ভোটার দেড় কোটি বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এবার কেন্দ্র বাড়তে পারে মাত্র দুই হাজার।
Published : 04 Jul 2023, 01:38 AM
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটকেন্দ্রের তালিকা তৈরি কাজ শুরু হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বরে ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা দিয়ে ভোটের অন্তত ২৫ দিন আগে গেজেট প্রকাশের আশা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসির অনুমোদনের পর জুনের প্রথম সপ্তাহে ‘ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা’ জারি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নারী-পুরুষ ভোটার বিবেচনায় নীতিমালা মেনে মাঠ কর্মকর্তাদের কাছে নির্ধারিত ছকে ভোটকেন্দ্রের প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরেজমিন পরিদর্শন করে কমিটি ভোটকেন্দ্রের অবস্থান, ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা, ভোটকক্ষের সংখ্যা, ভোটার সংখ্যা-সব কিছুর সারসংক্ষেপ তৈরি করবে। জুলাইয়ে প্রাথমিক তালিকা তৈরির কাজ শুরুর পর সারাদেশের একীভূত তথ্য অগাস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমরা পাব আশা করি।”
“খসড়া প্রকাশের পর দাবি, আপত্তি নিষ্পত্তি করার সময়ও নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। আশা করি, কমিশনের অনুমোদন নিয়ে ভোটের নির্ধারিত সময়ের আগে গেজেট চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে,” বলেন তিনি।
এবার ভোটকেন্দ্র যাচাই-বাছাইয়ে নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে অতিরিক্ত সচিব বলেন, “সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভোটকেন্দ্রের কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। ভোটের দায়িত্বে থাকা লোকবলের নানা ধরনের সুবিধার পাশাপাশি শৃঙ্খলা রক্ষা, নিরাপত্তার বিষয়টিও রয়েছে। এ কাজে প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তার বিষয়টি বিবেচনা করে তাদেরও কমিটিতে যুক্ত করা হয়েছে।”
জুন ২০২৩ থেকে ২০২৩ অগাস্ট; তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের অন্তত ২৫ দিন আগে গেজেট প্রকাশ
সংসদ নির্বাচনের ৩০০ আসনের জন্য দেশব্যাপী ৪২,০০০ ভোটকেন্দ্র স্থাপন প্রয়োজন হবে
সবশেষ ১০ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি ভোটারের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০ হাজারেরও বেশি ভোটকেন্দ্র ছিল, তাতে দুই লক্ষাধিক ভোট কক্ষ ছিল
দশম সংসদ নির্বাচনে ৯ কোটি ১৯ লাখ ভোটারের জন্য কেন্দ্র ছিল ৩৭,৭০৭টি (ভোটকক্ষ ১,৮৯,০৭৮টি)
নবম সংসদ নির্বাচনে ৮ কোটি ১০ লাখ ভোটারের জন্য কেন্দ্র ছিল ৩৫,২৬৩টি (১,৭৭,২৭৭টি)
এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন।
হালনাগাদ তালিকা অনুযায়ী, এবার ভোটার রয়েছে ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার বাড়লেও ভোটকেন্দ্র তুলনামুলক বেশি না বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, আগের নির্বাচনে ব্যবহার করা অবকাঠামোগুলো এবারও বাছাই করা হবে। সেক্ষেত্রে ভোটারদের অসুবিধা না হলে একই স্থাপনায় ভোটকক্ষের সংথ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হবে। তাহলে ভোটার ও শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা সব কিছুতেই সুবিধা হবে। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রের সংখ্যা বেশি হবে না, একই জায়গায় থাকবে।
যা আছে নীতিমালায়
গড়ে ৩ হাজার ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র, গড়ে ৫০০ জন পুরুষ ও ৪০০ জন নারী ভোটারের জন্য একটি ভোটকক্ষ নির্ধারণ করতে হবে।
ইভিএমে পুরুষ ভোটারের জন্য ৪০০ ও নারীর জন্য ৩৫০ জনে একটি করে ভোটকক্ষ স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এবার ইভিএমে ভোট হচ্ছে না সংসদে।
যাতায়াতের সুবিধা, ভোগলিক অবস্থান বিবেচনা করতে হবে; দুটি কেন্দ্রের মধ্যে ৩ কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব যেন না হয়; কোনো ভোটারকে যেন দূরের কেন্দ্রে যেতে না হয়। একটি কেন্দ্রের খুব কাছেই যেন অন্য কেন্দ্র স্থাপন করা না হয়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ইতোমধ্যে অনেক নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এছাড়া পুরনো অনেক স্থাপনা সংস্কার করে, কিংবা নিকটবর্তী নতুন স্থানে নতুন স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। ভোটকেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে ভোট দেওয়ার সুবিধা বিবেচনা করে এসব নতুন স্থাপনায় কেন্দ্র নির্ধারণ করা যাবে।
ভোটার সংখ্যা, ভোটকক্ষ, যাতায়ত সুবিধা, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, কেন্দ্রের অবকাঠামো বিবেচনা করে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব করতে হবে।
তবে বিগত নির্বাচনে যেসব কেন্দ্রে গোলযোগ হয়েছে বা বর্তমানে কোনো সম্ভাব্য প্রার্থীর প্রভাবাধীন থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, সেসব স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্র নির্ধারণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
প্রয়োজনে তাদের নামে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানগুলোয় যতদূর সম্ভব কেন্দ্র স্থাপনে বিরত থাকবে হবে। বিকল্প প্রতিষ্ঠান না থাকলে নিবিড় তদারকি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়োগ পর্যাপ্ত হতে হবে।
বিগত সংসদ নির্বাচনে ব্যবহার করা হয়েছে এমন কেন্দ্রগুলোয় সুব্যবস্থা বহাল থাকলে আগে ব্যবহৃত প্রতিষ্ঠানগুলোই ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা উত্তম হবে।
ভোটকেন্দ্র স্থাপনে প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, অসুস্থ, গর্ভবতী, মাতৃদুগ্ধদানকারী মা, তৃতীয় লিঙ্গ ও নারী ভোটারদের ভোটদানে অগ্রাধিকার বিবেচনায় রাখতে হবে।
মহানগর ও জেলা পর্যায়ের ভোটকেন্দ্র নির্ধারণে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি থাকবে। উপজেলা পর্যায়ের ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ কমিটির প্রধান হবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, শিক্ষা কর্মকর্তারা তাদের আওতাধীন এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত অবস্থান ও যাতায়াত সম্পর্কে বিশেষভাবে অবগত থাকেন। আর পুলিশ সুপার, ওসি যাতায়াত ব্যবস্থা ও সার্বিক নিরাপত্তা সম্পর্কে অবগত থাকেন। জেলা প্রশাসক ও ইউএনও সংশ্লিষ্ট এলাকার সরকারি ও নির্বাচন কমিশনের নানাবিধ কার্যক্রমের মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেন। তাই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটির মাধ্যমে ভোটকেন্দ্র স্থাপন কার্যক্রম অধিকতর সহজ ও সুষ্ঠু হবে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, গেজেট প্রকাশের পরও সংসদ নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর কোনো ভোটকেন্দ্র প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর অধীনে বা নিয়ন্ত্রণে থাকলে তা সরেজমিন যাচাই করে রিটার্নিং অফিসার জরুরি ভিত্তিতে কমিশনকে জানাবেন। তখন বিষয়টি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।