গত বছর সংস্কৃতি সচিব অমর একুশে বইমেলায় মন্ত্রণালয়ের নাম যুক্ত করতে চাইলে একাডেমির সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে।
Published : 13 Jan 2024, 12:17 AM
আইনের তোয়াক্কা না করে সম্প্রতি বাংলা একাডেমিসহ বেশকিছু স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানকে তাদের নামের সঙ্গে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নাম যুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টিকে প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বায়ত্তশাসনে ‘হস্তক্ষেপ’ হিসেবে দেখছেন আইনবিদ, বুদ্ধিজীবীসহ নাগরিক সমাজ।
মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, এসব প্রতিষ্ঠানের বাজেট বরাদ্দসহ সব কাজই যেহেতু মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হয়, তাই এ নির্দেশনায় আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি।
গত সোমবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন-২ শাখা) মো. আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, এ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর/সংস্থার নামের সাথে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নাম লিখতে হবে।
“ডিসেম্বর-২০২৩ মাসের মাসিক সমন্বয় সভার সিদ্ধান্তের ক্রমিক নং ৩.১ (জ) অনুযায়ী সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর/সংস্থার নামের সাথে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রাণালয়ের নাম উল্লেখ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।”
চিঠির একটি কপি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম দেখেছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন-২ শাখা) মো. আসাদুজ্জামান চিঠির পাঠানোর বিষয়টি স্বীকারও করেছেন।
মন্ত্রণালয় থেকে ১৮টি দপ্তর/সংস্থার মহাপরিচালক, নির্বাহী পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং পরিচালকদের এ চিঠি দেওয়া হয়। যার মধ্যে রয়েছে বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট, কপিরাইট অফিস, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি (নেত্রকোণা), কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট (বান্দরবান), ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট (রাঙামাটি), ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট (খাগড়াছড়ি), ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি (রাজশাহী), মণিপুরি ললিতকলা একাডেমি (মৌলভাবাজার)।
এর মধ্যে বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বায়ত্তশাসিত হিসেবে স্বীকৃত এবং আইন দ্বারা পরিচালিত। তবে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় যুক্ত রাখার বিধান রয়েছে।
চিঠির বিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা কোনো মন্তব্য করতে চাননি। আর একাধিকবার ফোন করেও সাড়া মেলেনি শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর।
বাংলা একাডেমির স্বায়ত্তশাসন মন্ত্রণালয়ের জন্মের আগে থেকেই
ভাষা আন্দোলনের পর বাংলা ভাষার অস্তিত্ব রক্ষা ও বিকাশে বাংলা একাডেমির মত গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা প্রবল হয়ে ওঠে। যুক্তফ্রন্ট সরকার পাকিস্তানের ক্ষমতায় এলে ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠা পায় বাংলা একাডেমি। প্রতিষ্ঠার দুই বছর পর এটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পায়।
এই ইতিহাস মনে করিয়ে দিয়ে বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলা একাডেমির যখন জন্ম হয়েছে, তখন তো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়েরও জন্ম হয়নি। বাংলা একাডেমির ইতিহাস তারা জানে না, আর এজন্যই তারা একাডেমিকে আমলাতান্ত্রিক জালে আটকে রাখতে চায়।”
বাংলা একাডেমিকে ‘অধীনস্থ’ করে রাখার এমন চেষ্টা বেশ পুরোনো বলে জানালেন সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, “আমি যখন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলাম তখন একবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে আমার কাছে মিটিংয়ে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি চিঠি এসেছিল, তাতে লেখা ছিল বাংলা একাডেমি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ‘অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান’, আমি তখন তাদের বলেছিলাম, বাংলা একাডেমি তাদের ‘অধীনস্থ নয়’।
“পরে তারা চিঠি সংশোধন করে আমার কাছে পাঠিয়েছিল এবং সংশোধিত চিঠি পাওয়ার পর আমি মিটিংয়ে গিয়েছিলাম। সংস্কৃতি মন্ত্রণালায় যদি বাংলা একাডেমিকে অধীনস্থ চিন্তা করে, তবে আমি বলব এটা অযাচিত, অনাকাঙ্ক্ষিত, অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ।”
বাংলা একাডেমির আরেক সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ বলেন, “মন্ত্রণালয়ের যে কর্মকর্তারা বাংলা একাডেমিকে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন মনে করে ওই চিঠি দিয়েছেন, তারা আইনের ব্যাপারে অবগত নন। এ আইনটি জাতীয় সংসদের মাধ্যমে সাংবাধানিকভাবে স্বীকৃত। বাংলা একাডেমি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সংযুক্ত দপ্তর, কিন্তু নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। তারা এখন নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে সংসদের মাধ্যমে আইন সংশোধন করতে হবে।”
তিনি বলেন, “মন্ত্রণালয়ের সচিবের তো বাংলা একাডেমির কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার সুযোগই নেই। আইন অনুযায়ী, মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি একাডেমির নির্বাহী পর্ষদে থাকেন। একাডেমি যদি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীনই হত, তবে তো প্রতিনিধি এভাবে থাকতেন না। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বলব, তারা আইনটি যেন ভালোমত পড়েন।”
আইনে যা আছে
১৯৫৭ সালে ৩ এপ্রিল পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদে ‘দি বেঙ্গলি একাডেমী অ্যাক্ট ১৯৫৭’ পাস করে বাংলা একাডেমিকে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ‘বাংলা একাডেমি আইন, ২০১৩’ অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। আইনে সরকারের ক্ষমতার পরিসীমাও উল্লেখ রয়েছে।
আইনে নামকরণের বিষয়ে বলা আছে, “এই আইন কার্যকর হইবার সঙ্গে সঙ্গে, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, ‘বাংলা একাডেমি’ নামে একটি একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হইবে।
“একাডেমি একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হইবে এবং ইহার স্থায়ী ধারাবাহিকতা ও একটি সাধারণ সীলমোহর থাকিবে এবং এই আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে ইহার স্থাবর ও অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি অর্জন করিবার, অধিকারে রাখিবার ও হস্তান্তর করিবার ক্ষমতা থাকিবে এবং ইহা স্বীয় নামে মামলা দায়ের করিতে পারিবে এবং উক্ত নামে ইহার বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা যাইবে।”
একাডেমি গঠনের বিষয়ে আইনে বলা আছে, চার ধরনের সদস্যের সমন্বয়ে একাডেমি গঠিত হবে। (ক) একাডেমির সভাপতি; (খ) নির্বাহী পরিষদের সভাপতি; (গ) ফেলো; এবং (ঘ) সদস্য।
একাডেমি পরিচালনার জন্য যে সদস্যদের সমন্বয়ে নির্বাহী পরিষদ গঠিত হবে, সেখানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় মনোনীত যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা থাকবেন। একাডেমির সর্বময় কর্তৃত্ব সাধারণ পরিষদের ওপর ন্যস্ত থাকবে। সাধারণ পরিষদ একাডেমির কার্যাবলি তদারকি ও পর্যালোচনা করবে এবং নির্বাহী পরিষদকে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেবে।
‘আইন লঙ্ঘন করছে’ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়
বাংলা একাডেমির মত স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নাম আইন দ্বারা স্বীকৃত হওয়ার পরও চিঠি দিয়ে নামের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের নাম যুক্ত করার নির্দেশ দিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আইন লঙ্ঘন করছে বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম।
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানকে আইনের মাধ্যমে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সাধারণত নিজস্ব পরিচালনা পর্ষদ বা নির্বাহী পর্ষদ থাকে। সেই পর্ষদের মাধ্যমে আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। পরিচালনা বা নির্বাহী পর্ষদে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির অংশগ্রহণ থাকে।
“স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন, কিন্তু নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। সেসব প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়।”
উদাহারণ দিয়ে তানজিম বলেন, “এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত, তারা কি নামের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় লিখবে? সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্ভবত দপ্তর/সংস্থা/অধিদপ্তর/পরিদপ্তর এবং স্বায়ত্তশাসিত গুলিয়ে ফেলছে। সব প্রতিষ্ঠানকে একরকম ভাবতে শুরু করেছে। মন্ত্রণালয় এই চিঠির মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করছে বলেই প্রতীয়মান হয়।”
ক্ষোভ নাগরিক সমাজে
জাতীয় নির্বাচনের পরদিনই এমন একটি চিঠি কেন দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। মন্ত্রণালয়ের এই ‘অযাচিত হস্তক্ষেপ’ আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং তা কোনোভাবেই কাম্য নয় বলে মনে করেন অনেকেই।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্ট্রি ও গবেষক মফিদুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলা একাডেমি একটা জাতির জাগরণের সঙ্গে যুক্ত ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের জন্মের আগে বাংলা একাডেমির জন্ম এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন থাকা উচিত, সেটা মন্ত্রণালয়কে বারবার পর্যালোচনা করতে হবে। আর দৃষ্টিভঙ্গিতে যদি ঘাটতি থাকে সেটা দুর্ভাগ্যজনক। বাংলা একাডেমির প্রতি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিভঙ্গিতে যে ঘাটতি রয়েছে, তার একটি চরম উদাহারণ তৈরি করল তারা।”
বাংলাদেশের সকল সংস্কৃতিকর্মী, সাহিত্যিক, শিল্পীসহ জনগণের এ নিয়ে প্রতিবাদ করা উচিত উল্লেখ করে মফিদুল হক বলেন, “আমরা এই চিঠি প্রত্যাখ্যান করব এবং কোনোভাবেই বাংলা একাডেমি মন্ত্রণালয়ের তকমা নিয়ে চলতে পারে না।”
চিঠিতে লেখা ‘আওতাধীন’ শব্দে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা লিখেছে ‘আওতাধীন; এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এই শব্দটা ব্যবহারে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে আরও সতর্ক হতে হবে। মন্ত্রণালয় থেকে বাজেট বরাদ্দ হয় বলেই বাংলা একাডেমিকে মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বা অধীনস্থ ভাবার কোনো কারণ নেই। অসংখ্য বেসরকারি পাঠাগারকে বরাদ্দ দেয়, তাই বলে কী তারা সরকারের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান?”
নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, “স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে এভাবে মন্ত্রণালয়ের নাম লেখার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি করি না। এতে সরকারের কোনো গৌরবও বৃদ্ধি পাবে না। বরং এটা লিখলে সাধারণ জনগণের কাছে মনে হবে সরকার স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি না লিখলেই বরং সরকারের গৌরব বৃদ্ধি পাবে। তাই এটা লেখার কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমি মনে করি না।”
সরাসরি অধীন দপ্তর বা সংস্থার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের নাম লেখা গেলেও বাংলা একাডেমির মত স্বায়ত্তশাসিত দপ্তরে মন্ত্রণালয়ের নাম লেখাটা সমীচীন নয় বলে মনে করেন সাবেক মুখ্য সচিব ও কবি কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, যিনি সদ্য প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলা একাডেমি মন্ত্রণালয়ের সংযুক্ত দপ্তর, এর আলাদা পরিচালনা পর্ষদ আছে। মন্ত্রণালয়ের কিছু দপ্তর থাকে, যেগুলো সরাসরি মন্ত্রণালয় থেকে পরিচালিত হয়। সেসব দপ্তর/সংস্থায় মন্ত্রণালয়ের নাম লিখতে হবে। কিন্তু বাংলা একাডেমি বা শিল্পকলা একাডেমি সংযুক্ত দপ্তর। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি অনেক বেশি স্বায়ত্তশাসিত। ফলে বাংলা একাডেমিতে মন্ত্রণালয়ের নাম লিখতে হবে বলে আমি মনে করি না।”
যা বলছে মন্ত্রণালয়
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের নাম লিখতে নির্দেশনা দেওয়ার মধ্য দিয়ে আইন লঙ্ঘন হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন-২ শাখা) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “আইন লঙ্ঘন কেন হবে? সেই প্রতিষ্ঠানগুলো কি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন না? সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের বাজেট বরাদ্দ, সবকিছু হচ্ছে না?”
এসব প্রতিষ্ঠান মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়, তারা পরিচালনা পর্ষদ বা নির্বাহী পর্ষদ দ্বারা পরিচালিত হয়। আইন প্রতিষ্ঠানকে সেই মর্যাদা দিয়েছে।
আইনের বিষয়টি জানানো হলে আসাদুজ্জামান বলেন, “নাম লিখলে কি নির্বাহী পরিষদের ক্ষমতা খর্ব হয়? কোনো না কোনো মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন তো তারা।”
আইনের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানের ‘নাম’ স্বীকৃত, এ বিষয়ে তিনি বলেন, “নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে না তো। বাংলা একাডেমি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনেই তো। নিচে লেখা থাকবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, এটা তো দোষের কিছু নয়। আচ্ছা আপনি যখন বলছেন, আমরা খতিয়ে দেখব।”
বাংলা একাডেমিতে হস্তক্ষেপ পুরনো নয়
কয়েক বছর ধরেই বাংলা একাডেমির নিয়মিত বিভিন্ন কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। অমর একুশে বইমেলা শুরু থেকে একাডেমির আয়োজনে হয়ে এলেও গেল বছর সংস্কৃতি সচিব মন্ত্রণালয়ের নাম যুক্ত করতে চাইলে একাডেমির সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে।
এ নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে সংবাদ প্রকাশ হলে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
একুশে বইমেলার আয়োজক কে? দ্বন্দ্বে সংস্কৃতি সচিব ও বাংলা একাডেমি
বাংলা একাডেমির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একাডেমির প্রায় সব অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের কাউকে না কাউকে অতিথি করার চাপ থাকে। ফলে বিগত সময়ে একাডেমির যত অনুষ্ঠান হয়েছে, তার বেশিরভাগ আয়োজনেই মঞ্চে অতিথি হিসেবে দেখা গেছে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের।
বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সভায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ না হয়েও মঞ্চে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বক্তব্য শ্রোতাদের বিরক্তির কারণ ঘটায়। এ নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন গবেষক মফিদুল হক। পরে তিনি একাডেমির কাছে একটি লিখিত চিঠি দিয়েও প্রতিবাদ জানান।
মফিদুল হকের সেই চিঠি পাওয়ার কথা একাডেমির একাধিক কর্মকর্তা স্বীকার করলেও সেটি এখন ‘খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না’ বলে জানিয়েছেন তারা।