রাজনীতিতে তৃণমূল থেকে উঠে এসে সংসদে স্পিকারের পদ পেরিয়ে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করে বিদায় নিতে চলেছেন মো. আবদুল হামিদ। বঙ্গভবন থেকে বিদায় নিয়ে কী করবেন না, তা তিনি জানালেন এক অনুষ্ঠানে।
রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, অবসর নিয়ে এমন কিছু করবেন না, যাতে দেশের মানুষের সম্মান ক্ষুন্ণ হয়।
টানা দুই মেয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের আগামী ২৩ এপ্রিল বঙ্গভবনে তার মেয়াদ পূর্ণ করবেন। এরপর নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দায়িত্ব নেবেন।
রাষ্ট্রপতি পদে আর ৪২ দিন রয়েছেন জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, “আমার ভালো লাগছে যে আমি সম্মানজনকভাবে বিদায় নিতে পেরেছি। এজন্য আমি কৃতজ্ঞ।”
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে আসীন থেকে অবসরের পর আর কোনো পদ নেওয়া উচিৎ নয় বলে মত জানান তিনি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমাদের দেশে এরকমও আছে, রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে দেখা গেল আবার মন্ত্রী হযেছেন। আবার রাষ্ট্রপতির থেকে মন্ত্রী হওয়ার পর শুধু এমপিগিরিও করছেন। দেখা গেল কেউ এমপি নির্বাচনে নমিশেন না পেয়ে উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যানে দাঁড়ায় গেল। হায়াত থাকলে হয়ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদেও দাঁড়িয়ে যেত।
“এটা হওয়া উচিৎ নয়। আমি যে অবস্থাতে চলি না কেন, এদেশের মানুষের সম্মান ক্ষুণ্ন হোক, এমন কোনো কাজে যাব না।”
রাষ্ট্রপতি পদে আসীন ব্যক্তিদের এই পদের একটা মর্যাদা রাখা উচিৎ বলেও মন্তব্য করেন আবদুল হামিদ।
“এখান থেকে রেবিয়ে আর কিছু তার করা ঠিক নয়। আমি বিশ্বাস করি, দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে যত লোভনীয় কিছু হোক না কেন, সেখানে তার কোনো অবস্থাতেও যাওয়া ঠিক নয়। এটা করা হলে তা দেশের মানুষকে অপমান করা হবে। বেইজ্জতি করা হবে।”
অবসর নেওয়ার পর ঢাকার নিকুঞ্জের বাড়িতে থাকার ইঙ্গিত দেন আবদুল হামিদ, সেখানে সাংবাদিকদের যাওয়ারও আমন্ত্রণ জানান তিনি।
“মাঝে মধ্যে কেউ এলে আমার সময়টা ভালো কাটবে। আর এখনকার মতো তখন তো এই আসা যাওয়ার বাধাটা থাকবে না। একেবারে ফ্রি স্টাইল হয়ে যাবে। আমিও আপনাদের মতো হয়ে যাবো। সমস্যা থাকবে না।”
বঙ্গভবনের এই আয়োজনে আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের জন্য নৈশভোজের ব্যবস্থা ছিল। রাষ্ট্রপতি দরবার হলের অনুষ্ঠানস্থলে এসে ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে কথা বলেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে নিজের দীর্ঘদিনের কর্মসম্পর্ক নিয়ে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি বলেন, “বরাবরই সাংবাদিকদের সঙ্গে আমার একটা সুসম্পর্ক ছিল। বিশেষ করে আমি যখন ডেপুটি স্পিকার ছিলাম এবং শেষে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করা পর্যন্ত আপনাদের সঙ্গে আমার খুবই আন্তরিক সম্পর্ক ছিল।”
সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, “সারাজীবন সততার সাথে রাজনীতি করেছি, ৬৪ বছরের জীবনে সাংবাদিকদের কাছ থেকে আমার জন্য নেগেটিভ কিছু পাইনি, অনেক সহযোগিতা পেয়েছি; সংবাদ কর্মীদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
“হাওর এলাকার কিছুটা পরিবর্তন আনতে পেরেছি। কোনো সরকারের আমলেই ব্যক্তির জন্য কিছু চাইনি। প্রতিটি রাজনীতিবিদ যদি এরকম মন-মানসিকতা পোষণ করেন, তাহলে অবশ্যই এলাকার উন্নয়ন হবে।”
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মধ্য থেকে আবেদ খান, ফরিদা ইয়াসমিন, শ্যামল দত্ত বক্তব্য রাখেন।