বিদেশে অর্থপাচার মামলায় যুবলীগের কথিত নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমসহ আট জনের ১২ বছরের কারাদণ্ড চেয়ে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অস্ত্র আইনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া শামীম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের এ মামলার অভিযোগ ‘প্রমাণ করা গেছে’ বলেও মনে করছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
সোমবার ঢাকার বিশেষ জজ মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের আদালতে এই দাবি তুলে ধরেন আইনজীবী মাহবুবুল হাসান। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তার শুনানি করার কথা ছিল। তবে অসুস্থ থাকায় সেদিন তিনি সময় চান।
আগামী ১৫ মার্চ এই মামলায় আসামিদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু হবে জানিয়ে মাহবুবুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগামী মে মাসে এ মামলার রায় হবে বলে আশা করছি।“
জি কে শামীম ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন: দেলোয়ার হোসেন, মোরাদ হোসেন, জাহিদুল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম, কামাল হোসেন, সামসাদ হোসেন ও আনিছুল ইসলাম।
গত ১৭ জানুয়ারি আত্মপক্ষ শুনানিতে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ‘ন্যায়বিচার’ প্রার্থনা করেন। নয় দিন পর ২৬ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করে।
গত ২১ ডিসেম্বর মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এর আগে অভিযোগপত্রে থাকা ২৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৩ জনের সাক্ষ্য নেয় আদালত।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলার সময় ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দুপুরে নিকেতনের বাসা থেকে শামীমকে আটক করা হয়। ওই ভবন থেকে নগদ এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, ৯ হাজার ইউএস ডলার, ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার ১০টি এফডিআর, ৩২টি ব্যাংক হিসাবের চেক বই, আটটি আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ পাওয়ার কথা জানানো হয় অভিযান শেষে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে জি কে শামীমের উত্থান হয়। তিনি নিজেকে যুবলীগ নেতা দাবি করলেও আওয়ামী লীগের এই সহযোগী সংগঠনটি তা অস্বীকার করে।
গ্রেপ্তারের সময় র্যাব সদরদপ্তর, সচিবালয়ে ও কয়েকটি হাসপাতালের নতুন ভবনসহ অন্তত ২২টি নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ শামীমের প্রতিষ্ঠান জিকে বিল্ডার্সের হাতে ছিল। এসব প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার কোটি টাকা। পরে সেগুলোর কার্যাদেশ বাতিল হয়। জব্দ করা হয় তার ১৯৪টি ব্যাংক হিসাব।
২১ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনে জি কে শামীমের বিরুদ্ধে মামলা করেন র্যাব-১ এর নায়েব সুবেদার মিজানুর রহমান।
মামলায় বলা হয়, শামীম তার দেহরক্ষীদের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের টেন্ডারবাজি, মাদক ও জুয়ার ব্যবসাসহ স্থানীয় টার্মিনাল, গরুর হাট-বাজারে চাঁদাবাজি করে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের মালিক হয়েছেন। বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশেও পাচার করেন তিনি।
তদন্ত শেষে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবু সাঈদ ২০২০ সালের ৪ আগস্ট আদালতে জিকে শামীম ও তার সাত দেহ রক্ষীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন। সেটি গ্রহণ করে ১০ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ আসে।
শামীমের বিরুদ্ধে মোট মামলার সংখ্যা তিনটি। এর মধ্যে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর অস্ত্র আইনে সাত দেহরক্ষী ও তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। মাদক মামলার নিষ্পত্তি এখনও হয়নি।
আরও পড়ুন: