আংশিক জেরার পর আগামী ২৯ মে পরের সাক্ষ্য নেওয়ার তারিখ রেখেছেন বিচারক।
Published : 11 Mar 2024, 06:59 PM
ঢাকার আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম হত্যাকাণ্ডে নিহতের বাবা পুলিশের সাবেক এসআই ফাইজুদ্দীন আহম্মেদ সাক্ষ্য দিয়েছেন।
সোমবার ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শেখ ছামিদুল
ইসলামের আদালতে মামলার বাদী ফাইজুদ্দীন হত্যাকাণ্ডের এ মামলার আসামি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার আবদুল্লাহ আল মামুনসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় ঘটনার সবিস্তার বর্ণনা দেন। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বিচারক বাদীর জবানবন্দি নেওয়ার পর আংশিক জেরার পর আগামী ২৯ মে পরের সাক্ষ্য নেওয়ার তারিখ রাখেন।
এ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সালাউদ্দিন হাওলাদার বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জবানবন্দি শেষে নিহতের বাবা এজলাসে হাজির আসামিদের শনাক্ত করেন। উপস্থিত এসব আসামি জামিনে রয়েছেন। জবানবন্দিতে এ মামলার সব আসামির নাম উল্লেখ করে তিনি ছেলে হত্যার বিচার চান।
জবানবন্দিতে ফাইজুদ্দীন বলেন, ঘটনার সময় তিনি গাজীপুরের জয়দেবপুরের ছায়াবিথী এলাকার বাসায় ছিলেন। তার ছেলে আনিসুল বরিশাল ট্রাফিক বিভাগে সিনিয়র এএসপি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আনিসুলের স্ত্রী টেলিফোনে ঘটনার ৩/৪ দিন আগে তাকে বলেন, আনিসুল কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে। সে স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। তাকে পরে ঢাকায় এনে মাইন্ড এইড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে বড় ছেলে, মেয়ে ও জামাতাও উপস্থিত ছিলেন।
বাদী মানসিক চিকিৎসার জন্য ওই হাসপাতালে ভর্তির পর আনিসকে মারধর করে হত্যার অভিযোগ করেন।
জবানবন্দিতে উঠে আসে হাসপাতালের টয়লেটে বাদী ও আনিসুলের ভাই-বোনসহ স্বজনদের ঢুকতে না দেওয়ার কাহিনি। নিহতকে হাসপাতালের অন্য কক্ষে আটকে ওড়না দিয়ে বেধে উপুর্যপুরি মারধরের ঘটনাও তুলে ধরেন সাবেক এসআই ফাইজুদ্দীন।
পরে অন্য হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে সাক্ষ্যে তুলে ধরেন তিনি।
মাইন্ড এইড হাসপাতালের মালিকদের একজনের পক্ষে আংশিক জেরা করেন আইনজীবী কাদের পাটোয়ারি ও কামাল পাটোয়ারি।
অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার আবদুল্লাহ আল মামুন, মাইন্ড এইড হাসপাতালের পরিচালক আরিফ মাহামুদ, ফার্মাসিস্ট তানভীর হাসান, কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন, সাজ্জাদ আমিন ও ফাতেমা খাতুন, হাসপাতালের সমন্বয়ক রেদোয়ান সাব্বির, হাসপাতালের কর্মচারী মাসুদ খান, জোবায়ের হোসেন, তানিফ মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম কুমার পাল, লিটন আহম্মেদ, সাইফুল ইসলাম ও আবদুল্লাহ আল-আমিন।
আসামিদের মধ্যে অসীম কুমার পাল কারাগারে আছেন। সাখাওয়াত হোসেন পলাতক। অপর ১৩ আসামি জামিনে আছেন।
মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর দুপুরে তাকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে নেওয়া হয়। ভর্তির কিছুক্ষণ পর ওই হাসপাতালের কর্মচারীদের মারধরে আনিসুলের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা ফাইজুদ্দীন আহম্মেদ বাদী হয়ে আদাবর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ৮ মার্চ এ মামলায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার আবদুল্লাহ আল মামুনসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. ফারুক মোল্লা।
মাইন্ড এইড হাসপাতালের চিকিৎসক নুসরাত ফারজানাকে মামলায় এজাহারে আসামি না করলেও তিনি উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়েছিলেন। পরে অভিযোগপত্রে তার নাম না আসায় বাদীপক্ষ আপত্তি তোলে।
এএসপি আনিসুলের পরিবারের ভাষ্য ছিল, ডা. নুসরাত ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, না হলে কেন তিনি আগেই জামিন নেবেন। এজন্য মামলাটি পুনরায় তদন্তের আবেদন করেন আনিসুলের বাবা ফাইজুদ্দীন আহম্মেদ।
পরে আদালত তা মঞ্জুর করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর নুসরাতকে বাদ দিয়ে ১৫ জনের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দাখিল করেন পিবিআইয়ের পরিদর্শক এ কে এম নাসির উল্যাহ।
মাইন্ড এইড হাসপাতালের পরিচালক মুহাম্মদ নিয়াজ মোর্শেদ মারা যাওয়ায় এবং ডা. নুসরাত ফারজানার বিরুদ্ধে অভিযোগের সতত্যা না পাওয়ায় তাদের মামলার দায় থেকে তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।