“যারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিখতে দেবে না, তারা তো দেখি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বেশি ব্যবহার করে। ফেইসবুকে মিথ্যাচার তারাই তো বেশিই করে।”
Published : 13 Mar 2023, 08:46 PM
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনায় যারা বিরোধিতা করেন, তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
তিনি বলেছেন, “বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পড়ানোর বিরোধীতাকারী ও জঙ্গিবাদের প্রশ্রয়দাতারা মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ভিক্ষুক বানাতে চায়, দেশকে ভিক্ষুক বানাতে চায়। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা কি বিজ্ঞান প্রযুক্তি পড়বে না?
“শুধু কি নামাজ পড়াবে আর নিজে একটি করে মাদ্রাসা তৈরি করবে? কিন্তু আমরা দেশকে ভিক্ষুকের দেশ থাকতে দিতে পারি না।”
সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে স্বাধীনতা মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদ আয়োজিত শিক্ষক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
দীপু মনি বলেন, “যারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিখতে দেবে না, তারা তো দেখি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বেশি ব্যবহার করে। ফেইসবুকে মিথ্যাচার তারাই তো বেশিই করে। তাহলে প্রযুক্তি নেব (গ্রহণ করব) ইসলামবিরোধী কাজ করার জন্য? মিথ্যাচার করার জন্য? তারা কি ইসলামের সেবক?
“মানুষ এক সময় হেঁটে, উটের পিঠে চড়ে হজ করতে যেত, এখন তো আমরা বিমানে যাই। তাহলে কি বিমানে যাওয়া বন্ধ করে দেব? আমরা মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করে দেব? পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলে উঠব না? আমার মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ডাক্তার হবে না? ইঞ্জিনিয়ার, বৈমানিক হবে না?”
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যে জ্ঞান তা হঠাৎ করে এসে পড়েছে নাকি শিখতে হয়েছে? আল্লাহ প্রত্যেককে একটি সুপার কম্পিউটার (মস্তিষ্ক) দিয়েছে, সেটি কাজে লাগাব না? এইটি যে ব্যবহার করব না- এই কথা যারা বলে, তাদের চেয়ে বড় ইসলামের শত্রু আর হতে পারে না। আল্লাহ প্রথম কথা বলেছেন-পড়ো। আর এরা পড়তেই মানা করে, শিখতেই মানা করে।
“আমাদের নবীজি কোন হাত পছন্দ করেতেন? দাতার হাত পছন্দ করতেন। আর উনারা যা শেখাবার চেষ্টা করছেন- বিজ্ঞান প্রযুক্তি বন্ধ করে দিয়ে আমাদেরকে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে। আমরা বাঙ্গালিকে কখনও ভিক্ষুকের জাতি থাকতে দিতে পারি না।”
নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের সহযোগিতা চেয়ে দীপু মনি বলেন, “যারা আমাদের দেশকে ভিক্ষুক করে রাখতে চায়, যারা দেশের অগ্রগতিকে রুখতে চায়, যারা জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দিতে চায়- সেরকম লোককে আমরা কখনই ভাবতে পারি না যে, তারা ইসলামের সেবক।
“কাজেই আপনারা সোচ্চার হবেন। হয়েছেনও সে জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। আমাদের নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে, বাস্তবায়ন করা অনেক শক্ত। আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাই।”
পাঠ্যপুস্তক নিয়ে সাম্প্রতিক `অপপ্রচার’ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “পাশের দেশের ছবি দিয়ে, ফটোশপ করে বলা হলো, এইটা আমাদের বাচ্চাদের পড়ানো হচ্ছে। যে বই দেশেই পড়ানো হয় না। একেবারে কদর্য ভাষায় মিথ্যাচার।
“আপনারা বলেন, মিথ্যাচার কি ইসলাম সমর্থন করে? আপনারা ইসলামের শিক্ষক, আপনরাই বলেন। সমর্থন করে না। শিক্ষকদের, মন্ত্রীকে কদর্য ভাষায় আক্রমণ, হুমকি দেওয়া এর কোনোটাই কি ইসলাম সমর্থন করে?”
পাঠ্যপুস্তকে ভুল থাকলে সংশোধন করা হবে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, “যেখানে ভুল পেয়েছি, সেখানে সংশোধন করেছি, আরও ভুল থাকলে সংশোধন করব। কমিটিও গঠন করা হয়েছে, কমিটি দেখবে।
“২৬টি বই কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে তৈরি করা সহজ কাজ নয়।”
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হাবিবুর রহমান, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কায়সার আহমেদ, স্বাধীনতা মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক তেলাওয়াত হোসেন খান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।