে বলে জানালেন শামীম।

তবে ব্লক ইটেও বেশ কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা দরকার বলে মনে করেন বুয়েটের অধ্যাপক মেহেদী আনসারি।

তিনি বলেন, “এটা অতটা ভূমিকম্প সহনীয় নয়। ইটের ক্যাপাসিটি ভালো, ব্লকের ক্যাপাসিটি কেমন- এটা রিসার্চ করার ব্যাপার। আমরা যেহেতু ভূমিকম্পপ্রবণ ও বন্যাপ্রবণ এলাকায়, ব্লক যেগুলো বানাচ্ছে, এর ক্যাপাসিটি কতটুকু, সার্বিক বিষয়ে রিসার্চ করে তবেই এগোনো উচিত। টেকনিক্যাল সাপোর্ট না নিয়ে রোডম্যাপ করলে তো…।”

তার মতে, ব্লকে সাশ্রয় হবে; কিন্তু নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো আপস করা যাবে না। ইমারত বিধিতে বন্যা, ভূমিকম্প সহনীয় করার কথা বলা হয়, ব্লকের ভবন কতটা সহনীয় হবে, তা না দেখে, রোডম্যাপ তৈরি করলে তাতে সমস্যা বাড়বে।

এখন কী হবে?

গত ২৭ সেপ্টেম্বর সংসদের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ব্লক ইটের রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা হয়।

 কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, “নভেম্বরের শেষে আমাদের যে বৈঠক হবে তাতে পরিবেশ অধিদপ্তর নতুন করে একটি রোডম্যাপ দেবে। সরকারি যে সংস্থাগুলো রয়েছে, যারা ব্লক ইটের পটেনশিয়াল ইউজার, তাদের সঙ্গে কথা বলে মতামত নেব। রোডম্যাপের জন্য আবার রোডম্যাপ করতে চাই না আমরা।”

তাছাড়া মাঠ পর্যায় থেকে কেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে, ব্লক ইটের স্থাপনা কতটুকু টেকসই হচ্ছে– এসব কারিগরি বিষয়ও তিনি দেখার কথা বলেন।

“নতুন করে একটা রোডম্যাপ সেট করে সবাইকে নিয়ে আবার প্ল্যানিং কমিশনে পাঠাব। কমিশন যখন বিভিন্ন প্রকল্প অনুমোদন দেবে, তখন বলবে ৪০% ব্লক ইট ব্যবহার করতে হবে। ওই প্রক্রিয়াটাকে গুছানোর চেষ্টা করছি আমরা।”