সোনালী ব্যাংক থেকে হল-মার্ক গ্রুপ জালিয়াতির মাধ্যমে আড়াই হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সময় হুমায়ুন কবীর ছিলেন ব্যাংকের এমডি।
Published : 24 Jul 2022, 10:30 PM
ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের সোয়া কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবীরসহ নয়জনকে সাজা দিয়েছে আদালত।
ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. ইকবাল হোসেন রোববার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডিতরা হলেন- সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হুমায়ুন কবীর, উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মাইনুল হক, জিএম ননী গোপাল নাথ ও মীর মহিদুর রহমান, ডিজিএম শেখ আলতাফ হোসেন, এজিএম কামরুল হোসেন খান ও সাইফুল হাসান এবং প্যারাগন নিট কম্পোজিট লিমিটেডের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা ও পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন।
আসামিদের মধ্যে শেখ আলতাফ হোসেন বাদে বাকি আট আসামিকে দুটি ধারায় মোট ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে আত্মসাতের দায়ে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রতারণার দায়ে আরও সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
তাছাড়া আসামিদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে আদালত। জরিমানার অর্থ না দিলে তাদের আরও তিন মাসের সাজা ভোগ করতে হবে।
একই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলেও প্যারালাইসিসে আক্রান্ত আলতাফ হোসেনকে আট বছরের ন্যূনতম সাজা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আত্মসাতের দায়ে পাঁচ বছর এবং প্রতারণার দায়ে তিন বছরের কারাদণ্ড হয়েছে তার। তাকেও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
দুই ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে বলে আট আসামিকে ১০ বছর এবং আলতাফকে পাঁচ বছর সাজা ভোগ করতে হবে বলে দুদকের আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক জানান।
এছাড়া সরকারি কর্মচারী হয়ে সম্পদ আত্মসাতের দায়ে নয় আসামিকে মোট এক কোটি ২৫ লাখ ৭০ হাজার ২২০ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যা প্রত্যেকের কাছ থেকে সমহারে আদায় করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে।
দণ্ডিত নয় আসামির মধ্যে হুমায়ুন কবীর, সাইফুল হাসান, আবদুল্লাহ আল মামুন, ননী গোপাল নাথ ও সাইফুল ইসলাম রাজা পলাতক।
তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালতে উপস্থিত চারজনকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন বিচারক।
মামলার বিবরণে বলা হয়, জালিয়াতির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের এক কোটি ২৫ লাখ ৭০ হাজার ২২০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি রমনা মডেল থানায় এই মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মশিউর রহমান।
তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ২২ মে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন দুদকের উপপরিচালক মশিউর রহমান মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
২০১৫ সালের ৬ এপ্রিল আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে আদালত। বিচার চলাকালে বিচারক ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৪ জনের সাক্ষ্য শোনেন।
দুদকের অপর আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, হলমার্ক কেলেঙ্কারির সময় সোনালী ব্যাংক থেকে অর্থ লোপাটের ঘটনায় মোট ৩৮টি মামলা হয়। এর মধ্যে তিনটি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
বাকি ৩৫টি মামলাতে মোট ৬২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। বাকি মামলাগুলোর মতো প্যারাগন নিট কম্পোজিট লিমিটেডের বিরুদ্ধে করা এ মামলাটিও হলমার্ক কেলেঙ্কারির মামলা হিসাবে পরিচিত।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা থেকে হল-মার্ক গ্রুপ জালিয়াতির মাধ্যমে আড়াই হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সময় হুমায়ুন কবীর দেশের সবচেয়ে বড় এ ব্যাংকের এমডি ও সিইওয়ের দায়িত্বে ছিলেন।
এ আগে সাড়ে ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতের এক মামলায় এ বছর ২৫ মে হুমায়ুনসহ ৯ জনকে দুই ধারায় ১৭ বছর করে এবং এক কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাতের আরেক মামলায় ২০২১ সালে হুমায়ুন কবীরসহ ১১ জনকে মেয়াদে কারাদণ্ড দেয় আদালত।
পুরনো খবর
ঋণ জালিয়াতি: সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হুমায়ুনসহ ৯ জনের সাজা