যোগাযোগ হয়নি জলদস্যুদের সঙ্গে, শঙ্কা নিয়ে অপেক্ষা

“বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জলদস্যু এবং জাহাজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি”, বলেন কবির গ্রুপের এক কর্মকর্তা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2024, 06:47 PM
Updated : 13 March 2024, 06:47 PM

ভারত মহাসাগরে যে জলদস্যুরা বাংলাদেশি জাহাজের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে, তারা ২৪ ঘণ্টায়ও এর মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। মালিকপক্ষও নানাভাবে চেষ্টা করে জলদস্যুদের নাগাল পাচ্ছে না।

ফলে এখন পর্যন্ত করণীয় ঠিক করতে পারেনি জাহাজের মালিকানায় থাকা এসআর শিপিং ও তাদের মূল কোম্পানি কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। কর্মকর্তারা বলছেন, তারা জলদস্যুদের কাছ থেকে যোগাযোগের অপেক্ষায় আছেন।

২০১০ সালে একই কোম্পানির আরো একটি জাহাজ এভাবে নিয়ে গিয়েছিল সোমালীয় জলদস্যুরা। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে এই জাহাজটি উদ্ধারে আত্মবিশ্বাসীও কর্মকর্তারা।

নানা সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, জলদস্যুরা বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ‘ও তার ২৩ নাবিককে সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

মঙ্গলবার দুপুরে মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরব আমিরাত যাবার পথে ভারত মহাসাগরের সোমালি উপকূল থেকে ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে জলদস্যুরা এমভি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়, জিম্মি করে এর ২৩ নাবিককে।

জিম্মিদশা অবস্থাতেই জাহাজের চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান ও নাবিকরা তাদের পরিবারের সদস্য এবং মালিকপক্ষকে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বার্তা এবং ভয়েস মেইল পাঠান।

তবে বুধবার সকাল থেকে জাহাজের কারো সঙ্গে যোগাযোগ নেই বলে মালিক এবং স্বজনদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। কারণ, জলদস্যুরা নাবিকদের মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে।

‘আবদুল্লাহ’ যাচ্ছে উপকূলের দিকে

বুধবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬ টা ৪০ মিনিটে জাহাজটি সোমালিয়ান উপকূল থেকে ১৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল বলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন জানান।

সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বলা যায় গত ২৪ ঘন্টায় জাহাজের কারও সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। জিম্মিকারীদের পক্ষ থেকেও যোগাযোগ হয়নি।

“এমভি আবদুল্লাহ এখনো স্টপ হয়নি।এটিকে উপকূলের দিকে নেয়া হচ্ছে বলে ধারণা করছি।”

জিম্মি মুক্তির ক্ষেত্রে প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল জলদস্যুদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা এবং মুক্তির বিভিন্ন শর্ত নির্ধারণ করে মুক্তিপণের বিষয়টির সুরাহা করা।

২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর একই কোম্পানির এমভি জাহান মণির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় জলদস্যুরা। তারা সেটিকে ছয়দিন পর সোমালিয়ার উপকূলীয় এলাকা গারাকোডের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। ওই জাহাজের অভিজ্ঞতা থেকে জলদস্যুদের পক্ষ থেকে যোগাযোগের প্রত্যাশা করছে মালিকপক্ষ।

এসআর শিপিং কোম্পানিটি ককির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এই গ্রুপের মিডিয়া ফোকাল পারসন মিজানুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জলদস্যু এবং জাহাজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। কিন্তু এখনো কোনো যোগাযোগ স্থাপন হয়নি।”

তিনি বলেন, “তাদের একটা কৌশল হল জাহাজ ক্যাপচার করার পর তারা সেইফ জোন তৈরি করে। তারপর সেখান থেকে নিজেদের দাবি জানায়। এখনও পর্যন্ত যোগাযোগ না হওয়ায় জলদস্যুদের কোনো দাবির বিষয়ও আমরা জানি না।”

স্বজনরা উৎকণ্ঠায়

মঙ্গলবার দুপুরেই এমভি আবদুল্লাহয় জলদস্যুদের হানার কথা জানা যায়। বুধবার সকালে নাবিকদের স্বজনরা চট্টগ্রামের বারিক বিল্ডিং মোড় এলাকায় কবির গ্রুপের অধীন এসআর শিপিংয়ের কার্যালয়ে ভিড় করেন।

জাহাজের চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খানের মা শাহনুর বেগম জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর ছেলের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। তিনি বলেন, “গতকাল কয়েকদফা ভয়েস মেসেজ এবং ফোনে কথা হলেও আজ হয়নি। আমরা চিন্তিত।‘‘

নাবিক নুর উদ্দীনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, মঙ্গলবার দুপুরে নুর উদ্দীন তাকে ফোন করে জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর জানান। এরপর সন্ধ্যায় ভিডিওকলে কান্নাকাটি করে ছেলেকে দেখতে চান।

তিনি বলেন, “সন্ধ্যায় (মঙ্গলবার) লাস্ট দুইটা ভয়েস পাঠিয়েছে। বলছে ‘আমাদের থেকে মোবাইল নিয়ে নেয়া হচ্ছে, আল্লাহর কাছে দোয়া কর। মুক্তিপণ না দেয়া হলে আমাদের একজন একজন করে শুট করা হবে’। এরপরে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।”

মালিকপক্ষের পক্ষ থেকে স্বজনদের স্বজনদের বিচলিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বলে জানান  কবির গ্রুপের মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা মিজানুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “আমাদের আগেও এ রকম একটি ঘটনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তা কাজে লাগিয়ে এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধার করা যাবে বলে আশা করছি।“