অধিকার আছে নেই স্বীকৃতি, নিভু নিভু ধর্মের বাতি

সকল নাগরিককে যার যার ধর্ম পালনের স্বীকৃতি দেওয়া বাংলাদেশে কত ধর্মের মানুষ অস্তিত্বমান, সে হিসাব রাষ্ট্রের কাছে আছে?

রাজীব নূররাজীব নূরস্পেশাল অ্যাসাইনমেন্ট এডিটরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Dec 2022, 06:57 PM
Updated : 16 Dec 2022, 06:57 PM

শীতল স্নালের এক বন্ধু মনেপ্রাণে একজন সাংসারেক। তার বাগদত্তাও সাংসারেক বিশ্বাসের অনুরাগী। তবু তাদের বিয়ে করতে হচ্ছে খ্রিস্টান রীতি মেনে, কারণ সাংসারেক বিয়ের আইনি স্বীকৃতি নেই, মেয়েটির পরিবারও সেটা মেনে নেবে না।

দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যাদের গারো বলে, তারা নিজেদের আত্মপরিচয়ের ক্ষেত্রে ‘মান্দি’ শব্দটাই ব্যবহার করেন। মান্দি শব্দের অর্থ মানুষ। এই গারোদের আদি ধর্মের নামই সাংসারেক।

টাঙ্গাইলের মধুপুরের ওয়ারি নকরেক মারাক বা শীতল স্নালের মত যারা এখনও সাংসারেক ধর্ম ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন, তাদের বিশ্বাস– ‘মান্দি মাত্রই সাংসারেক হয়ে জন্মগ্রহণ করে’। কিন্তু বাস্তবতা হল, গারোদের বাইরে এই ধর্মাবলম্বী আর কেউ নেই। সভ্যতার সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে গারোরাও প্রায় সবাই এখন খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত।

শুধু গারোরা নয়, নিজেদের আদি ধর্ম হারিয়ে ফেলার শঙ্কায় রয়েছে উত্তরের সাঁওতাল, সিলেটের খাসি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ম্রোসহ অনেক আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী।

কেন এই শঙ্কা? মূল কারণ হল বাংলাদেশের সংবিধান সব নাগরিককে যার যার ধর্ম পালনের অধিকার দিলেও রাষ্ট্রের খাতায় মোটা দাগে ধর্ম আছে পাঁচটি। এর মধ্যে মূলধারার চারটি, আর বাকিগুলো মিলিয়ে ‘অন্যান্য’।

জনশুমারিতে তাদের সেভাবেই গণনা করা হয়। ফলে সমান অধিকারী হলেও নিজেদের ধর্মবিশ্বাসের নাম লেখার সুযোগ তাদের অনেক ক্ষেত্রে থাকে না। জটিলতা এড়াতে নিতে হয় অন্য ধর্মের পরিচয়।

ওয়ারি নকরেক বলেন, “ইচ্ছে করলেও অনেকেই সাংসারেক আইডেন্টিটিতে থাকতে পারছে না। বিয়ের সময় রেজিস্ট্রেশনের জন্য অন্য ধর্মের শরণাপন্ন হতে হয়। স্কুলে ছেলেমেয়ে পড়াতে গিয়েও একই অবস্থা, সেখানেও অন্য ধর্মের বই পড়তে হয়। আমি নিজেও সরকারি প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনার সময় ইসলাম ধর্ম পড়েছি।”

সাঁওতালসহ সারি ও সারনা ধর্মাবলম্বী উত্তরের ৩৮টি জাতিগোষ্ঠী চায়, জনশুমারিতে তাদের সংখ্যাও জানানো হোক। মূলধারার চারটি ধর্মের সঙ্গে তাদেরকেও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ার এবং উৎসব-অনুষ্ঠান পালনে সহায়তা করুক সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়।

একই দাবি ‘নিয়ম ছনং’ অনুসারী সিলেটের খাসিদের এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃতি পূজারী ‘শুংনাম রি’ ও ‘ক্রামা’ ধর্মাবলম্বী ম্রোদের। তারা মনে করেন, সর্বপ্রাণবাদী এসব ধর্ম বিশ্বাসের বিলুপ্তি ঘটলে তাতে রাষ্ট্রেরও দায় থাকবে।

সাংসারেকের মৃত্যু, শেষকৃত্য খ্রিস্টীয় রীতিতে

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং একজন গারো এবং ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান পরিবারের সন্তান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘সাংসারেক’ নয়, শব্দটি হওয়া উচিত ‘সংসারেক’। আর গারোদের যারা এখনও খ্রিস্টান হওয়ার জন্য বাপ্তিস্ম নেননি, তাদেরই সাংসারেক বলে মানতে হবে।

“গারোদের যারা এখনও আদি ধর্ম অনুসরণ করে, তাদের ওপর পরোক্ষ কিছু চাপ তৈরি হলেও সমাজ শেষ পর্যন্ত মেনে নেয়।”

নবীন-প্রবীণ মিলিয়ে সাংসারেক ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা দুই হাজারের মত হতে পারে বলে ধারণা করেন সঞ্জীব দ্রং। তবে গবেষক পাভেল পার্থর মতে, ওই সংখ্যা আরও অনেক কম।

২০০২ সালে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে ধর্মান্তরিত না হওয়া গারোদের একটা তালিকা করেছিলেন পাভেল পার্থ। টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোণা, জামালপুর, মৌলভীবাজার ঘুরে ঘুরে তৈরি করা তার ওই তালিকা অনুযায়ী তখন পর্যন্ত সাংসারেকদের সংখ্যা ছিল ৪০০। তবে নতুন প্রজন্মের সাংসারেক ভাবাদর্শে বিশ্বাসীদের গণনা করলে সংখ্যা হাজার ছাড়াবে বলে তার ধারণা।

‘সাংসারেক মান্দিরাংনি ওয়ান্না’ বইয়ের অন্যতম লেখক জুয়েল বিন জহির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই শেষ সাংসারেকদের সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তিদের একজন দীনেশ নকরেকের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুরের ধরাটি গ্রামে। চুনিয়া গ্রামের আচ্চু জনিক নকরেকের মৃত্যুর পর তিনিই সাংসারেকদের কাছে নেতৃস্থানীয় বলে গণ্য হন।

আচ্চু শব্দটি দাদা বা নানা সম্বোধনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। তবে জনিক নকরেক সবার কাছে আচ্চু জনিক বলে পরিচিতি পেয়েছিলেন।

মধুপুরেরই সাইনামারি, জয়নাগাছা, বেদুরিয়া, বন্দেরিয়া, ক্যাজাই, হাগুড়াকুরি ও সবকচনা গ্রামে বেশ কয়েকজন সাংসারেক ধর্মানুসারী আছেন। মধুপুরের অদূরে জামালপুর জেলার ভাগরা গ্রামেও আছেন দুয়েকজন। বাকিদের বেশিরভাগ মারা গেছেন। কেউ কেউ ধর্মান্তরিত হয়েছেন ‘পরিবার ও সমাজের চাপে’।

যারা ধর্মান্তরিত হননি, তাদেরও এখন মৃত্যুর পরে খ্রিষ্টীয় রীতিতে কবর দেওয়া হচ্ছে। তবে গত বছর আচ্চু জনিক নকরেকের মৃত্যুর পর সাংসারেকদের আদি রীতিতেই তার শেষকৃত্য হয়। অন্তত চার দশক পরে সেই প্রথম চিতা জ্বলে গারোদের কোনো গ্রামে।

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার চুনিয়া গ্রামের জনিক নকরেক গারোদের আদি ধর্ম অনুসারীদের কাণ্ডারি হয়ে ছিলেন বহুবছর। সাংসারেক অনুসারীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ বলে গণ্য হতেন তিনি।

যৌবনে অনেক ঘুরে বেড়ালেও জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো পাতাঝরা বনগুলোর একটি মধুপুর শালবনের প্রাচীন গ্রাম চুনিয়ায়। পরে চুনিয়াই ছিল তার পৃথিবী। এই পৃথিবী বিস্তৃত হয়েছে তার গ্রামবাসী থেকে শুরু করে দেশ ও দেশের বাইরের অগণিত শ্রেণি-পেশা-লিঙ্গ-ধর্ম-জাতির মানুষের মধ্যে। উন্মুক্ত সংহতির ওই জ্ঞানবলয়ে জনিক নকরেক পেয়েছেন দার্শনিকের মর্যাদা।

শত বছরের বেশি সময় বেঁচে থাকা এই মানুষটি ২০২১ সালের ১২ নভেম্বর মারা যান। জনিকের মৃত্যুর কিছুদিন আগে এবং পরেও শেষ সাংসারেকদের কেউ কেউ মারা গেছেন এবং উত্তরসূরিরা মরণোত্তর প্রায়শ্চিত্ত করে খ্রিষ্টীয় রীতিতে কবর দিয়েছেন তাদের।

জনিকের বেলায় তা করা যায়নি, কারণ জীবদ্দশাতেই জনিক নকরেক অনুসারী হিসেবে পেয়েছিলেন নতুন প্রজন্মের অনেক তরুণকে, যারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজেদের সাংসারেক বলে ঘোষণা দেন। তারা দৃঢ়তার সঙ্গে সাংসারেক রীতিতে জনিকের শেষকৃত্য করেছেন।

পুনর্জাগরণ  

জনিক নকরেক যখন বেঁচে ছিলেন, প্রতি বছর চুনিয়ায় তার বাড়িতে আদি রীতিতে পালিত হত ‘ওয়ান্না’। তার মৃত্যুর পর নতুন প্রজন্মের সাংসারেকদের দুজন ওয়ারি নকরেক মারাক ও শীতল স্নালের উদ্যোগে মধুপুরের দুটি গ্রাম বেদুরিয়া ও আমলিতলায় এ বছরও আদি রীতির ওয়ান্না বা ওয়ানগালা হয়েছে।

ধর্মান্তরিত হয়ে যাওয়া গারোরাও ওয়ানগালা পালন করে থাকে। তবে সাংসারেক অনুসারীরা মনে করেন, ধর্মান্তরিতদের ওয়ানগালা একটি উৎসব মাত্র, সেটি সাংসারেক ওয়ানগালার খ্রিষ্টীয় সংস্করণ, সেখানে খ্রিষ্ট রাজার পর্ব বলে একটি অংশ ‘চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে’।

ওয়ারি ও শীতল দুজনই ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন। তারা মনে করেন, ধর্মান্তরিত মান্দিদের সাংসারেক ধর্মে প্রত্যাবর্তনের জন্য কোনো দীক্ষা নিতে হয় না, বিশ্বাস স্থাপন করলেই চলে। তবে সাংসারেক ধর্মের বিশুদ্ধতা ধরে রাখার ব্যাপারে অঙ্গীকার থাকতে হয়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপে আক্ষেপ করে শীতল বলেন, “আমরা যারা নিজেদের সাংসারেক বলে দাবি করছি, তাদের অস্তিত্ব জনশুমারিসহ রাষ্ট্রের কোনো কিছুতেই নেই।”

শুমারিতে যদি নিজেকে সাংসারেক বলে পরিচয় দেওয়ার সুযোগ হয়, নতুনদের কতজন তা করবেন? এর উত্তরে ওয়ারি বলেন, “নতুন প্রজন্মের অন্তত হাজারখানেক তরুণ-তরুণী নিজেকে সাংসারেক বলে পরিচয় দিয়ে থাকে। পুরোনোদেরও শখানেক মানুষ বেঁচে আছেন।”

শীতল স্নালও বললেন, “সংখ্যাটা হাজারের নিচে নয়। তবে বুক চিতিয়ে চার্চের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নিজেকে সাংসারেক দাবি করার মতো তরুণ হাতে গোনা।”

সাংসারেক ধর্মকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এর একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে বলে মনে করেন ওয়ারি নকরেক। তার মতে, সাংসারেক গারোরা সাংগঠনিকভাবে ‘অসংগঠিত’ ছিল বলেই তাদের ধর্ম বিলুপ্তির পথে চলে গেছে।

শীতল স্নাল অবশ্য এমন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়াকে ‘সাংসারেক দর্শনবিরোধী’ মনে করেন। তিনি বলেন, “আমাদের ধর্মটা গাছের সাথে, বনের সাথে, কীটপতঙ্গের সাথে মানুষের সম্পর্কের ধর্ম। ফসল ফলানো থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার প্রক্রিয়ার সবকিছু ধর্মের অংশ। সাংসারেকদের এই সংসারটা অনেক বড়। সেখানে একটা প্রতিষ্ঠান দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রাণ-প্রকৃতির সবাইকে যুক্ত করবেন কীভাবে?”

ওয়ারি ও শীতল দুজনই বিয়ে করেছেন সাংসারেক রীতিতে। একে তারা দোবুক দকা বা দোসিয়া বিয়ে বলেন। আর যিনি বিয়ে পড়ান, সেই পুরোহিতকে মান্দিদের ভাষায় কামাল বা খামাল বলা হয়।

ওয়ারি বলেন, “জন্ম থেকে মৃত্যু এবং মাঝখানে বিয়ে, এই পুরো প্রক্রিয়াটাই ধর্মের সঙ্গে বাঁধা। তাই সাংসারেক ধর্মেরও একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দরকার। আমাদের প্রজন্মের গারোদের যদি কামাল হিসেবে স্টাডি করানো যায়, তবেই হয়তো পুনরুজ্জীবিত সাংসারেক ধর্মের চর্চা অব্যাহত রাখা যাবে। কামালদের যারা এখনও বেঁচে আছেন, তাদের সবার বয়স ৭০ বছরের বেশি হয়ে গেছে। তাদের মৃত্যুর পর চর্চা ধরে রাখার মানুষ পাওয়া যাবে না।”

তবে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সাংসারেকদের নব জাগরণ দেখতে পাচ্ছেন গবেষক পাভেল পার্থ। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে দেখেছি বছর বছর সাংসারেকদের সংখ্যা কমতে থাকে, মানে যারা অন্য কোনো ধর্মে দীক্ষিত হননি এমন প্রবীণ সাংসারেকেরা মারা যেতে থাকেন। অনেকে আবার পরিবার ও সমাজের চাপে ধর্মান্তরিত হচ্ছেন। একই সময়ে তরুণ মান্দি প্রজন্মের ভেতর আরেকটা নতুন জাগরণ ঘটছে। অনেকেই নিজেদের সাংসারেক হিসেবে পরিচয় দিতে দিচ্ছেন।”

“সাংসারেক দর্শন শুধু মানুষকেন্দ্রিক নয়, বিশ্বসংসারের সকল প্রাণ-প্রজাতির সঙ্গে মিলেমিশে থাকার আরাধনা করে এই ধর্ম। একই কথা বলা যায়, সারি ও সারনা, নিয়ম ছোনং ইত্যাদি ধর্মের ক্ষেত্রেও। আমি চাই তারা যে যেই পরিচয়ে পরিচিত হতে চান, তাই যেন পারেন। মানুষের আত্মপরিচয়ের স্বীকৃতির পক্ষে আমার অবস্থান।“

ধর্মের স্বীকৃতি

সংখ্যায় সাংসারেকদের তুলনায় অনেক বেশি সারি ও সারনা ধর্মের অনুসারীরা। সাধারণভাবে তারা ‘সনাতন সাঁওতাল’ বলে পরিচিত। এ দুটির ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ৩৮টি জাতিগোষ্ঠীর অনেকেই রয়েছে।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মানিক সরেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে সারি এবং সারনা ধর্ম দুটিকে সারি-সারনা বলে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি করে আসছি। এই ধর্মাবলম্বীদের বাধ্য হয়ে নিজেদের সনাতন বা হিন্দু বলে পরিচয় দিতে হয়।”

ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে খেরোয়াল, অর্থাৎ মুন্ডারি ভাষা পরিবারের সব কয়টি আদিবাসী, যেমন সাঁওতাল, মুন্ডা, কোল, মাহালি, কুড়মি, ভীল, হো, ভূমিজ– সবাই হিন্দুদের থেকে আলাদা। এসব জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সাঁওতালদের প্রায় ৫০ শতাংশ খ্রিষ্টান হয়ে গেলেও অন্যদের মধ্যে ধর্মান্তরিতের সংখ্যা আরও কম।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে সংখ্যার দিক দিয়ে বাঙালিদের পরই সাঁওতালদের অবস্থান। সাঁওতালরা নিজেদের ‘সারি ধরম’ অনুসারী বলে পরিচয় দেয়। অন্যরা সারনা বলে দাবি করে। অবশ্য পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ডেও সাঁওতালরা নিজেদের সারনা বলে। এ দুটিই ভারতবর্ষের প্রাচীন ধর্ম এবং বিশ্বাসের দিক থেকে সর্বপ্রাণবাদী ও প্রকৃতি উপাসক বলে জানালেন মানিক সরেন।

সাঁওতাল পরিবারের ছেলে মানিক ‘সার সাগুনে বিহা’ রীতিতে বিয়ে করেছেন। ‘সার সাগুনে বিহা’ খেরোয়ালদের সবারই বিয়ের আদি রীতির নাম। তবে এ ধর্মের কেতাবি স্বীকৃতি নেই বলে বিয়ে রেজিস্ট্রি করা যায় না।

“ধর্মীয় পরিচয় মান্যতা পেলে তবে তো ওই ধর্মীয় রীতির বিয়ের স্বীকৃতি মিলবে,” সখেদে বলছিলেন উচ্চতর পড়াশোনার জন্য অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাঁওতাল তরুণ খোকন সুইটেন মুর্মু।

তিনি বলেন, “আমরা আমাদের জাতিগত পরিচয়টাও বলতে পারি না। খুব ছোটবেলায়, শিক্ষাজীবন শুরু করার সময় বাংলাকে নিজের ভাষা বলে ঘোষণা করতে বাধ্য হই আমরা। জনশুমারিতে সাঁওতালদের ধর্মের উল্লেখ নেই। আমাদের ভাষা বাংলা বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সংবিধানে আমাদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী করে দেওয়া হয়েছে।”

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এবং জাতীয় আদিবাসী পরিষদের নিজস্ব পরিসংখ্যানের সঙ্গে সরকারি জরিপের বিস্তর ব্যবধান রয়েছে বলে জানান খোকন মুর্মু।

তিনি বলেন, চলতি বছর প্রকাশিত সর্বশেষ জনশুমারির ফল অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১ লাখ ২৯ হাজার ৪৯ জন সাঁওতাল বসবাস করে। ১৯৯১ সালের আদমশুমারির তথ্যানুযায়ী, সাঁওতাল জনসংখ্যা ‍ছিল দুই লাখের বেশি।

“এক দশকের বেশি সময় ধরে জনসংখ্যা কমার কোনো কারণ নেই। তবে শুমারিতে কখনও আমাদের সংখ্যা ঠিকঠাক উপস্থাপন করা হয় না। জাতীয় আদিবাসী পরিষদের নিজস্ব পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে এখন সাঁওতালদের সংখ্যা ৫ লাখের বেশি। তার অন্তত অর্ধেক সারি-সারনা ধর্মের মানুষ, যাদের উল্লেখ নেই শুমারিতে।”

খোকন ও মানিক দুজনই মনে করেন, সাঁওতালসহ উত্তরের সবগুলো জনজাতিকে হিসেবে নিলে বাংলাদেশে সারি-সারনা ধর্মানুসারীর সংখ্যা হবে তিন লাখের বেশি।

কারাম নামে একটি উৎসব উত্তরের এই ৩৮টি জাতিগোষ্ঠীকে এক বৃন্তে বেঁধে রেখেছে; তাদের কেউ সারি, কেউ আবার সারনা বলে নিজেদের পরিচয় দেন।

খাসিদের বিপন্ন ধর্ম

খাসিদের আদি ধর্মের নাম ‘নিয়ম ছনং’। আবার জেন্টিল নামেও পরিচিত। ‘উব্লাই নাংথউ’ তাদের প্রধান উপাস্য।

সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে খাসিয়া বা খাসি আছে ১২ হাজার ৪২১ জন। তবে প্রকৃত সংখ্যা এর দ্বিগুণের বেশি বলে মনে করেন খাসিদের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি সুবিমল লংডকিরি।

পেশায় আইনজীবী সুবিমল থাকেন মৌলভীবাজারে। তার বাড়ি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার মাধবকুণ্ড পুঞ্জিতে। ওই পুঞ্জির (গ্রামের) প্রায় সবাই ধর্মান্তরিত হয়ে গেলেও সুবিমলরা এখনও আদি ধর্মটি পালন করেন।

খাসিদের প্রায় সবাই বৃহত্তর সিলেট জেলার বাসিন্দা। সুবিমলের ধারণা, বাংলাদেশে বড়জোর হাজারখানেক খাসি এখনও আদি ধর্ম পালন করেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “খাসি গ্রামগুলোর সর্বত্রই একটি-দুটি পরিবার আছে, যারা এখনও ধর্মান্তরিত হয়নি। তবে সবচেয়ে বেশি ছনং ধর্মাবলম্বী আছে সিলেটের জৈন্তাপুরে।”

জৈন্তাপুরের ভিত্রিখেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সঞ্চিতা ইয়াংইয়ুং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের খাসি পাড়ার সবাই নিয়ম ছনং। সংখ্যা হবে শ তিনেক।

নিয়ম ছনংদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হলো হকতই। মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের সপ্তমী তিথিতে পূর্বসূরীদের স্মরণে, তাদের আত্মার শান্তি কামনায় এবং নিজেদের মঙ্গলের জন্য এ উৎসব পালন করা হয়। সেদিনে ঈশ্বর ও মৃতদের উদ্দেশে ফল, পিঠাসহ নানারকম খাবার উৎসর্গ করা হয়। বর্তমানে সিলেটের জৈন্তাপুর ছাড়া আর কোথাও উৎসবটি হয় না। 

ম্রোদের আদি ও নতুন ধর্ম– দুটোই শুমারির বাইরে

পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জনজাতির মধ্যে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরার পরই সংখ্যার দিক থেকে ম্রোদের অবস্থান। সর্বশেষ জনশুমারি বলছে তাদের সংখ্যা ৫২ হাজার ৪৫৫ জন।

মেনলে ম্রো নামের এক তরুণ গত শতাব্দীর আশির দশকে নতুন একটি ধর্মের প্রচার শুরু করেন ম্রোদের মধ্যে, যার নাম ক্রামা। ম্রোদের অর্ধেকের বেশি এখন ক্রামা ধর্মের দীক্ষা নিয়েছেন। সংখ্যার দিক থেকে ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টানদের অবস্থান দ্বিতীয়; বৌদ্ধও আছেন কিছু।

আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চ্যংয়ুং মুরুং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ম্রোদের আদি ধর্মের অনুসারীদের অনেকেই নিজেদের বৌদ্ধ বলে পরিচয় দেয়। তবে সেটা প্রথাগত বৌদ্ধ ধর্মের মতো নয়।

ম্রোরা তাদের আদি ধর্মকে 'শুংনাম রি' বলে ডাকে। ম্রো ভাষার শুংনাম মানে দেবতা আর রি মানে রীতি। তবে যারা এখনও শুংনাম রি পালন করেন, তারা ম্রোদের মধ্যেও পরিচয় দিতে ‘সংকোচ বোধ করেন’ বলে জানালেন চ্যংয়ুং মুরুং।

তিনি বলেন, “শুংনাম রি অনুসারীরা খাল-বিল, বনে-জঙ্গলে, পাহাড়ে পূজা দেন প্রকৃতির বিভিন্ন দেবতাকে তুষ্ট করার জন্য। ধর্মটাকে প্রকৃতিবাদী ধর্মও বলা যায়।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী চ্যংয়ুং মুরুংদের পরিবার অবশ্য ক্রামা ধর্ম পালন করে।

তিনি বলেন, “ম্রোদের বর্ণমালা গরু খেয়ে নিয়েছিল, এই বেদনা থেকে আদি ধর্মাবলম্বীরা গোহত্যা উৎসব করে। মেনলে ম্রো এসে দাবি করলেন, তিনি ক্রামাদির কাছ থেকে বর্ণমালা নিয়ে এসেছেন। শুধু তাই নয়, একটি ধর্মগ্রন্থও নিয়ে এসেছেন। তাই গোহত্যা করা যাবে না।”

তবে শুংনাম রি বা ক্রামা– কোনো মতের অনুসারীদেরই যে শুমারিতে তাদের ধর্ম পরিচয়ে গণনা করা হয় না, সে কথা তুলে ধরে চ্যংয়ুং বলেন, “আমি খ্রিষ্ট ধর্ম পড়েছি। অনেকেই আবার বৌদ্ধ ধর্মও নিয়ে বিদ্যায়তনিক শিক্ষাগ্রহণ করে। কিন্তু ক্রামারা স্কুলে নিজেদের ধর্ম পড়তে চায়।” 

কিতাব কী বলে

বাংলাদেশে মূল ধারার বাইরে থাকা এসব ধর্মের অনুসারীরা নিজেদের ধর্ম অবলম্বন, পালন, প্রচার এবং পরিচয় দেওয়ার অধিকার চান। অথচ রাষ্ট্রের সংবিধানে সবারই যার যার ধর্ম পালনের অধিকার সংরক্ষিত আছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পারভেজ হাসেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদের ধর্মীয় স্বাধীনতা অংশ বলা আছে, ‘প্রত্যেক নাগরিকের যে কোনো ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে।’ কাজেই সাঁওতাল কিংবা গারোদের কিংবা অন্য কোনো জাতিগোষ্ঠির যে কেউ ধর্মান্তরিত হতে পারেন। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর কেউ যদি আবার আদি ধর্মে ফিরে যেতে চান, তাতেও বাধা দেওয়ার সুযোগ রাখেনি সংবিধান।

“তারা অবশ্যই নিজেদেরকে আদি ধর্মের অনুসারী বলে পরিচয় দেওয়ার অধিকার রাখেন। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা এবং উৎসব-অনুষ্ঠান পালনের অধিকার রাখেন। প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপ-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকারও সংবিধানে সুরক্ষিত আছে।”

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত বলছেন, একজন ব্যক্তিও যদি তার ধর্মের স্বীকৃতি দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র তা দিতে বাধ্য।

“আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাহাত্তরের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে আমরা কথা বলে যাচ্ছি। তবে এখন পর্যন্ত ওই আদিবাসীদের কেউ তাদের ধর্মের স্বীকৃতি চাওয়ার ব্যাপারে আমাদের জানায়নি।” 

ব্যক্তিগতভাবে ওই ধর্মগুলোর অনুসারীদের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, “জনশুমারিতে তাদের যেন আলাদাভাবে উল্লেখ করা করা হয়, এ ব্যাপারেও উদ্যোগ নেব আমি।”

এসব ধর্মকে সরকারের হিসাবে আনার উদ্যোগ কেন নেই জানতে চাইলে জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের পরিচালক দিলদার হোসেন বলেন, আগের শুমারিগুলোতে ধর্ম সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য যেসব ‘ক্রাইটেরিয়া’ ছিল, এবারের শুমারিতেও সেগুলো অনুসরণ করা হয়েছে। শুমারির আগে কেউ এ ধর্মগুলোকে আলাদা করে জরিপের দাবিও করেননি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দিলদার হোসেন বলেন, “জনশুমারির আগে যদি এ দাবি আমাদের কাছে জানানো হত, তাহলে এবারই সেটি অন্তর্ভুক্ত করা যেত। আমি এ সম্পর্কিত প্রস্তাব যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছাব, যেন পরের শুমারির সময় আমি দায়িত্বে না থাকলেও বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়।”

রাষ্ট্রের দায়

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ফারহা তানজীম তিতিলের মতে, ‘রাষ্ট্রের অবহেলায়’ বাংলাদেশ তার জাতিগত ও ধর্মীয় পরিচয়ের বৈচিত্র্য হারাচ্ছে। তিতিল একজন অধিকার কর্মী এবং আদিবাসীদের ওপর তার লেখালেখি গবেষণাও রয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “রাষ্ট্রের অমনোযোগ এবং আগ্রাসনের বিপরীতেই ছিল মিশনারি সংগঠনগুলোর ভালোবাসা প্রদর্শন। মধুপুরের বনে, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে, এমন কি সিলেটের খাসি পুঞ্জিগুলোতে বাঙালির বসতি বাড়ানো হচ্ছে। বন-পাহাড় হয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্রের সম্পত্তি, উদ্বাস্তু হচ্ছে সেখানকার আদিবাসীরা।”

তিতিল বলছেন, টিকে থাকার জন্য নাগরিক জীবনে অভ্যস্ত হওয়া, স্কুলে যাওয়া এবং বিকল্প সংগঠিত বন্ধুর হাত ধরার চেয়ে ভালো উপায় এই আদিবাসীদের ছিল না।

“রাষ্ট্রের প্রান্তিক নাগরিক হওয়ার চেয়ে, উপজাতি নাম পাওয়ার চেয়ে ধর্ম বদলে আন্তর্জাতিকভাবে সংগঠিত একটি শক্তির অংশ হিসেবে গর্বিত হওয়াটা হয়তো যৌক্তিক মনে হয়েছে সমঝোতায় অভ্যস্ত মানবজাতির এই দলগুলোর কাছে, অনিবার্য কারণেই সর্বপ্রাণে বিশ্বাসী বহুত্ববাদী ধর্মগুলোর বিপর্যয় ঘটেছে।”

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেনেরও দাবি, মৃতপ্রায় ধর্মগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার দায় নিতে হবে রাষ্ট্রকে, বিশেষ করে সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়কে।

তিনি জানান, রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ভানগাছি ইউনিয়নের বাঁশাবাড়িয়া গ্রামে একটি মৗঞ্জহি থানের (সাঁওতাল উপাসনালয়) জন্য ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল।

“ওই একটি অনুদানের তথ্যই আমার জানা আছে। সেটিও পাওয়া গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে। ধর্ম মন্ত্রণালয় তো কার্যত একটি ধর্মের মন্ত্রণালয়ে পরিণত। তাও মুসলিমদের বাইরে মন্ত্রণালয়টির কিছু কর্মকাণ্ড রয়েছে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানদের জন্য। আমাদের কথা জানা নেই ধর্ম মন্ত্রণালয়ের।”

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান অবশ্য এটাকে ‘ভ্রান্ত ধারণা’ বলে দাবি করলেন। তিনি বলেন, “মুসলমানরা মনে করেন ধর্ম মন্ত্রণালয় শুধু তাদের, অথচ দেখে সংখ্যালঘুর স্বার্থ। আবার অন্য ধর্মের লোকজন ভাবে ধর্ম মন্ত্রণালয় তাদের জন্য কিছুই করে না। আমি নিজে গুরুদুয়ারায় গিয়ে এলাম।

“তবে আপনার কাছ থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর যে ধর্মগুলোর কথা শুনলাম, তাদের জন্য খোদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিভিন্ন দান-অনুদান দেওয়া হয়। তারা আমার কাছে কোনো সময় আসে নাই। এলে তাদের আবেদনও বিবেচনা করা হবে।”