আমাকে ফাঁসানো হয়েছে: রায়ের পর জিকে শামীম

রায়ের পর শামীম বলেন, “আমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।”

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2022, 12:38 PM
Updated : 25 Sept 2022, 12:38 PM

অস্ত্র আইনের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ার পর নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ‘ফাঁসানোর’ অভিযোগ করেছেন বিতর্কিত ঠিকাদার এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম।

রায় শেষে কঠোর পুলিশি পাহারায় আদালত কক্ষ থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমি নির্দোষ। আমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।”

ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক শেখ ছামিদুল ইসলাম রোববার শামীমের পাশাপাশি তার সাত দেহরক্ষীকেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন । রায়ের পর আসামিদের আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

জি কে শামীমের স্ত্রী শামীমা সুলতানাও এদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সাজা হবে জানতাম। কিন্তু এতটা হবে বুঝিনি। আপিল করবেন আমাদের আইনজীবীরা।”

রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে শামীমের আইনজীবী শাহীনুর ইসলাম অনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার মক্কেলের ওপর অন্যায় করা হয়েছে। যে ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে সে ধারায় সাজা হয়নি। আমাকে তো চার্জ অলটারের বিষয় জানানো হয়নি।

“তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়েছে ১৯(ই) ধারায়, কিন্তু সাজা দেওয়া হয়েছে ১৯(এ) ধারায়। এই চার্জ কখন পরিবর্তন হল, তা আমরা জানি না।”

জি কে শামীমের অস্ত্রের লাইসেন্স আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সেই মর্মে অস্ত্রের মালিকানা সংক্রান্ত প্রমাণপত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করেছেন।

“অথচ তাকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ও অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। বাসা থেকে জব্দকৃত অস্ত্রের মাধ্যমে কীভাবে ভয়ভীতি দেখানো হল, তা আমাদের বোধগম্য নয়। তা ছাড়া কোনো সাক্ষীও আদালতে ভয়ভীতি দেখানোর বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।”

রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি দেখে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সালাহউদ্দিন হাওলাদার আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির রায় আসায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, “যে ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে সেই ধারাতেই রায় হয়েছে। ১৯(ই) ধারায় বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে চার্জগঠন হয়েছে। সেই ধারাতেই সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। এখানে চার্জ পরিবর্তন হয়নি, এ নিয়ে বিভ্রান্তির সুযোগ নাই।”

এদিন দুপুর ১টা বাজার মিনিট পাঁচেক আগে আসামিদের আদালতের কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। এর কয়েক মিনিট পরই জনাকীর্ণ এজলাসে ওঠেন বিচারক। দুই মিনিটের মধ্যে তিনি রায়ের সিদ্ধান্ত অংশ পড়ে শোনান।

রায়ে আট আসামি জিকে শামীম, দেহরক্ষী মো. জাহিদুল ইসলাম, মো. সহিদুল ইসলাম, মো. কামাল হোসেন, মো. সামসাদ হোসেন, মো. দেলোয়ার হোসেন ও মো. মুরাদ হোসেনকে ১৯৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯(ই) ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এ ছাড়া তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে একই আইনের ২১/২৩ ধারার অভিযোগ থেকে তাদের খালাস দেওয়া হয়।

আসামিদের মধ্যে মো. আমিনুল ইসলামকে অস্ত্র আইনের ১৯(এ)/১৯(এফ) ধারাতেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেন বিচারক।

আসামিদের কাছ থেকে জব্দকরা একটি পিস্তল, ৪৭ রাউন্ড গুলি, সাতটি শটগান, ৭৩টি কার্তুজ ও আটটি ফোন রাষ্ট্রের অনুকূলে জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত।

যুবলীগের সমবায় সম্পাদক হিসেবে পরিচয়দানকারী জি কে শামীমের পূর্ণ নাম এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম।

রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। গণপূর্ত ভবনে ঠিকাদারি কাজে তার দাপটের খবর বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মধ্যে ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর গুলশানের নিকেতনে শামীমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও অভিযান চালায় র‌্যাব।

অভিযানে ওই ভবন থেকে নগদ প্রায় দুই কোটি টাকা, পৌনে ২০০ কোটি টাকার এফডিআর, আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ পাওয়ার কথা জানানো হয় অভিযান শেষে।

তখনই শামীম ও তার সাত দেহরক্ষীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ২১ সেপ্টেম্বর তাদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় তিনটি মামলা করে র‌্যাব।

এর মধ্যে অস্ত্র ও মুদ্রা পাচার মামলায় সবাইকে আসামি করা হলেও মাদক আইনের মামলায় শুধু শামীমকে আসামি দেখানো হয়। প্রত্যেক মামলাতেই তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলায় তাদের বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিল আদালত। রাষ্ট্রপক্ষে মোট ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ২৮ অগাস্ট বিচারক রায়ের জন্য দিন ঠিক করে দেন।

২০১৯ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর এই প্রথম শামীমের বিরুদ্ধে কোনো মামলার রায় হল। তার বিরুদ্ধে মাদক ও মানি লন্ডারিং আইনেও মামলা রয়েছে।

আরও খবর:

Also Read: অস্ত্র মামলায় জি কে শামীম ও দেহরক্ষীদের যাবজ্জীবন