বিএনপি ছাড়াও অনেক দল আছে, যারা নির্বাচনে অংশ নেবে বলে জানান তিনি।
Published : 24 May 2023, 09:33 PM
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার সমুন্নত রেখে আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবেই অনুষ্ঠিত হবে।
বুধবার দোহার একটি হোটেলে কাতার ইকোনমিক ফোরামে (কিউইএফ) ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাপন’ শীর্ষক অধিবেশনে তিনি এ কথা বলেন বলে জানিয়েছে বাসস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সরকারের অধীনে নির্বাচন অবশ্যই ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার হবে।”
ফোরামের এডিটর ইনচার্জ হাসলিন্দা আমিনের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “জনগণই ঠিক করবে কে দেশ চালাবে, এটা জনগণের ক্ষমতা। সুতরাং আমি জনগণের ক্ষমতা নিশ্চিত করতে চাই।
“আমি ক্ষমতা দখলের জন্য আসিনি; বরং আমি জনগণকে ক্ষমতায়ন করতে চাই, যাতে তারা তাদের সরকার গঠন করতে পারে।”
কয়েকটি দল যে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় না, সে কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তারা কীভাবে অংশ নেবে? কারণ তাদের সময় দেশ অনেক ভুগেছে… আমাদের জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সে সময় (বিএনপির শাসনামলে) সন্ত্রাস, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও শোষণ ছিল সবখানে। তারা কখনই মানুষকে বুঝতে চাইত না।
“আমাদের জনগণের জন্য দিনে একবেলা খাবার জোটানোই খুব কঠিন ছিল। এটাই ছিল তাদের সময়ের অবস্থা।”
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তার দল ক্ষমতায় ফিরে এসে জনগণের জন্য ‘সবকিছু’ নিশ্চিত করেছে।
“নির্বাচন জনগণের অধিকার। তারা যদি আমাদের ভোট দেয়, আমি এখানে (সরকারের নেতৃত্বে) থাকব।”
অনেক উন্নত দেশেও যে পরাজিতরা ভোটের ফল মানতে চায় না, সেই প্রসঙ্গ ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথাই চিন্তা করুন, মি. ট্রাম্প এখনও ফলাফল মেনে নেননি। তারা এখন কী বলতে পারেন?”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনে যারা পর্যবেক্ষক পাঠাতে চায়, তাদেরকে পাঠাতে বলা হয়েছে।
“সুতরাং আমি আপনাকে বলতে পারি, আমি আমার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারে এসেছি এবং এটা আমাদের সংগ্রাম।”
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে না হলে নির্বাচনে না যাওয়ার যে ঘোষণা বিএনপি দিয়েছে, সে বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে সরকারপ্রধান বলেন, “দলটি এক সামরিক শাসকের হাতে গঠিত হয়েছে। ওই দল, যুদ্ধাপরাধীর দল বা আমাদের মা-বাবার খুনিরা হয়ত (ভোটে অংশ নিতে) স্বস্তি বোধ করবে না। কিন্তু অন্যরা, আরও অনেক দল আছে- তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। সুতরাং আমি বুঝতে পারছি না এই প্রশ্ন কেন বারবার করা হচ্ছে?”
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে যখন তার বাবাকে হত্যা করা হয়, তখন সামরিক স্বৈরশাসক ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে চরম ঝুঁকিতে ফেলে।
সে সময় দীর্ঘদিন বিদেশে নির্বাসনে কাটাতে হয় শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাকে। পরে ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করে। পরে দেশে ফিরে তিনি দলের হাল ধরেন।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “তখন থেকেই আমরা গণতন্ত্রের জন্য, জনগণের ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম শুরু করি।”
আইএমএফের কাছ ঋণ নেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি সুন্দরভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। এমন নয় যে, আমাদের অর্থনীতি সংকটে আছে।… এই ঋণ কেবল আমাদের অর্থনীতিকে সুরক্ষিত করবে।“
শেখ হাসিনা বলেন, আইএমএফ কেবল সেই দেশকে ঋণ দেয়, যারা ঋণ পরিশোধ করতে পারে।
“তারা (আইএমএফ) প্রথমেই দেখে যে- তারা যাদের ঋণ দিচ্ছে, তারা তা ফেরত দিতে পারবে কি না। বাংলাদেশ এমন একটি অবস্থানে রয়েছে যে ঋণ পরিশোধ করতে পারবে।”
জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, “দাম যে কেবল বাংলাদেশেই বেড়েছে- এমন নয়, সব দেশেই বেড়েছে। আমরা আমাদের অগ্রগতি ধরে রাখতে নবায়নযোগ্য শক্তি, সৌর বিদ্যুৎ ও অন্যান্য বিকল্প খুঁজছি।”
হাসলিন্দা আমিন প্রশ্ন করেন, ভারতের মত দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে অনেক কম দামে তেল কিনছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও রাশিয়া সরবরাহকারী হতে পারে কি না?
শেখ হাসিনা বলেন, “রাশিয়া থেকে আমরা কখনোই তেল কিনিনি। যেখানেই তেল পাওয়া যাবে, নিশ্চিতভাবেই আমরা তা নেব, কেন নয়?”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের পররাষ্ট্রনীতি খুবই স্পষ্ট। আমি দর্শকদের কেবল বলতে চাই যে, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’-নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ।
“আরেকটা বিষয় আমি বলতে চাই, দেশে দেশে বিরোধ থাকতে পারে, কিন্তু আমরা কখনোই এতে নাক গলাইনি। আমরা কখনোই পক্ষপাতমূলক ভূমিকায় যাব না।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দেশের উন্নয়ন করতে হবে। আমাদের জনগণের চাহিদা পূরণ করতে হবে। আমাদের দেশের উন্নয়ন করতে হবে- যাতে আমাদের দেশের মানুষ উন্নত জীবন পায়।”