ইমতিয়াজ ঢাকার একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে বড় পদে চাকরি করেন। তিনি মার্শাল আর্টে ব্ল্যাকবেল্টধারী এবং বাংলাদেশ জাতীয় কারাতে ফেডারেশনের তালিকাভুক্ত প্রশিক্ষক ও আন্তর্জাতিক রেফারি।
Published : 13 Dec 2023, 05:57 PM
নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সর্বশেষ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ইমতিয়াজ সেলিম ওরফে ইমাদুল আমিন নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
৪১ বছর বয়সী ইমতিয়াজ ঢাকার একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে বড় পদে চাকরি করেন। তিনি মার্শাল আর্টে ব্ল্যাকবেল্টধারী এবং বাংলাদেশ জাতীয় কারাতে ফেডারেশনের তালিকাভুক্ত প্রশিক্ষক ও আন্তর্জাতিক রেফারি। জাপান কারাতে অ্যাসোসিয়েশনের লাইসেন্সধারী প্রশিক্ষকও তিনি।
ডিএমপির কাউন্টার টেরোরেজিম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ইমতিয়াজ হিজবুত তাহরীর বাংলাদেশ বা উলাইয়া বাংলাদেশের অন্যতম নেতা।
“সর্বশেষ গত ৩০ সেপ্টেম্বর উলাইয়ার যে অনলাইন সম্মেলন হয়েছিল, তাতে দ্বিতীয় বক্তা ছিলেন ইমতিয়াজ। গতকাল বিকেলে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ভাড়া বাসা থেকে ইমতিয়াজকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসির ইন্টেলিজেন্স অ্যানালাইসিস ডিভিশন।”
এর আগে গত ৬ ডিসেম্বর কক্সবাজার থেকে ওই অনলাইন সম্মেলনের প্রধান বক্তা তৌহিদুর রহমান ওরফে সিফাতকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় সিটিটিসি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে এমবিএ শেষ করে ফ্রিল্যান্সিং করছিলেন ২৯ বছর বয়সী সিফাত। বয়সে তরুণ হলেও সিফাতই হিযবুত তাহরীরের শীর্ষ নেতা বলে সিটিটিসির ভাষ্য।
বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান বলেন, “হিযবুত তাহরীর গত কয়েক বছর ধরে দেশের সার্বভৌমত্বকে আঘাত করার জন্য, গণতন্ত্রকে উৎখাত করার জন্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করার ষড়যন্ত্র করে আসছে।”
তিনি বলেন, এ বছর এপ্রিল মাসে একটি অনলাইন সম্মেলনের পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ‘যালিম হাসিনা এবং ঔপনিবেশবাদী মার্কিনীদের কবল থেকে মুক্তির উপায়’ শীর্ষক অনলাইন সম্মেলনের আয়োজন করে হিজবুত তাহরীর। লেবানন ভিত্তিক একটি ইউটিউব চ্যানেলে সম্মেলনটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
“এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার জন্য তারা ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে পোস্টার লাগানোসহ অনলাইনে প্রচার-প্রচারণা চালায়। সম্মেলনে দুইজন বক্তা এবং একজন উপস্থাপক অংশগ্রহণ করে, যেখানে সবাই ছদ্মনাম ব্যবহার করে। এ সম্মেলনে বক্তারা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং যুক্তরাষ্টসহ বিভিন্ন দেশের সাথে সরকারের সম্পর্কসহ বিভিন্ন বিষয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভুলভাবে উপস্থাপন করে। ওই সম্মেলনে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়েও দেশের সাধারণ জনগণকে উসকানি দেওয়া হয়,” বলেন আসাদুজ্জামান।
তিনি জানান, ওই সম্মেলনের দ্বিতীয় বক্তা ইমতিয়াজ সেলিমের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে, ঢাকার বসুন্ধরা এলাকায় তিনি ভাড়া বাসায় থাকতেন।
ইমতিয়াজ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ করার পর ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে মাস্টার্স করেন। বনানীতে একটি বহুজাতিক কোম্পানির হেড অফ বিজনেস এবং জেনারেল ম্যানেজার (সেলস) পদে তিনি চাকরি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করার পর ২০১০ সালে এক বন্ধুর মাধ্যমে হিযবুত তাহরীরে যুক্ত হন ইমতিয়াজ। ২০১০ সালের ১২ মে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে। সে সময় বাড্ডা থানার একটি মামলায় তিনি ছয় মাস জেলেও ছিলেন।
সিটিটিসি বলছে, জেলে থাকার সময় ইমতিয়াজ বাংলাদেশে হিজবুত তাহরীরের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম মাওলা এবং অধ্যাপক মহিউদ্দিনের সংস্পর্শে এসে তাদের বয়ানে সংগঠনের প্রতি আরও বেশি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। জামিনে মুক্তি পেয়ে পরিবার নিয়ে তিনি অস্ট্রেলিয়া চলে যান।
সেখানে এক বছর থাকার সময়ও তিনি সাংগঠনিক কাজ অব্যাহত রাখেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বরের সম্মেলনের আগে ২০২১ সালের ০৩ ডিসেম্বর আরও একটি অনলাইন সম্মেলনের বক্তা হিসেবে গণতন্ত্র ও দেশের প্রচলিত আইনকে অস্বীকার করে বক্তব্য দেন ইমতিয়াজ।