শিশুদের পাশাপাশি নানা বয়সীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
Published : 14 Apr 2024, 07:46 PM
গান, কবিতা আর ছবি এঁকে বাংলা নতুন বছর বরণ করল শিশু একাডেমি, বাংলা একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমি। আরও ছিল পুঁথিপাঠ, লালন সংগীত, নৃত্য, ঢাকের বাদ্য ও বক্তৃতা।
রাজধানীর বর্ষবরণ আয়োজনে উদ্দীপনা ছড়িয়েছে এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের আয়োজন। শিশুদের পাশাপাশি নানা বয়সীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানে যুগিয়েছে প্রাণ।
শিশু একাডেমি
রোববার ঢাকার শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণে 'বৈশাখের রং লাগাও প্রাণে' শিরোনামে উন্মুক্ত ক্যানভাসে ছবি আঁকা উদ্বোধন করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ।
এরপর ক্যানভাসে ছবি আঁকেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী ইনাম এবং মহাপরিচালক আনজীর লিটন। শিশুরাও আঁকে বৈশাখের ছবি।
বৈশাখ বরণ উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কবি নির্মলেন্দু গুণ তার বক্তব্যে শৈশবের পহেলা বৈশাখের স্মৃতিচারণ করেন।
কবি বলেন, তার শৈশবের বৈশাখে নতুন পোশাক পরে বর্ষবরণ উদযাপনের সামর্থ্য ছিল না। সামর্থ্য না থাকলেও সেসময় তাদের আনন্দেরও কোনো কমতি ছিল না।
পরে একাডেমির উন্মুক্ত চত্বরে বৈশাখের গান ‘এসো হে বৈশাখ' পরিবেশন করে প্রতিষ্ঠানটির প্রশিক্ষণার্থী শিশু শিল্পীরা।
বাংলা একাডেমি
নববর্ষ বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করেছে বাংলা একাডেমি। রোববার সকাল ৮টায় একাডেমির রবীন্দ্র-চত্বরে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠান হয়।
শুরুতে বাংলা একাডেমির সাবেক সভাপতি ও মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের প্রয়াণবার্ষিকী স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সাংস্কৃতিক সংগঠন সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীদের পরিবেশনায় জাতীয় সংগীত এবং বর্ষবরণের রবীন্দ্রসংগীত ও নজরুলগীতির মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল আয়োজন।
স্বাগত বক্তব্যে একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, “নববর্ষ আমাদের মঙ্গলপ্রভাতে যাত্রার কথা বলে। পাখির ডাক, ফুলের ডাক; এই মিলে পহেলা বৈশাখ।
“রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের আগে বাংলাদেশের বাঙালি যে সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা অর্জন করে- তার মূলে অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে বাংলা নববর্ষ ঘিরে আবির্ভূত মাঙ্গলিক উৎসব-অনুষঙ্গ।”
বাঙালির নববর্ষ বাঙালির জাতি-চেতনা শিরোনামে ‘নববর্ষ বক্তৃতা ১৪৩১’ দেন একাডেমির ফেলো ড. নূহ-উল-আলম লেনিন।
তিনি বলেন, “১৯৮৬ সাল থেকে রমনাকেন্দ্রিক জাতীয় অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়েছে মঙ্গল শোভযাত্রা, যা ইউনেস্কো মানবজাতির মননশীল উত্তরাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
“...নববর্ষ উদযাপন এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক হয়ে উঠেছে। আর এভাবে উৎসবে, আনন্দে, সৃজনশীলতায়, বাঙালি জাতিসত্তার নতুন পরিচয়কে তুলে ধরছে- মহিমান্বিত করছে।"
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, “বাংলা নববর্ষ বাঙালির প্রাণচেতনার প্রতীক। বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশে বাংলা নববর্ষ উৎসব বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। এবারের নববর্ষে আমাদের প্রত্যয় হোক সর্বমানবের সামগ্রিক মঙ্গল।”
শিল্পকলা একাডেমি
সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে লোকসাংস্কৃতিক পরিবেশনা। একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে আয়োজিত বর্ষবরণের আলোচনায় প্রধান আলোচক ছিলেন গবেষক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক।
সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্বের পর শুরু হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। শুরুতেই পরিবেশিত হয় সমবেত সঙ্গীত ‘তুমি নির্মল করো, মঙ্গল করে’; পরিবেশন করে একাডেমির শিশু সঙ্গীত দল। পরিচালনায় ছিলেন মুহাম্মদ আনিসুর রহমান।
এরপর সমবেত ‘নৃত্য এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ পরিবেশন করে স্পন্দন নৃত্যদল, নৃত্য পরিচালনা করেন অনিক বোস। একাডেমির নৃত্যশিল্পী এস কে জাহিদের পরিচালনায় সমবেত ঢাক নৃত্য পরিবেশন করে একাডেমির প্রতিশ্রুতিশীল নৃত্যদল।
এরপর একাডেমির বিশেষ পরিবেশনা কালচারাল হেরিটেজ অনুষ্ঠিত হয়। শিশু নৃত্যদল পরিবেশন করে সমবেত নৃত্য ‘আমরা সুন্দরের অতন্দ্র প্রহরী’।
সবশেষে একাডেমির শিশু সঙ্গীত দল পরিবেশন করে সমবেত সঙ্গীত ‘এসো হে বৈশাখ এসো, এসো’।