“আগে দেখতাম গ্রামের চায়ের দোকানে বা বাজারের মোড়ে কোনো বাউলশিল্পী গান করছে। এখন চায়ের দোকানে দেখি তামিল সিনেমা চলছে অথবা মোবাইল ফোনে গেম খেলছে। এটা স্বভাবিক বিবর্তন কিনা, তা নিয়ে আমাদের বিস্তর ভাবতে হবে।”
Published : 14 Apr 2024, 01:42 AM
‘ভাদুঘরের বান্নি’ এটি একটি মেলা; স্থানীয়দের কাছে এই নামেই পরিচিত। প্রতিবছর ১৪ বৈশাখ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাদুঘর গ্রামে তিতাস নদীর পাড়ে বসে ভাদুঘরের বান্নি। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষের হাঁকডাকে গমগম করে মেলা। প্রায় চরশ বছরের পুরনো এই ভাদুঘরের বান্নি শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়ারই নয়, দেশের বড় কয়েকটি মেলার একটি।
এই মেলা বা বান্নি ঘিরে গ্রামে উৎসবের আমেজ দেখা দেয় বৈশাখের শুরু থেকে। প্রচলিত আছে, একসময় এই বান্নিকে সামনে রেখে মেয়েরা শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ি বেড়াতে আসত। এখনও আসে, তবে চিড়া কোটা, মুড়ি ভাজা আর আগের মতো হয় না।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় ভাদুঘরের সংস্কৃতিকর্মী জামিনুর রহমান ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছ্নে এই মেলা। বাপ-দাদার মুখেও শুনেছেন এই মেলার কথা। তাই অল্প বয়স থেকে মেলাটির ইতিহাস জানার চেষ্টা করেছেন।
পঞ্চাশোর্ধ্ব জামিনুর বলেন, “ভাদুঘর নামে আমাদের এই গ্রামটিতে মুঘল আমলের একটি মসজিদ রয়েছে। গ্রামের হযরত সৈয়দ শাহ সোলাইমান ওসমান গণির মাজারও বেশ প্রাচীন। সাধারণ্যে ‘মাইজলা পীর’ নামে পরিচিত হযরত সৈয়দ শাহ সোলাইমান ওসমান গণিকে হযরত শাহজালালের সঙ্গে আসা ৩৬০ আউলিয়ার একজন বলে মনে করা হয়। এটা যদি ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণ করা যায়, তাহলে প্রায় সাতশ বছর আগে এখানে এসেছিলেন তিনি। এই পীরের মাজারকে ঘিরে মেলাটির প্রচলন হয়। মেলাস্থলটি মাজার থেকে খুব দূরে নয়। তবে মেলার দিনটিকে হিন্দুরা পবিত্র দিন বলে মনে করে। ওই দিন ভোরবেলায় হিন্দু ধর্মালম্বীদের তিতাস নদীতে পূণ্য স্নান করতে দেখা যায়।
“আমার ছোটবেলায় দাদাকে দেখেছি, বান্নি থেকে ঘরের প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে কাঁধে করে নিয়ে আসতেন। সকাল না হতেই প্রথমে গিয়ে কাঁঠাল কিনে আনা হত। অতিথিদের কাঁঠালের সঙ্গে চিড়া-মুড়ি দেওয়া হত। বান্নিতে কৃষি সামগ্রী বিক্রি হতো। গ্রামের প্রায় সবাই অপেক্ষায় থাকতেন বান্নি থেকে মাছ ধরার জাল, হাল চাষের লাঙল, হুক্কাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় নানা সামগ্রী কেনার জন্য। খাট, পালঙ্কও বিক্রি হয়েছে এ মেলায়।”
তবে গ্রামেও নগরায়ণের হাওয়া লাগায় বান্নির জন্য যে পরিমাণ উন্মুক্ত জায়গা দরকার, তা এখন অনেকটাই সংকুচিত হয়ে গেছে বলে বলে জানান জামিনুর।
“তাছাড়া ধর্মীয় একটা গোষ্ঠী মেলার বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটানোর কারণেও বান্নি নিয়ে সাধারণ মানুষের চিন্তা দ্বিধাবিভক্ত হচ্ছে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও লক্ষাধিক মানুষের সমাগম এই বান্নিকে দিয়েছে অনন্য প্রাণ।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বসবাসরত দেশের খ্যাতিমান গবেষক জয়দুল হোসেনের স্মৃতিতেও রয়েছে ছোটবেলায় দেখা ভাদুঘরের বান্নি।
“ভাদুঘরের বান্নি নিয়ে কোনো গবেষণা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। জনশ্রুতি আছে, এটি প্রায় ৪/৫শ বছর ধরেই হয়ে আসছে। আমরাও ছোটবেলা থেকেই এই বান্নি দেখে আসছি। দূরদূরান্তের মানুষ ওই বান্নিতে যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কবিদের কবিতাতেও এসেছে এই বান্নির কথা, বান্নি নিয়ে স্মৃতিকাতরতা।”
এক সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই অর্ধশতাধিক জায়গায় মেলা হত, যার কোনোটি হয়েছে বিলুপ্ত, কোনোটির পরিসর হয়েছে ছোট।
সংস্কৃতিকর্মী জামিনুরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভাদুঘরেই আরও দুটি বান্নি হত, যার একটি ‘কার্তিকমাইয়া বান্নি’ এখনও হয় বেশ ছোট পরিসরে। অন্যটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
“আমার বন্ধু লিটন দেব অনেক বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ঘুরে ঘুরে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন এবং সেটি নিয়ে ছোট একটি পুস্তিকাও প্রকাশ করেছিলেন, যেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫৪টি জায়গায় মেলা বা বান্নি হওয়ার তথ্য রয়েছে। সেই পুস্তিকাটি এখন আমার সংগ্রহে নেই। লিটন দেবও মারা গেছেন।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৈন্দ গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব বজলুর রহমান জানালেন, মূলত প্রত্যন্ত গ্রামে এখনও কিছু মেলা টিকে আছে। মজলিশপুর গ্রামে তিতাস নদীর পাড়ে, নন্দনপুর, সুহিলপুর, চান্দুরা গ্রামেও বান্নি হত। সুহিলপুরের তেলিপাড়ার বান্নি এখনো হয়, বাকাইল গ্রামেও হয়। তবে বান্নির পরিসর এখন সংকুচিত হয়েছে।
দেশজুড়ে হাজারের বেশি মেলা
১৯৯৭ সালে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত শিশুদের পত্রিকা ‘ধানশালিকের দেশ’ একটি বিশেষ সংখ্যা করেছিল বাংলাদেশের মেলা নিয়ে, যেখানে বছরজুড়ে বাংলাদেশে ১,২৯৩টি মেলা আয়োজনের তথ্য দেওয়া হয়েছিল। আর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ফাউন্ডেশন (বিসিক) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের মেলা’ নামের বইয়ে ১,৩৮৭টি মেলার তথ্য রয়েছে।
তবে দেশের কোথায় কতগুলো মেলা-বান্নি বা পার্বণ হচ্ছে, তার হালনাগাদ কোনো তথ্য নেই।
গবেষক সাইমন জাকারিয়া বলেন, “প্রায় তিন যুগ আগে লোকগবেষক মোহাম্মদ সাইদুরের একটি লেখা প্রকাশ হয়েছিল, সেই লেখাতে চার হাজারের মতো জায়গায় মেলার কথা উল্লেখ করেছিলেন এবং একটি তালিকাও প্রকাশ করেছিলেন। সেই লেখাটি ধরে পরে অনেকেই গবেষণার কাজ করেছেন। সাইদুরের দেওয়ার তথ্যের বাইরেও আরও অনেক জায়গার নাম আসে, যেখানে মেলা হয়।”
এখন দেশের অন্তত ৫ হাজারের বেশি জায়গায় মেলা হয় বলে জানান গবেষক ইমরান উজ-জামান।
তার ভাষ্য, “শুধু চৈত্র সংক্রান্তি আর বৈশাখ মাসেই আড়াই হাজারের বেশি জায়গায় মেলা হয়। সেসব মেলার পরিসর এখন অনেক জায়গায় সংকুচিত হচ্ছে।”
বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে ‘গণেশ হালুই বেঙ্গল ফেলোশিপ’ নিয়ে বর্তমানে ‘বাংলাদেশের মেলা’ বিষয়ক একটি গবেষণার কাজ করছেন ইমরান।
তিনি বলেন, “সাধারণত কোনো একটি বিশ্বাস বা রিচ্যুয়াল ঘিরেই লোক সমাগম বেড়ে সেটি মেলায় রূপ নেয়। ফলে মেলার দুইটা দিক দেখা যায়, যারা সেই বিশ্বাসকে আঁকড়ে থাকেন, তারা নানাভাবে তাদের কৃত্যগুলো করেন। আর সেই কৃত্যকে কেন্দ্র করে মেলা বা সমাগম হয়। অনেক জায়গায় মেলা বন্ধ হয়ে গেছে, কিন্তু মানুষ তাদের বিশ্বাস আঁকড়ে সেই রিচ্যুয়াল পালন করছেন।”
সাইমন জাকারিয়া বলেন, “সরকার থেকে যদি সব ইউনিয়ন পরিষদকে একটা চিঠি দেওয়া হয় যে, তাদের এলাকায় কী কী মেলা হয় এবং সেটি যেন ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়, তাহলে তথ্য পাওয়া সহজ হয়ে যাবে। উপজেলার মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি তালিকা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, পর্যটন মন্ত্রণালয়েরও প্রকাশ করা উচিত। কারণ অনেক বিদেশি বাংলাদেশে বেড়াতে এলে এসব মেলায় যেতে চান।”
কেন সংকুচিত হচ্ছে মেলা?
প্রতি বছরের মতো এবারও কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়েছে লালন স্মরণোৎসব। লালন একাডেমি প্রতিবছর তিন দিনব্যাপী এই উৎসব আয়োজন করলেও এবার রোজার কারণে তা সংক্ষিপ্ত করা হয়, বন্ধ রাখা হয় গ্রামীণ মেলা।
গবেষক সাইমন জাকারিয়া বলেন, “খবরে দেখেছি, প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় এবারের লালন স্মরণোৎসব আয়োজন সীমিত করা হয়েছে। সাধুসঙ্গ তো রমজানের বিপক্ষের কিছু নয়। সাধুরা তাদের মতো এই আয়োজন তো বছরের পর বছর ধরে করছে। ধর্মচর্চা মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়। এজন্য কি প্রশাসনের উপর নির্ভর করতে হবে? প্রতি সপ্তাহেই আমরা ‘ভাবনগর সাধুসঙ্গ’ আয়োজন করি। কারো তো কোনো সমস্যা হয়নি।”
সবাইকে সংস্কৃতির বোধ বোঝার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “অন্তত দুই হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আমাদের। সংস্কৃতি তো তার মতো করেই বহমান। সেখানে বাধা না দিলেই সেটি তার মতো করেই চলবে। এই যে শত শত জায়গায় মেলা হয়, সেটি তো পরিকল্পিতভাবে বানানো নয়। মানুষের জীবনাচারের মধ্য দিয়েই হয়েছে। পরে এসব মেলা তো অনেকের জীবিকার সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। কেউ কেউ হয়তো বছরের ওই মেলাকে কেন্দ্র করেই লোকজ নানা উপকরণের পসরা সাজায়। মেলা বন্ধ হলে তো তারা উপার্জনহীন হয়ে যায়।
“আমাদের সবারই বোঝার জায়গায় ঘাটতি আছে। রোজার কথা বলে সাধুসঙ্গ সংকুচিত করা বা মেলা বন্ধ করার মধ্য দিয়ে যে বার্তাটি যায়, সেটিতে মনে হবে এগুলো ধর্মবিরোধী। আদতে তো তা নয়। ধর্ম হচ্ছে ব্যক্তিগত বিশ্বাস, যার যার ধর্ম সে তার মতো পালন করবে। আর মেলা হচ্ছে সামষ্টিক মিলনকেন্দ্র। এগুলো সংকুচিত করা উচিত নয়।”
‘বাংলার গীতরঙ্গ’ বিষয়ে গবেষণা করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক কামালউদ্দিন কবির।
তিনি বলেন, “আমি দেশের অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে মেলা দেখেছি। আমার ধারণা এখন অধিকাংশ জায়গায় মেলার পরিসর সংকুচিত হচ্ছে। ১৫ বছর আগেও হাওর অঞ্চলের যেসব জায়গায় বৃহৎ পরিসরে মেলা হতে দেখেছি, এখন পরিসর ছোট হয়েছে।”
কেন মেলা সংকুচিত হচ্ছে- এমন প্রশ্নে কামালউদ্দিন বলেন, “আগে দেখতাম গ্রামের চায়ের দোকানে বা বাজারের মোড়ে কোনো বাউলশিল্পী গান করছে। এখন চায়ের দোকানে দেখি তামিল সিনেমা চলছে অথবা মোবাইল ফোনে গেম খেলছে। এটা স্বভাবিক বিবর্তন কিনা, তা নিয়ে আমাদের বিস্তর ভাবতে হবে। তবে এই বিবর্তন তো ঘটেছেই।
“করপোরেট আগ্রাসনের পাশাপাশি ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে মেলাকে ঘিরে। তাছাড়া কৃষি অর্থনীতির উপর ভিত্তি করে যে সমাজব্যবস্থা ছিল, তা অনেকটাই ছিল মেলাকেন্দ্রিক। লোকজন মেলায় এসে বিভিন্ন কৃষি উপকরণ কিনতেন। এখন তো সমাজ অর্থনীতির রূপও পরিবর্তন হয়েছে। তার প্রভাবও রয়েছে মেলা সংকুচিত হওয়ার পেছনে। এখন প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়েছে। লোকজ পণ্যের জন্য এক সময় সবাই মেলার জন্য অপেক্ষা করত। এখন বাজার করপোরেট প্রতিষ্ঠানের দখলে। মেলাকেন্দ্রিক যে কৃষি অর্থনীতি, তার রূপ পরিবর্তন হচ্ছে।”
নগরে বৈশাখ
বৈশাখ মূলত গ্রাম বাংলার উৎসব হলেও ষাটের দশক থেকেই নগর বা শহরে বৈশাখ উদযাপনের সূচনা হয়। পাকিস্তানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় জাগরণ গড়ে তুলতে সংস্কৃতিকর্মীরা গড়ে তোলেন সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ছায়ানট’। এই সংগঠনের উদ্যোগেই ১৯৬৭ সালে রমনার বটমূলে হয় প্রথম বর্ষবরণের অনুষ্ঠান।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাড়া প্রতিটি পহেলা বৈশাখেই নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়েছে সুরের মূর্চ্ছনা আর কথামালায়। কোভিডের দুই বছর ভার্চুয়ালি এ আয়োজন করা হয়। মূলত ছায়ানটের বর্ষবরণকে ঘিরেই নগরে বর্ষবরণ ভিন্ন মাত্রা পায়।
ছায়ানট প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম সন্জীদা খাতুন ২০১৭ সালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “এখন এই বর্ষবরণ উদযাপন ‘একটি ফ্যাশন’ এ রূপ নিয়েছে। মূল বিষয়টি অনুধাবনের চেয়ে সেখানে হৈ হুল্লোড়টাই মুখ্য হয়ে উঠে। আমাদের ভাবনায় ছিল মনের উৎকর্ষ সাধন। এটার মধ্য দিয়ে আমরা মানুষের মনে স্বাধিকার চেতনা জাগ্রত করতে চেয়েছিলাম।”
এবারের বর্ষবরণের আয়োজনের সংবাদ সম্মেলনে ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী বলেন, পহেলা বৈশাখ যেন একদিনের বাঙালি সাজার প্রতিযোগিতায় পর্যবসিত না হয়। এটি যেন সর্বজনের ভ্রাতৃত্ববোধের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
২০০১ সালে ছায়ানটের বৈশাখ বরণের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। তাতে ১০ জন নিহত হয়। এরপর থেকে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে প্রতি বছর বর্ষবরণের এই আয়োজন হয়।
সারওয়ার আলী বলেন, “এই যে নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভেতরে শিল্পীরা গান গাই, এটি তো শিল্পী, দর্শক- কারও জন্যই কাম্য নয় কখনো। যে কথাটি আমরা বলাবার চেষ্টা করছি, সমাজের মধ্যেই একটা অবক্ষয় তৈরি হয়েছে। সমাজের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। সমাজের এই ক্ষতটা যদি নিরাময় করতে না পারি, তাহলে এর সমাধান হবে না। এর জন্য সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটাতে হবে “
মঙ্গল শোভাযাত্রা
আশির দশকে সামরিক শাসনের অর্গল ভাঙার আহ্বানে পহেলা বৈশাখে চারুকলা থেকে যে শোভাযাত্রা বের হয়েছিল; সেটিই পরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় রূপ নেয়। ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতিও পায় এ কর্মসূচি।
১৯৮৫ সালের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের ভোরে যশোর শহরে বর্ণিল শোভাযাত্রা বের হয়েছিল। এটাকেই দেশের প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা বলা হয়ে থেকে। এরপর থেকে প্রতিবছর যশোরে এই শোভাযাত্রা হচ্ছে। যশোর শহরে বৈশাখ উদযাপনে থাকে দশদিনের মেলাও।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়ও সাহিত্য একাডেমি ৩৭ বছর ধরে আয়োজন করে আসছে বাংলা বর্ষবরণ এবং সপ্তাহব্যাপী বৈশাখী মেলা। এবারও চলছে ৩৮তম বৈশাখী উৎসবের প্রস্তুতি। সোনারগাঁয়ের লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন বৈশাখ মাসে মাসব্যাপী লোকজ মেলার আয়োজন করে।
এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রার পরিসর ছোট করা হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন। তবে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন তা মনে করেন না।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার ঈদের ছুটির মধ্যে মঙ্গল শোভাযাত্রা করতে হচ্ছে। ফলে আমাদের প্রস্তুতিতে কম সময় পাচ্ছি। পরিসর ছোট হচ্ছে না। অন্যান্যবারের মতোই এবারও হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা।”