সেতুমন্ত্রী বলেন, “নবীনগর-চন্দ্রা ফোরলেইন সড়ক এক বছর না যেতেই ছেড়া কাঁথার মতো জোড়াতালি অবস্থা। এই ফোরলেইন দিয়ে কী হবে?"
Published : 08 Feb 2023, 08:40 PM
দেশের সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় সরকার যেখানে ‘বিপ্লব’ ঘটাচ্ছে, সেখানে নতুন চার লেইনের রাস্তায় কাজের মান এত খারাপ কেন হচ্ছে, সেই প্রশ্ন রেখেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বুধবার ঢাকার হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “ফোরলেইন দুই বছর পরে সংস্কার করতে হচ্ছে, এই ফোরলেইন করে লাভ কী?
"ঢাকা-চট্টগ্রাম দুই বছর পরে সংস্কার করতে হচ্ছে। এই জন্য আবার আলাদা প্রকল্প নিতে হচ্ছে। নবীনগর-চন্দ্রা ফোরলেইন সড়ক এক বছর না যেতেই ছেড়া কাঁথার মতো জোড়াতালি অবস্থা। এই ফোরলেইন দিয়ে কী হবে?"
সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কোঅপারেশন (সাসেক) ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ওয়ার্ক প্যাকেজ- ৩ এর চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন মন্ত্রী।
সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, কাজের মানের ওপর প্রথমে নজর দিতে হবে। রাস্তুাগুলো রক্ষা করতে হবে।
"আমরা রাস্তাগুলোকে রক্ষা করতে পারছি না। কিছুদিন পরে রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। রাস্তা রক্ষা করতে যা দরকার তা করতে হবে। ২৮টি এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন স্থাপন করতে হবে।"
সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প ডিএস-৫ এর আওতায় সরাইল ইন্টারসেকশন হতে বুধন্তী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত কাজের চুক্তি হয় এ অনুষ্ঠানে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীনে ‘সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন’ শীর্ষক এ প্রকল্পের উব্লিউপি-০৩ প্যাকেজের লট নমব্র ডিএস- ০৬ এর নির্মাণকাজ যৌথ উদ্যোগে চীন ও বাংলাদেশের তিনটি কোম্পানি বাস্তবায়ন করবে। এর মধ্যে চীনের চেসিইটিস ও এসএলজিসি এবং বাংলাদেশের পিডিএল কোম্পানি রয়েছে। ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৮৫ কোটি ৩৪ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ টাকা।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “ঢাকা-সিলেট ছয় লেইনে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। এডিবি ঋণ দিচ্ছে ১৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এডিবি ও সরকার মিলে কাজটা করছি। কাজটা ভালো ঠিকাদার পেয়েছে। কাজটা সময় মত শেষ করবে বলে আমরা আশা করি।”
রাস্তা ‘রক্ষার’ ওপর গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “সওজ- এর প্রধান প্রকৌশলী যে আসে তাকে প্রথমে বলি আপনার প্রধান কাজ সড়ক রক্ষা করতে হবে। এক্সেল লোড কন্ট্রোল মেশিন স্থাপন করতে হবে। নবীনগর-চন্দ্রার কী অবস্থা? একেবারে বেহাল অবস্থা। আমি যা দেখছি তাই বলছি। এসব নিয়ে দরকার হয় সেমিনার করেন।
“আমরা যদি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চাই, তবে তবে স্মার্ট রাস্তা দরকার। নতুন রাস্তা দরকার নাই, বিদ্যমান সড়ক স্মার্ট করতে হবে। চলমান প্রকল্পগুলো শেষ করব কোয়ালিটি বজায় রেখে। এই মুহূর্তে সড়কের নতুন প্রকল্প দরকার নেই।”
ঢাকা-সিলেট সড়কের গুরুত্ব তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “অনেক প্রাণান্ত প্রয়াসে এটা সবুজ ফসল ঢাকা-সিলেট ছয় লেইন। এই জন্য এডিবিকে বার বার ঋণ দিতে অনুরোধ করেছিলাম। সিলেট আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কানেকটিভিটি। কিন্তু আমরা শুরু করতে পারিনি। মাঝে এমন একটি বাধা এসেছিল।
“এই সড়ক প্রথমে চার লেইন করা উচিত ছিল। জানি না কেন এটা দুই লেইন হল। এটা আমাদের প্রথমে ভুল ছিল। সাইফুর রহমান সাহেব (সাবেক অর্থমন্ত্রী) কী হিসেবে এটা করেছিলেন জানি না। সিলেটের মানুষ আজকে সব থেকে বেশি খুশি হবে কারণ ছয় লেইন কাজ হচ্ছে। এডিবি অর্থায়ন করেছে, এই জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।”
অন্যদের মধ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য রওশন আরা মান্নান, দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, বাংলাদেশে নিযুক্ত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন জিনটিং, প্রকল্প পরিচালক একে মোহাম্মদ ফজুলল করিম, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. ইসহাক অনুষ্ঠনে উপস্থিত ছিলেন।