সামিয়া রহমানকে আগাম অবসরের অনুমতি দেওয়ার পাশাপাশি এই ‘পাওনা’ চেয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
Published : 10 Aug 2022, 06:26 PM
আগাম অবসর নিতে সামিয়া রহমানকে অনুমতি দেওয়ার সঙ্গে তার কাছে ‘পাওনা’ ১১ লাখ টাকা চেয়ে চিঠি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সামিয়া চিঠিটি পেয়ে ক্ষোভ জানিয়ে বলেছেন, হাই কোর্টে হেরে যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘প্রতিশোধ’ নিতে এই চিঠি দিয়েছে। তার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পাওনা নেই।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়াকে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে পদাবনতি দিয়ে সহকারী অধ্যাপক করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তা চ্যালেঞ্জ করে আইনি লড়াইয়ে নামেন এই শিক্ষক। তাতে হাই কোর্ট গত ৪ অগাস্ট দেওয়া আদেশে সামিয়াকে পদাবনতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে তাকে আগের পদ অনুযায়ী চাকরি সংক্রান্ত সব সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
এর আগে গত মার্চে সামিয়া আগাম অবসরে যাওয়ার আবেদন করেন, যদিও তার চাকরির বয়স রয়েছে।
হাই কোর্টের আদেশের পর অবসরের অনুমতি এবং পাওনা চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠিটি পেলেন সামিয়া। তবে চিঠিতে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ৩ অগাস্ট, অর্থাৎ হাই কোর্টের আদেশ হওয়ার আগের দিন।
সামিয়া রহমানের পদাবনতির সিদ্ধান্ত অবৈধ: হাই কোর্ট
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে বলা হয়, সামিয়া রহমানের পাঠানো ৩১ মার্চ তারিখের পত্রের বরাতে এবং ২৬ এপ্রিল তারিখে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসাবে দেনা-পাওনা সমন্বয় সাপেক্ষে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে বিধি মোতাবেক আগাম অবসর (আর্লি রিটায়ারমেন্ট) গ্রহণের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, হিসাব পরিচালক দপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় সামিয়ার কাছে ১১ লাখ ৪১ হাজার ৬০১ টাকা পাবে। সিন্ডিকেটের সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওনা টাকা পরিশোধ না করলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অর্জিত ছুটিতে বিদেশে থাকা অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেওয়া বেতন-ভাতাকে ‘দেনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। তবে প্রভিডেন্ড ফান্ডে সুদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে তার ১৬ লাখ ৫৮ হাজার ২১৬ টাকা জমা আছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
অর্জিত ছুটিতে থাকা অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেওয়া বেতন-ভাতাকে ‘দেনা’’ হিসেবে উল্লেখ করায় ক্ষোভ জানিয়ে সামিয়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় আমার কাছে কীসের টাকা পাবে? বরং আমি তাদের কাছে পাব। অর্জিত ছুটিতে থাকা অবস্থায় তো শিক্ষকরা বেতন-ভাতা পান। আমি কেন পাব না? মামলায় হেরে আমার প্রতি প্রতিশোধ নিতে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে।”
অবসরের আবেদন ঢাবি শিক্ষক সামিয়া রহমানের
পদাবনতি পাওয়ার পর ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত অর্জিত ছুটিতে বিদেশ যান সামিয়া। পরে তিনি পারিবারিক সমস্যার কথা উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আরও এক বছর বিনা বেতনে ছুটির আবেদন করেন। ছুটি না দিলে তিনি আগাম অবসর দেওয়ার আর্জি জানান।
একদিন আগেই (মঙ্গলবার) চিঠিটি পেয়েছেন জানিয়ে সামিয়া প্রশ্ন তোলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কর্তৃক ৩ আগস্টের চিঠি কেন ৯ আগস্ট পাঠানো হল?
“এই চিঠিটাতে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। ৪ আগস্ট হাই কোর্ট রায় দিয়েছে। তার আগে চিঠি ইস্যুর বিষয়টি দেখানোর জন্য ৩ আগস্ট লেখা হয়েছে। অথচ চিঠি পাঠানো হয়েছে ৯ আগস্ট। এই চিঠি বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
গত ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় সামিয়া রহমানকে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর তথা অর্জিত ছুটিতে যাওয়ার দিন থেকে তার অবসর অনুমোদন করা হয়।
এ বিষয়ে সামিয়া বলেন, “আমি ৩১ মার্চ ২০২২ আগাম অবসরে যাওয়ার আবেদন করেছি। কেন ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে আমাকে আমাকে অবসর দেওয়া হবে? এই সাড়ে ৪ মাস তো আমি অর্জিত ছুটিতে ছিলাম।”
গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি: সামিয়া রহমানের পদাবনতি
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কেউ স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়তে চাইলে সিন্ডিকেট দেনা-পাওয়া সমন্বয় সাপেক্ষে তার ওটা গ্রহণ করে। হিসাব পরিচালকের দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী তার কাছে চিঠি পাঠায় রেজিস্ট্রার।”
তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের প্রশাসন-১ শাখায় যেতে বলেন।
প্রশাসন-১ শাখার একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনার (সামিয়া) কাছে দেনা হিসেবে যে টাকা উল্লেখ করা হয়েছে, এটা মূলত অর্জিত ছুটির সময় নেওয়া বেতন-ভাতা।
“কেউ ছুটিতে গিয়ে স্বেচ্ছায় অবসর বা চাকরি ছেড়ে দিলে সিন্ডিকেট তার ছুটির দিন থেকে অবসর গণনা করে। তাই ১৫ নভেম্বর ২০২১ সাল থেকে তাকে অবসর দেওয়া হয়েছে। উনি চাইলে তার প্রভিডেন্ড ফান্ড থেকে দেনা পরিশোধ করতে পারবেন।”
তবে সামিয়া এই চিঠি চ্যালেঞ্জ করেও আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমি আদালতে লড়াই চালিয়ে যাব। বিশ্ববিদ্যালয় আমার কাছে কোনো টাকা পাবে না। বরং আমি প্রভিডেন্ড ফান্ডের টাকা পাব। তবে প্রভিডেন্ড ফান্ডের যে ১৬ লাখ টাকার কথা বলা হয়েছে, এটার আরও বেশি হবে। ২০ বছর চাকরি করে কি মাত্র ১৬ লাখ টাকা প্রভিডেন্ড ফান্ড পাব?”