জিয়াউর রহমান যেভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন, সেই ‘অবৈধ’ উপায়ে যাতে আর কেউ ক্ষমতায় না আসতে পারে-সেজন্যই সংবিধান সংশোধন করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, “আমি ধন্যবাদ জানাই, আমাদের উচ্চ আদালত-তারা এইভাবে অবৈধ ক্ষমতা দখলকে অবৈধই ঘোষণা করেছে। শুধু তাই না, একটা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আরেকটা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির হাতেই ক্ষমতা হস্তান্তর করবে; এর বাইরে কেউ সরকারে আসতে পারবে না, আসলে তাদের সাজা হবে।
“হাই কোর্টের সেই রায় অনুযায়ী আমরাও সংবিধান সংশোধন করি, আমাদের সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে হাই কোর্টের রায় অনুযায়ী আমরা তা সংশোধন করেছি গণতন্ত্রকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য।”
মঙ্গলবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ ১০ হাজার ৪১টি স্থাপনা ও ঘরের উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সরকারপ্রধান।
২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর ক্ষমতায় থাকার পর নির্বাচন হলে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তখন থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। পরে ২০১১ সালের মে মাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
পরে ওই বছরের জুন মাসে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করা হয়। পাশাপাশি অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের জন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ বিবেচনায় সর্বোচ্চ দণ্ডের বিধান রাখা হয় এ সংশোধনীতে।
শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে বাংলাদেশের যে ভোট নিয়ে খেলা, তার (জিয়াউর রহমান) সেই হ্যাঁ-না ভোটের ইতিহাস সেখানে নাই, বাক্সই কেউ পায়নি। একাধারে সেনাপ্রধান, রাষ্ট্রপতি আবার সংবিধান লংঘন করে নির্বাচন, নির্বাচনে একশ (শতাংশের) উপরে ভোট ছিল।
“ক্ষমতায় বসে দল গঠন করে সেই দলকে জিতিয়ে যে সংবিধানকে মার্শাল ল’ দ্বারা সংশোধন করেছিল, সেইগুলিকে বৈধতা দেওয়ার জন্য জাতীয় সংসদে ভোট চুরির যে কালচার, ডাকাতির যে কালচার- সেই কালচারটা শুরু করে। এবং জনগণের ভোট কেড়ে নিয়ে সেই পার্লামেন্ট তৈরি করে।”
বঙ্গবন্ধুকন্যার জ্যেষ্ঠকন্যা বলেন, “আমি জানি ঘাতকের দল যেকোনো সময় আমাকেও আঘাত করতে পারে, কিন্তু ওই বিষয়ে আমি কোনোদিন কোনও চিন্তাও করিনি, ভয়-ভীতি প্রশ্রয়ও দেইনি। আমার একটাই লক্ষ্য ছিল, যে লক্ষ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন, যে করেই হোক স্বাধীনতার সুফল বাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে, ভাগ্যের পরিবর্তন করতে হবে।"
স্বাধীনতার সুফল বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে নিজের লড়াইয়ের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “সেই প্রত্যয় নিয়ে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে আমাকে চলতে হয়েছে। আমি নিজের চোখে দেখেছি, আমার উপর গুলি বোমা হামলা; কিন্তু আমি এগুলো পাত্তাই দেইনি। যে লক্ষ্য নিয়ে আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছিল, সেই লক্ষ্য পূরণ করা; মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ এগুলোকে মোকাবেলা করে আমরা বাংলাদেশকে এ পর্যায়ে এগিয়ে নিয়ে এসেছি।
“আজকে আমরা যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে আর বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারের ধারাবাহিকতাটা প্রয়োজন। রাতের অন্ধকারে কেউ ক্ষমতা দখল করে জনগণের ভাগ্য নিয়ে কেউ যাতে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। এ দেশটাকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।"
দু-একদিনের মধ্যেই তফসিল
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল দুই-একদিনের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, “আজকে যেহেতু আমাদের নির্বাচনে ঘনিয়ে এসেছে, হয়তো দু-একদিনের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তারিখ সময় ঘোষণা দেবে। আজকে আমরা এজন্যই এখানে উপস্থিত হয়েছি যেহেতু ডিজিটাল সুবিধা আছে- যে কাজগুলো আমরা করলাম সেগুলো উদ্বোধন করতে।"
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এবার আমরা যেটুকু কাজ করেছি, সেটুকু উদ্বোধন করব এই হলো বাস্তবতা; সেজন্য আজকের এই আয়োজন। যেগুলো বাকি আছে, সেগুলো অন্তত করে দিয়ে যাই। আর তারপরে যখন ইলেকশন হবে, জনগণ যদি নৌকা মার্কায় ভোট দেয়- আবার আসব; আর না দিলে আমার কোনও আফসোস থাকবে না। কারণ আমি তো দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় নিয়ে এসেছি- এটুকু করতে পেরেছি।
“জনগণের ভোটের অধিকার আমরাই নিশ্চিত করেছি। কাজেই জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দেবে, অনেকে নির্বাচনে আসতে চায় না। আপনারা বলেন, ত্রিশটা সিট যারা পেয়েছিল, তাদের জন্য তো নির্বাচনে আসার-আকাঙ্ক্ষায় থাকবে না; নির্বাচন বানচাল করে একটা অস্বাভাবিক পরিচিতি সৃষ্টি করে আবার বাংলাদেশের মানুষকে ভোগান্তি দেওয়া- এটাই তাদের চেষ্টা।
“আমি জানি এদেশের মানুষ শান্তিতে ছিল, স্বস্তিতে ছিল উন্নয়নটা দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল; ঠিক সেই সময় আবার এই অবরোধ আর অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও, আগুন দেওয়া, বাসে আগুন, গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত করা হচ্ছে।…দেশবাসীকেও বলব এই অগ্নি সন্ত্রাস আপনাদেরও প্রতিরোধ করতে হবে; কারণ সকলেরই জানমাল আছে।”