বাসার সবাই গিয়েছিলেন দাওয়াত খেতে, বৃদ্ধ বাসায় একাই ছিলেন।
Published : 18 Nov 2022, 01:47 PM
পুরান ঢাকার চকবাজারের এক বাসায় বৃদ্ধ গৃহকর্তাকে ‘হাত-পা বেঁধে হত্যা করে’ স্বর্ণালঙ্কার লুটের অভিযোগ করেছে তার পরিবার।
বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে চকবাজারের খাজা দেওয়ান রোডে ওই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। পরে পরিবারের সদস্যরা মনসুর আহমেদ নামের ৭৮ বছর বয়সী এক বৃদ্ধকে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা মনসুর আহমেদ স্থানীয় বাইতুন নুর জামে মসজিদের সভাপতি ছিলেন।
তিনি খাজা দেওয়ান রোডের ৬৯/২ নম্বর হোল্ডিংয়ে ৬ তলা ওই বাড়ির মালিক।
বাড়ির দ্বিতীয় তলায় স্ত্রীকে নিয়ে তিনি থাকতেন মনসুর। পরিবারের বাকি সদস্য এবং কয়েক ঘর ভাড়াটিয়ারা থাকেন অন্যান্য তলায়।
তার ছেলে সারোয়ার আহমেদ জানান, রাতে পরিবারের সবাই মিলে তারা একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার বাবা অসুস্থ থাকায় বাসাতেই ছিলেন।
সারোয়ার বলছেন, রাত ১২টার দিকে বাড়িতে ফিরে তারা নিচের মূল ফটক স্বাভাবিক অবস্থাতেই পেয়েছেন। দ্বিতীয় তলার কলাপসিপল গেইটও টেনে দেওয়া ছিল। বাসার ডোর লক ছিল বন্ধ। তারা চাবি দিয়ে খুলে বাসায় ঢোকেন।
“ঢুকে দেখি বাবা তার ঘরের মেঝেতে পড়ে আছেন; হাত-পা বাঁধা, রক্তাক্ত। রুমের জিনিসপত্র সব এলোমেলো। আলমারি, শোকেস, লকার সব তছনছ করা।“
সরোয়ার বলেন, “বাবার হাত-পা বেঁধে টর্চার করে তারা বাসায় জিনিসপত্র লুট করেছে। মাথায় আঘাত করে তাকে হত্যা করেছে।“
সরোয়ারের ভাষ্য, তাদের পরিবারের সব স্বর্ণালঙ্কার তার বাবার ঘরেই রাখা ছিল, যেগুলোর সবই লুট করা হয়েছে। এছাড়া বেশকিছু নগদ টাকা ছিল, সেগুলোও খোয়া গেছে। তবে গয়না বা টাকার মোট পরিমাণ তার জানা নেই।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, “মনসুরকে যখন হাসপাতালে আনেন স্বজনরা, তখন হাত পা বাঁধা ছিল না। তবে মাথায় ছোট্ট একটি জখমের চিহ্ন ছিল আর মনসুর ছিলেন অচেতন।“
চকবাজার থানার ওসি আব্দুল কাইউম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনাটি আমরা তদন্ত করছি।
চিকিৎসকের প্রতিবেদন আর আশপাশের সিসি ক্যামেরার ভিডিও সংগ্রহ করা হচ্ছে।“
খাজে দেওয়ান রোডের ওই ভবনের নিচতলার ভাড়াটিয়া সুলতান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর বলেন, ভবনের প্রধান ফটক বাইরে থেকে হাত গলিয়ে খোলা যায়। তবে রাতে ভেতর থেকে ফটকে তালা লাগানো থাকে।
“কাল রাতে আমি কেরানীগঞ্জে গেছিলাম একটা বিয়ের দাওয়াতে। বাসায় আমার বৃদ্ধ মা ছিলেন, কিন্তু তিনি কিছু টের পাননি।”
সরেজমিনে দেখা যায় খাজা দেওয়ান রোডের ৬৯/২ নম্বর ভবনটির সিঁড়িগুলো সরু। এক সঙ্গে দুজন মানুষের পাশাপাশি ওই সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠা কঠিন।
ভবনের ভেতরে দেয়ালে সাইনবোর্ডে লেখা ' এই ফ্ল্যাটটি সম্পূর্ণ সিসিক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত'। তবে কোনো সিসি ক্যামেরা ভেতরে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে সুলতান বলেন, “দুই মাস আগে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে, কিন্তু ক্যামেরা লাগানো হয়নি। হয়ত মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য এটা লাগানো হয়েছে।“
চকবাজারের ভবনটির সামনের রাস্তাও সরু। ওই রাস্তার মুখে চা, মুদি দোকান এবং খাবারের হোটেল রয়েছে। তবে দোকান কর্মচারীরা বলছেন, ওই বাসায় কী হয়েছে, সে বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই। রাতে ‘অস্বাভাবিক কিছু’ তাদের নজরে আসেনি।