সামিয়া রহমানের পদাবনতির সিদ্ধান্ত অবৈধ: হাই কোর্ট

সামিয়ার আইনজীবী বলছেন, এই রায়ের মাধ্যমে ‘হারানো সম্মান ফিরে পেয়েছেন’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 August 2022, 10:21 AM
Updated : 4 August 2022, 10:21 AM

গবেষণায় ‘চৌর্যবৃত্তির’ অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমানকে পদাবনতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেছে হাই কোর্ট।

একইসঙ্গে তাকে আগের পদ অনুযায়ী চাকরি সংক্রান্ত সকল সুবিধা এবং আর্থিক সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

এ বিষয়ে গত বছর জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি জাফর আহমেদ এবং বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়।

একটি গবেষণা নিবন্ধে ‘চৌর্যবৃত্তির’ অভিযোগে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সামিয়া রহমানকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে পদাবনতি দিয়ে দুই বছর পর্যন্ত সহকারী অধ্যাপক রাখার সিদ্ধান্ত হয়। পরে ৩১ অগাস্ট ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন এই শিক্ষক ।

এরপর ওই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর সামিয়া রহমানের পদাবনতির আদেশ নিয়ে রুল জারি করে হাই কোর্ট। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ওই সিদ্ধান্ত কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

এ ছাড়া ওই সিদ্ধান্তের দিন থেকে সামিয়া রহমানকে আর্থিক সুবিধাসহ সব ধরনের সাধারণ পরিষেবা দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তাও জানতে চাওয়া হয়েছিল। বৃস্পতিবার সেই রুল নিষ্পত্তি করে রায় দিল হাই কোর্ট।

আদালতে এদিন সামিয়ার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী হাসান এম এস আজিম। অপরদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী নাইম আহমেদ।

এই রায়ের মাধ্যমে ‘সত্যের জয় হয়েছে’ মন্তব্য করে সামিয়ার আইনজীবী হাসান আজিম বলেন, “সামিয়া রহমান হারানো সম্মান ফিরে পেয়েছেন। এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, চৌর্যবৃত্তির যে অভিযোগ এবং যে সাজা হয়েছিল, তা উনার বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে করা হয়েছিল। উনি চৌর্যবৃত্তি করেননি, তা প্রমাণ হয়েছে।”

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সামিয়া রহমান এবং অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘আ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: এ কেইস স্ট্যাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ শিরোনামের আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ’ জার্নালে প্রকাশিত হয়।

সেটি ১৯৮২ সালের শিকাগো ইউনিভার্সিটির জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’তে প্রকাশিত ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নামের একটি নিবন্ধ থেকে প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠার ‘হুবহু নকল’ বলে অভিযোগ ওঠে।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এক লিখিত অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ওই অভিযোগ জানিয়েছিল ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস।

শুধু মিশেল ফুকোই নন, বুদ্ধিজীবী এডওয়ার্ড সাঈদের ‘কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম' বাই থেকেও সামিয়া ‘নকল করেন’ বলে অভিযোগ ওঠে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরিন আহমেদকে প্রধান করে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। দীর্ঘদিন অনুসন্ধান শেষে গত বছর ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়।

কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুই শিক্ষকের বিষয়ে অ্যাকাডেমিক অপরাধের শাস্তির সুপারিশ করতে আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে আহ্বায়ক করে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল।

ট্রাইব্যুনাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে শাস্তির বিষয়ে সুপারিশ করলে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি সিন্ডিকেটের সভায় পদাবনতির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে হাই কোর্টে মামলা চলার মধ্যেই সামিয়া রহমান অবসর চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন। তবে সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত এখনও জানা যায়নি।

পুরনো খবর:

Also Read: সামিয়া রহমানের পদাবনতির সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ নয়: হাই কোর্ট

Also Read: অবসরের আবেদন ঢাবি শিক্ষক সামিয়া রহমানের

Also Read: আমাকে ফাঁসানো হয়েছে: সামিয়া

Also Read: গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি: সামিয়া রহমানের পদাবনতি

Also Read: ঢাবি শিক্ষক সামিয়া-মারজানের চৌর্যবৃত্তি ‘প্রমাণিত’