পথ আটকে থাকা মানুষজনকে সরিয়ে, ধাক্কা দিয়ে এগোতে হয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের।
Published : 20 Feb 2023, 02:22 AM
একের পর এক ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যখন আসছে, তখন আগুন নিয়ন্ত্রণের আগেই পেরোতে হচ্ছে ভিড়ের বাধা; সামলাতে হচ্ছে জড়ো হওয়া উৎসাহীদের জটলা।
রোববার রাজধানীর গুলশানে বহুতল ভবনে প্রাণহানির ঘটনার রাতে আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের কাজের সময় পুলিশ অনবরত হুইসেল বাজিয়েও ভিড় কমাতে হিমশিম খাচ্ছিল।
রাতের বেলা চারদিকে তখন ফায়ার ইঞ্জিনের গর্জন। ভিড় সামলাতে অনবরত হুইসেল বাজাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। এর মধ্যেই ‘সরেন সরেন’ চীৎকার করতে করতে পথ আটকে থাকা মানুষজনকে ধাক্কা দিয়ে, ভিড় ঠেলে চলতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের।
বহুতল ভবনটির ভেতরের আগুন নেভাতে এভাবেই কখনও পাইপ হাতে ছুটছেন পানি নিয়ে; আবার কখনও আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সের পানে ছুটছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
এরমধ্যেই চারদিকে টিভি চ্যানেল আর মোবাইল ফোন হাতে ‘সৌখিন ভিডিওগ্রাফারদের’ জটলা। ক্যামেরাগুলো ভিড়ের মাঝে সাক্ষাৎকার দেওয়ার লোক খুঁজে বেড়াচ্ছে।
ঢাকার গুলশানে ওই বহুতল আবাসিক ভবনে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডে একজনের মৃত্যু হয়; আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১০ জন, যাদের মধ্যে তিনজনকে ভর্তি করা হয়েছে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।
রোববার সন্ধ্যা ৭টায় গুলশান-২–এর ১৩ তলা ওই ভবনে আগুন লাগার পর চার ঘণ্টার চেষ্টায় তা নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। একটি শিশুসহ মোট ২২ জনকে তারা সেখান থেকে জীবিত উদ্ধার করেন।
ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট সেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। পরে তাদের সাথে যোগ দেয় বিমান বাহিনীর দুটি ইউনিট। রাতে উদ্ধার কাজে সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা জানানো হয় আইএসপিআরের তরফ থেকে।
ভয়াবহ এ আগুনের খবরে সেখানে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মাইন উদ্দিনও জানালেন, ভিড় সামলাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে তাদের।
“আমি জনগণের উদ্দেশ্যে বলব ক্রাউড কন্ট্রোল আমাদের এতকষ্ট দিয়েছে যে আমাদের কাজ করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। আমরা কাজ করেছি। কিন্তু উৎসুক জনতা খুবই মুশকিল হয়ে উঠেছিল,” বলেন তিনি।
ঘটনাস্থলে লোকজন নিয়ে মেয়রসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিত হতে দেখা যায়। ঘটনাস্থলে জনপ্রতিনিধিদের এমন উপস্থিতি কাজের ব্যাঘাত ঘটায় কি না প্রশ্ন করা হলে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলছেন, “আসলে প্রত্যেকেই প্রত্যেকের জায়গা থেকে রেসপন্সিবল, এজন্য হয়তো আসেন। আসাটাকে আমরা ডিসকারেজ করছি না, আমি বলব ক্রাউড কন্ট্রোল ইজ এ প্রবলেম। বাট নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের তো আসতে হবে।”
আগুন লাগা ওই ১২ তলা ভবনের ফ্ল্যাটগুলো সব ডুপ্লেক্স। এখানকার বাসিন্দারা সব প্রতিষ্ঠিত মানুষজন, যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বেও রয়েছে।
আগুন লাগার পরপর পুলিশ কিছুক্ষণ রাস্তা আটকে রাখলেও পরে হুড়মুড় করে কিছু ব্যক্তি ঘটনাস্থলে ঢুকে পড়ে। ভবনটিতে ঢোকার মূল ফটকে ভিড় করে ছবি তুলতে থাকেন অনেকেই।
ওই সময় ভবন থেকে বের হওয়া বাসিন্দারা বিভিন্ন জায়গায় জড়ো হয়ে তাদের অন্য স্বজনদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সেখানেও উৎসুক জনতা মুঠোফোন নিয়ে ঘিরে ধরে তাদের। অনেকগুলো পরিবার পাশের ভবনের আঙিনায়, আবার কেউ কেউ মানারাত স্কুলের ভেতরে ঢুকে পড়েন।
আশরাফ আলী নামের একজন দোকানকর্মী ফেইসবুকে লাইভ করছিলেন। তিনি জানান, দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার সময় ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েছেন। ফেইসবুকে নতুন পেইজ খুলেছেন, সেখান থেকে ‘লাইভ’ করছেন। বিদেশে থাকা আত্মীয়-বন্ধুদের অনেকেই আগুনের খবর জানতে চাচ্ছে দেখে তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানান।
প্রায় চার ঘণ্টা পর আগুন রাত ১১টার দিকে নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে রাত ১২টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক মাইন উদ্দিন।
তিনি জানান, “পরে পুরো ভবন তল্লাশি করে আর কাউকে পাওয়া যায়নি। লিফটের শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি আমরা।”
সন্ধ্যা ৭টায় মানারাত স্কুলের পাশে ওই ভবনের সপ্তম তলার দিকে আগুন লাগে। কয়েক ধাপে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের ১১৪ জন কর্মী সেখানে উদ্ধার কাজে যোগ দেন।
আগুন ছড়িয়ে পড়লে ভবনের বিভিন্ন তলায় অনেকে আটকা পড়েন। আগুন থেকে বাঁচতে ব্যালকনি থেকে কয়েকজনকে লাফিয়ে নিচে নামতে দেখা যায়।