মেলা ঘুরে দেখা যায়, গত এক দশক ধরে প্রকাশিত বইগুলো এখনো বিক্রি হচ্ছে মেলায়। নতুন প্রকাশিত বই তেমন বেশি নেই।
Published : 20 Feb 2024, 09:58 PM
একুশের চেতনাকে ধারণ করে আয়োজিত বইমেলায় ভাষা নিয়ে গবেষণাধর্মী বইয়ের সংখ্যা হাতেগোনা।
প্রকাশকরা বলছেন, পাঠকের চাহিদা থাকার পরও পাণ্ডুলিপি সংকটের কারণেই মেলায় ভাষা বিষয়ক গবেষণাধর্মী নতুন বই তেমন বেশি আসছে না।
বইমেলার জনসংযোগ বিভাগও জানাতে পারেনি, এবার মেলায় ভাষা আন্দোলন বা ভাষা বিষয়ক গবেষণাধর্মী বইয়ের সংখ্যা কত।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, গত এক দশক ধরে প্রকাশিত বইগুলো এখনো বিক্রি হচ্ছে মেলায়। নতুন প্রকাশিত বই তেমন বেশি নেই।
বাতিঘর এবার প্রকাশ করেছে বদরুদ্দীন উমরের লেখা 'আমাদের ভাষার লড়াই' এবং বাংলা একাডেমি এনেছে 'বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন'।
বিগত বছরে ভাষা আন্দোলন নিয়ে সবচেয়ে বেশি বই প্রকাশ করে আগামী প্রকাশনী। এবার তারা সুজন বড়ুয়ার লেখা 'আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' নামে একটি বই মেলায় আনছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারী ওসমান গণি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "ভাষা নিয়ে বা ভাষা আন্দোলন নিয়ে গবেষণার বইয়ের চাহিদা আছে। এ ধরনের বই সারা বছরই বিক্রি হয়। কিন্তু পাণ্ডুলিপি সংকটের কারণে নতুন বই আনা সম্ভব হয় না।"
ভাষা আন্দোলন নিয়ে গবেষকও হাতেগোনা কয়েকজন। ফলে নতুন পাণ্ডুলিপির জন্য তাদের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হয় মন্তব্য করে ওসমান গণি বলেন, "এম আবদুল আলীম এখন এ বিষয়ে ভালো কাজ করছেন। তার অনেকগুলো বই আমরা করেছি।"
মেলায় বায়ান্ন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে। অথচ স্টলে গিয়ে পাওয়া যায়নি ভাষা বিষয়ক কোনো বই। বাংলা একাডেমি প্যাভিলিয়নেও এ বিষয়ে মাত্র কয়েকটি বই রয়েছে।
প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মী মাহবুব হোসেন হৃদয় বলেন, "বিগত বছরে প্রকাশ হওয়া কয়েকটি বই রয়েছে, আর নতুন প্রকাশিত 'বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন' বইটিই আছে।"
গত বছর মেলায় এসেছিল এম আবদুল আলীমের 'ভাষা আন্দোলনে তাজউদ্দিন আহমদ', আখতার হোসেন মল্লিকের 'ভাষা সংগ্রাম ও বইমেলা, শেলী সেনগুপ্তার 'নারীর ভাষা আন্দোলন, আফরোজা পারভীনের দুটি বই 'ভাষা আন্দোলনে নারী' ও 'একুশের গল্প' এবং ফেরদৌসী বেগম বিউটির 'ভাষা আন্দোলনে লালমনিরহাট'।
এছাড়া গোলাম কুদ্দুছের বই 'বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন' এনেছিল অন্যপ্রকাশ। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের ৯ বছর পর ভারতের আসামের বরাক উপত্যকায় ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিল বেশ কয়েকজন। সে বিষয়টিই গবেষণার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন গোলাম কুদ্দুছ।
গবেষক মফিদুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বাংলাদেশেই বহুভাষার মানুষ বাস করেন। ভাষা নিয়ে নানা আঙ্গিকে গবেষণা হওয়া জরুরি। বইমেলায় সেসব বই না থাকা মানে বোঝা যাচ্ছে, আমাদের এ বিষয়ে গবেষণা কম হচ্ছে।"
এ ধরনের গবেষণা যে সময়সাপেক্ষ, সে বিষয়টি তুলে ধরে মফিদুল হক বলেন, “সংখ্যা দিয়ে বিষয়টি বিবেচনা করা সমীচীন হবে না। কিন্তু সংখ্যাটি এত কম হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। এ বিষয়ে আরও বেশি গবেষণা হওয়া উচিত। ভাষার জন্য জীবন দেওয়া জাতি আমরা। বিশ্বের সকল ভাষা নিয়ে আমাদের কাজ করার দায় অনেক বেশি।"
মঙ্গলবার ছিল বইমেলার বিংশতম দিন। মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত।
এদিন মেলায় এসেছিলেন কথাসাহিত্যিক হাসনাত আব্দুল হাই। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ভাষা আন্দোলন নিয়ে এখন নতুন বিষয় খুঁজতে হবে। মোটা দাগে অনেক কিছু নিয়েই লেখা হয়েছে। এখন নতুন বিষয় খুঁজে লিখতে হবে। সেজন্য ভাষা আন্দোলন নিয়ে যত লেখা হয়েছে, সেগুলো পড়তে হবে।"
সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন না হওয়ায় একুশের চেতনার ‘আংশিক বাস্তবায়ন’ হয়েছে বলেই মনে করেন হাসনাত আব্দুল হাই।
তিনি বলেন, “ভাষা আন্দোলন যে চেতনাকে ধারণ করে হয়েছিল, তার বাস্তবায়ন কিন্তু পুরোপুরি হয়নি। আমরা এখনো বাংলার ব্যবহারই ঠিকমতো করতে পারিনি। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন ছিল ভাষা আন্দোলনের অন্যতম দাবি। এটি সম্ভব হয়নি এখনো।"
নতুন বই দুই হাজার ছাড়িয়েছে
মেলার জনসংযোগ বিভাগ জানায়, এদিন তথ্যকেন্দ্রে নতুন বই জমা পড়েছে ৯৯টি। নতুন বইয়ের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে। মোট নতুন বই এসেছে ২ হাজার ৯২টি।
এদিন লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি আতাহার খান, কথাসাহিত্যিক মোস্তফা কামাল, গবেষক চৌধুরী শহীদ কাদের এবং লেখক ও পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিল।
'রিকশাচিত্র প্রদর্শন বই ও সংলাপ' মঞ্চে বিকেল ৫টায় ড. হাসান কবীর রচিত ও বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের কৃষি বই নিয়ে আলোচনা হয়।
মূল মঞ্চ
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে হয় ‘স্মরণ: জামাল নজরুল ইসলাম’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিজ্ঞানবক্তা আসিফ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সুব্রত বড়ুয়া এবং আরশাদ মোমেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি রহিমা আখতার কল্পনা, বিপ্লব মুস্তাফিজ, প্রত্যয় জসীম, ফারুক আহমেদ, মনিরুজ্জামান মিন্টু, মনিরুজ্জামান রোহান এবং কাজী আনিসুল হক।
আবৃত্তি পরিবেশন করেন ইকবাল খোরশেদ, দেওয়ান সাইদুল হাসান, অনন্যা রেজওয়ানা, মীর মাসরুর জামান রনি, সংগীতা চৌধুরী, জিনিয়া ফেরদৌস রুনা এবং চন্দ্রিমা দেয়া। এছাড়া মনিরুল ইসলামের পরিচালনায় দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে ‘স্বরব্যঞ্জন বাচনিক উৎকর্ষ ও চর্চা কেন্দ্র’।
বুধবার যা থাকবে
বুধবার শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাত সাড়ে ১২টায় একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে দিনের কর্মসূচি শুরু হবে।
বইমেলা শুরু হবে সকাল ৮টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ৮টায় বইমেলার মূলমঞ্চে হবে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। সভাপতিত্ব করবেন কবি শামীম আজাদ।
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে হবে অমর একুশে বক্তৃতা ২০২৪। স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
অমর একুশে বক্তৃতা দেবেন কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।