“আদালত তাদের নির্দেশ দিয়েছে, আমরা আমাদের দিক থেকে আদালতের নির্দেশের কপি হাতে পাওয়ার পর থেকে আমাদের যেটুকু ক্ষমতা আছে, আমরা সেই ক্ষমতাটুকু কাজে লাগাব।”
Published : 29 Aug 2023, 04:37 PM
আদালতের নির্দেশনা হাতে পাওয়ার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সব বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরাতে পদক্ষেপ নেবে সরকার।
এজন্য নিজেদের ক্ষমতা কাজে লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে তারেকের বক্তব্যের কনটেন্ট সরাতে সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্মগুলোকে অনুরোধ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সচিবালয়ে মঙ্গলবার অনলাইনের মাধ্যমে আর্থিক প্রতারণা এবং অবৈধ ও যাচাইবিহীন আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এসব কথা বলেন মোস্তাফা জব্বার।
তারেক রহমানের সম্প্রতি দেওয়া সব বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরাতে সোমবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত রুল শুনানির মধ্যে বাদীপক্ষের এক সম্পূরক আবেদনে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, “ডিজিটাল দুনিয়ায় কোনটা তালা মেরে দেওয়া সম্ভব আর কোনটা খোলা থাকে, সে বিষয়টি আরও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করতে হবে।
“আদালত তাদের নির্দেশ দিয়েছে, আমরা আমাদের দিক থেকে আদালতের নির্দেশের কপি হাতে পাওয়ার পর থেকে আমাদের যেটুকু ক্ষমতা আছে, আমরা সেই ক্ষমতাটুকু কাজে লাগাব।”
মন্ত্রী বলেন, “আদালতের নির্দেশ অনুসারে যেসব প্ল্যাটফর্ম থেকে কনটেন্ট সরানো দরকার আমরা তাদেরকে জানাব যে, আদালত তোমাদেরকে বলেছে এই কনটেন্ট সারানোর জন্য।
“আমাদের অভিজ্ঞতা যেটুকু সেটুকু হচ্ছে আদালত যদি বলে কনটেন্ট সারাতে হবে সচরাচর সোশ্যাল মিডিয়া যে কয়টা আছে তারা এগুলোকে অস্বীকার করার মত মানসিকতায় চলে না। যতটুকু সম্ভব তারা আদালতকে সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করে।”
বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ১৫ বছর ধরে পরিবার নিয়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। এর মধ্যেই তারেকের বিরুদ্ধে পাঁচ মামলায় সাজার রায় এসেছে।
সাড়ে আট বছর আগে বাংলাদেশের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য তারেককে নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়। সেই প্রেক্ষাপটে ‘আইনের দৃষ্টিতে পলাতক’ থাকা অবস্থায় তার বক্তব্য বা বিবৃতি সব ধরনের গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ নিষিদ্ধ করে হাই কোর্ট।
আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকী লিনার রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ রুলসহ ওই অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেয়।
সম্প্রতি নয়া পল্টনে বিএনপির এক সমাবেশে তারেক রহমানের ভিডিও বক্তব্য প্রচার করা হলে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। রিটকারী পক্ষ তখন হাই কোর্টের সেই রুল শুনানির উদ্যোগ নেয়।
তারেকের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে হাই কোর্ট রুল জারি করেছিল ওই সময়। রুলে তথ্য ও স্বরাষ্ট্র সচিবকে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছিল।
তারেক রহমানের বক্তব্য অনলাইন থেকে সরানোর নির্দেশ প্রত্যাখ্যান বিএনপির
তারেক রহমানের বক্তব্য অনলাইন থেকে সরানোর নির্দেশ, আদালতে হট্টগোল
রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে বলে ওই সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন।
চার সপ্তাহের মধ্যে তথ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিটিভির মহাপরিচালক, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, একুশে টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও তারেক রহমানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল।
একইসঙ্গে তারেক রহমানের বিদেশে অবস্থানের ওই সময়ের অবস্থা জানাতে পররাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। পুলিশ মহাপরিদর্শককে তারেকের পাসপোর্টের মেয়াদ জানিয়ে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল, সেজন্য সময় দেওয়া হয়েছিল ৩০ দিন।
কিন্তু তারেক রহমানকে এ বিষয়ে নোটিস পাঠানো যায়নি বলে সাড়ে আট বছরেও রুলের ওপর শুনানি শুরু করা যায়নি।
নোটিস পাঠাতে গিয়ে দেখা যায়, রিট আবেদনে তারেক রহমানের ঠিকানার এক জায়গায় ‘রোড’ এর জায়গায় ‘রুম’ লেখা হয়েছিল। ভুল থাকায় নোটিস তিনি পাননি।
আদালত তখন ঠিকানা সংশোধন করে নোটিস পাঠাতে বলে; একই সঙ্গে ফ্যাক্স বা ই-মেইলেও যে নোটিস পাঠানো যায়, সে কথাও বলে।
এরপর নিয়ম অনুযায়ী তারেকের ঠিকানায় নোটিস পাঠানো হয়। এরপর মামলাটি শুনানির জন্য প্রস্তুত হয়। গত ২২ অগাস্ট রুল শুনানির জন্য কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্তির নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।
অ্যাডভোকেট নাসরিন সিদ্দিকা লিনা রোববার তারেক রহমানের সব বক্তব্য সব মাধ্যম থেকে সরানোর নির্দেশনা চেয়ে একটি সম্পূরক আবেদন করেন। সে বিষয়ে শুনানি করে সোমবার আদেশ দেয় আদালত।