রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন না করে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন করতে সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন ইসির মুখপাত্র।
Published : 15 Nov 2023, 09:04 PM
বিএনপিসহ যারা নির্বাচনে না আসার ঘোষণা দিয়েছে, তাদের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ২৬তম সভায় কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র, ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
বুধবার বিকালে কমিশনের ওই সভায় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল চূড়ান্ত করা হয়। পরে সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের বিস্তারিত সময়সূচি ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
সিইসির ভাষণ শেষে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম নিজের কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সেখানে তফসিল নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
বিএনপিসহ যারা নির্বাচনে না আসার ঘোষণা দিয়েছে, তাদের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না - এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, “এই বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার বহির্ভূত বিধায় আজকের সভায় কোনো আলোচনাই হয়নি।”
একটি প্রধান রাজনৈতিক দল তাদের অফিসে তালা… একজন সাংবাদিক এরকম একটি প্রশ্ন উত্থাপন করতে শুরু করলে ইসি সচিব বলেন, “আপনারা নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন।”
এখন প্রশাসন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এ পরিস্থিতিতে ইসি কী করে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করবে, তা জানতে চান একজন সাংবাদিক।
উত্তরে মো. জাহাংগীর আলম বলেন, “আমরা তফসিল ঘোষণা করেছি। তফসিল অনুযায়ী রাজনৈতিক দল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের পদপ্রার্থিতা ঘোষণা করবে, মনোনয়ন দাখিল করবে, বাছাইয়ে উন্নীত হবে। যখন তারা প্রচারে যাবেন, তখন থেকে পদপ্রার্থীদের সকল ধরনের সমতল অবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালন করতে পিছপা হবে না।”
সিইসি যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেন, তখন সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সারা দেশে অবরোধের কর্মসূচি পালন করছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার অবস্থানে অনড়।
সামনে কী হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে জনমনে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। দশ বছর আগের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্মৃতি ফিরে ফিরে আসছে।
২০১৪ সালে সেই নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে নির্বাচনে জিতে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।
তফসিলের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তা প্রত্যাখ্যান করার কথা জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এই তফসিলে নির্বাচন হবে না।
পুনঃতফসিলের কোনো সম্ভাবনা আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, “ভবিষ্যতে কী হবে, সেই প্রশ্ন যদি আজকে আমাকে করেন।... নির্বাচনের অনেকগুলো ধাপ আছে। সমস্ত কার্যক্রম ধাপে ধাপে গ্রহণ করা হয়।
“আপনারা বলছেন, নির্বাচন সময়কালীনের বিষয়টা। এখন নির্বাচনের পূর্বকালীন সময়। তফসিলের সময় থেকে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত যখন যেটা প্রয়োজন হবে, কমিশন তখন সেই কার্যক্রম গ্রহণ করবে।”
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত, তা বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। তার তিন সপ্তাহ পর ৭ জানুয়ারি হবে ভোটগ্রহণ।
ইসি সচিব বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল জেলা প্রশাসককে রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “রিটার্নিং অফিসারের বিষয়ে ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘোষণা করেছেন যে ৬৬ জন রিটার্নিং অফিসার থাকবেন। ঢাকা এবং চট্টগ্রাম মহানগরের জন্য বিভাগীয় কমিশনার এবং এছাড়া ৬৪ জেলার জন্য ৬৪ জন জেলা প্রশাসক রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন।
“আর সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন বাংলাদেশের বর্তমানে ৪৯৫টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এছাড়াও মহানগর এলাকা, ক্যান্টম্যান্ট এলাকা এবং যে সমস্ত এলাকায় উপজেলাগুলো একাধিক আসনে বিভক্ত, সে সকল আসনে ভিন্ন ভিন্ন কর্মকর্তারা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন।”
ইসি সচিব বলেন, ৪৯৫ জন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ৫৬ জন থানা নির্বাচন অফিসার, স্থানীয় সরকারের (ডিডিএলজি) ১৪ জন উপ-পরিচালক, ৮ জন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, সিটি করপারেশনের ১১ জন জোনাল এক্সিকিউটিভ অফিসার, ক্যান্টনমেন্টের ৫ জন এক্সিকিউটিভ অফিসার, ২ জন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং এক জন সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন) সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জেলা নির্বাচন অফিসাররা নির্বাচনের সহায়ক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
“আপনারা জানেন, নির্বাচন কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত ১ থেকে ১৮টি নির্দেশনামূলক পরিপত্র জারি করতে হয়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেগুলো কখন কীভাবে জারি করতে হবে, কীভাবে আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেরা দায়িত্ব পালন করবেন, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটেরা দায়িত্ব পালন করবেন- এসব বিষয়ে কমিশন আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে। তার আলোকে আমরা দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করব,” বলে জাহাংগীর আলম।