স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে শফিকুল ইসলাম বলেন, “পুরো চাকরি জীবনে আপনার যে আশীর্বাদ মাথার উপরে ছিল, তা কখনো ভুলব না।”
Published : 29 Oct 2022, 04:22 PM
ঢাকার পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম তার বিদায়বেলায় জানালেন, চাকরি ছিল তার কাছে ‘এবাদত’, দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কখনও কোন কাজে অন্যায় ‘সুবিধা’ তিনি নেননি।
শনিবার রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে 'কমিউনিটি পুলিশিং ডের অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন বিদায়ী পুলিশ কমিশনার।
চাকরির বয়স ৫৯ হওয়ায় শনিবারই সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যাচ্ছেন শফিকুল ইসলাম।তিন বছরের বেশি সময় তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে সামনে রেখে শফিকুল ইসলাম বলেন, পুরো চাকরি জীবনে আপনার (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) যে আশীর্বাদ মাথার উপরে ছিল, তা কখনো ভুলব না।
“চাকরিটাকে এবাদত মনে করেছি, চাকরি জীবনে কোথাও থেকে কোনো অন্যায় সুবিধা গ্রহণ করিনি। একজন সরকারি কর্মকর্তাকে ভালোভাবে চলতে আপনি পেছন থেকে যে সাপোর্ট দিয়েছেন, সেজন্য আপনাকে আলদাভাবে স্যালুট ও শ্রদ্ধা।"
নতুন পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের প্রশংসা করে শফিকুল ইসলাম বলেন, "আইজিপি হিসেবে যাকে বেছে নিয়েছেন, তিনি ভালো করবেন। এ আস্থা আমার রয়েছে। আমরা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে কতিপয় দুর্বৃত্তের হাতে ছেড়ে দিতে পারি না। যতক্ষণ শ্বাস আছে, যতক্ষন আশ আছে, ততোক্ষণ পুলিশ বাহিনী লড়াই করব।"
বিদায়ী কমিশনার জানান, ২০১৯ সালে তিনি দায়িত্ব নেওয়ার ৫-৬ মাস না যেতেই কোভিড মহামারী শুরু হয়ে যায়। সে সময় বিধি-নিষেধের কারণে স্বাভাবিক সভা-সমাবেশ বন্ধ হয়ে যায়। সেজন্য কমিউনিটি পুলিশিংয়ের জন্য খুব বেশি কাজ তিনি করতে পারেননি। তারপরও ‘চেষ্টা করেছেন’।
সমাজের কোন কোন অপরাধ দমনে কমিউনিটি পুলিশিং ভূমিকা রাখতে পারে, সে কথা তুলে ধরে শফিকুল ইসলাম বলেন, “বিশেষ করে ইভটিজিং, নারী নির্যাতন, যৌতুক, মাদকের মত সামাজিক সমস্যা রোধে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। আগে এসব সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে আলাদা আইন ছিল না। পর্যায়ক্রমে যখন অপরাধ বাড়তে থাকল, আইন হল।
“পর্যায়ক্রমে আইন কঠোর থেকে কঠোর হল। কিন্তু শুধু আইন করে কি অপরাধ নির্মূল সম্ভব হয়েছে? হয়ত কমেছে, কিন্তু খুব বেশি লাভ হয়নি। এসব সামাজিক সমস্যা যদি সবাই মিলে প্রতিরোধ করি, তাহলেই এ অপরাধ থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব।"
মাদক নির্মূলে সামাজিক প্রতিরোধের গুরুত্ব তুলে ধরে বিদায়ী পুলিশ কমিশনার বলেন, "প্রত্যেক মাদকসেবী টাকা জোগাড় করতে অপরাধে জড়ায়। একসময় মাদক ব্যবসায় জড়ায়। একজন মাদক ব্যবসায়ীকে ধরলে শত শত ব্যবসায়ী তৈরি হচ্ছে। আজকে যে মাদক খায়, সেই ভবিষ্যতের ব্যবসায়ী হবে। সামাজিকভাবে সবাই মিলে যদি এটা প্রতিরোধ করতে না পারি, তাহলে শুধু জেল দিয়ে মাদক নির্মূল সম্ভব নয়।
"আমরা সমাজে বাস করি, আমরাই নির্ধারণ করব আমাদের সমাজ কেমন হবে। সবাই হাত মেলালে সমাজের গুটিকয়েক দুর্বৃত্ত পালানোর পথ খুঁজে পাবে না।"
অবসরে যাচ্ছেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল
অষ্টম ব্যাচের কর্মকর্তা শফিকুল ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ডিএমপির ৩৪তম কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেন।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার সন্তান শফিকুল ১৯৮৯ সালের ২০ ডিসেম্বর এএসপি হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। কর্মজীবনে তিনি নারায়ণগঞ্জ, পটুয়াখালী, সুনামগঞ্জ ও কুমিল্লা জেলায় পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
পরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, চট্টগ্রামের রেঞ্জ ডিআইজি ও ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবেও কাজ করেছেন।
অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর তিনি অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান, পুলিশ সদরদপ্তরের এইচআরএম শাখার প্রধান ও সিআইডির প্রধান ছিলেন।