দুর্যোগ ঠেকাতে বাংলাদেশের কর্মপন্থা জানতে চায় অনেক দেশ: এনাম

ঘূর্ণিঝড়সহ অন্যান্য দুর্যোগ ঠেকাতে দেশের আবহাওয়া অধিপ্তরকে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2023, 11:19 AM
Updated : 23 March 2023, 11:19 AM

প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থায় তা ‘মোকাবিলা’ সম্ভব, যা বাংলাদেশ করে দেখিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। 

তিনি বলেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকাতে বিশ্বের অনেক দেশ এখন বাংলাদেশের কর্মপন্থা জানতে চায়। 

ঘূর্ণিঝড়সহ অন্যান্য দুর্যোগ ঠেকাতে দেশের আবহাওয়া অধিপ্তরকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসদাতা অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।

‘বিশ্ব আবহাওয়া দিবস’ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরের সেমিনার হলে এক অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রতিমন্ত্রী কথা বলছিলেন।

তিনি বলেন, “১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের ১০ লাখ লোক মারা গেছিল, কিন্তু এখন একজনও মারা যায় না। বিশ্বের অনেক দেশ আমাদের কাছে জানতে আসে, কীভাবে আমরা এটা সম্ভব করেছি। আমরা এখন দুর্যোগ মোকাবিলায় সারাবিশ্বের কাছে রোল মডেল।”

বন্যা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সফল এবং এই দুর্যোগে মৃত্যু হার ‘শূন্য’ জানিয়ে এনাম বলেন, “আমেরিকাতে এখনো শত শত লোক মারা যায়, পাকিস্তানেও। কিন্তু আমাদের দেশে আমরা বন্যাটাকে সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করি। আমরা আগাম সতর্কবার্তা পাওয়ার পরেই লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেই। বন্যায় এখন আমাদের মৃত্যুহার শূন্য। বন্যার সময় যে কয়জন মারা যায়, সেটা অজ্ঞতার কারণে।”

মানুষের সচেতনতার অভাব আছে অভিযোগ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বন্যায় নদীতে স্রোত অনেক বেশি থাকে। তবুও মানুষ ঝুঁকি নিয়ে নৌবিহারে যায় এবং এটাই বন্যায় মৃত্যুর মূল কারণ বলে তিনি মনে করেন।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন এনামুর রহমান।

তিনি বলেন, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা অনেকগুলো সুপার সাইক্লোন মোকাবিলা করেছি। ফনী, বুলবুল, আম্পান, সিত্রাং… এই দুর্যোগগুলোতে আমরা ১৮ লাখ থেকে ২৪ লাখ মানুষকে সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে এসেছি। সেজন্য সাইক্লোনের কারণে এখন মৃত্যু শূন্য।” 

গত বছরের শেষ নাগাদ আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’-এ কাজের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে তিনি বলেন, “আমরা যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস গ্রহণ করি। কিন্তু সিত্রাং এর সময় তাতে একটু সমস্যা হয়েছিল।

“তবে বিএমডির পূর্বাভাসের পাশাপাশি আমরা উইন্ডি, আইএমডি, জিএফএস ইত্যাদির পূর্বাভাসও ডাউনলোড করি। সবগুলা একসাথে নিয়ে বসে যাচাই-বাছাই করে একটা সিদ্ধান্ত নিই যে আমরা কোনদিকে যাব। ফলে আমাদের ম্যানেজমেন্টটা সঠিক হয়।”

“সিত্রাং এর সময় ভাগ্য ভালো যে আমরা জিএফএসকে (গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম) অনুসরণ করছিলাম। সেটার পূর্বাভাস অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। আমি বিএমডিকে বলব এই সংস্থাগুলোর সাথে কোওর্ডিনেট করেন।“ 

প্রতিমন্ত্রীর এনামের কথা হল, দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর যত বেশি আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করে সমন্বয় করে কাজ করবে, তত বেশি সঠিক তথ্য হাতে আসবে। এতে দুর্যোগ মোকাবেলা সহজ হবে। 
অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসানের বক্তব্যে বজ্রপাত মোকাবিলায় 'অসহায়ত্বের’ কথা উঠে আসে। 

“বজ্রপাতও এখন দুর্যোগের অংশ। কিন্তু বজ্রপাতের ক্ষেত্রে এখনো আমাদের কাছে পূর্বাভাস দেওয়ার কিছু নাই। অথচ গড়ে ২৮৮-৩২৫ জন প্রতিবছর এই বজ্রপাতে মারা গেছে। এটা কমাতে হবে।”

‘আবহাওয়া আইন ২০১৮’ কার্যকর হওয়ার ব্যাপারেও জোর দেন সরকারের এই কর্মকর্তা।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম বলেন, “আমরা দুর্যোগ মোকাবিলার ওপর বিভিন্ন ট্রেইনিং করছি। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হচ্ছে কি না তা দেখতে হবে।”

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক ও অনুষ্ঠানের সভাপতি আজিজুর রহমান জানান, তার অধিদপ্তরের ‘জনবল সংকট’ থেকে উত্তরণ হওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশসহ বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার ১৯৩টি সদস্য দেশ ও অঞ্চলসমূহ প্রতিবছর ২৩ মার্চ ‘বিশ্ব আবহাওয়া দিবস’ পালন করে। দিবসটিতে এবারের প্রতিপাদ্য ‘দ্য ফিউচার অব ওয়েদার, ক্লাইমেট অ্যান্ড ওয়াটার অ্যাক্রস জেনারেশনস’। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় করণীয় এবং জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এই দিবসের লক্ষ্য।