হিমালয়ের ২০ হাজার ৭৭৪ ফুট উচ্চতার ডোলমা খাং চূড়ায় এই প্রথম পা পড়ল বাংলাদেশি অভিযাত্রীদের।
Published : 04 Nov 2022, 10:15 AM
হিমালয়ের দোগারি হিমাল আপাতত অজেয়ই থাকল, তবে নতুন এক শৃঙ্গে ঠিকই বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে এলেন অভিযাত্রীরা।
বাংলাদেশ ও নেপালের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এই অভিযানে ২০ হাজার ৭৭৪ ফুট উচ্চতার ডোলমা খাং চূড়া জয় করেছেন বাংলাদেশের চার এবং নেপালের দুই পর্বতারোহী।
নেপালের স্থানীয় সময় বুধবার সকাল ৯টায় রোল ওয়ালিং উপত্যকার গৌরিশঙ্কর হিমালয় রেঞ্জে ওই পর্বত শিখরে পৌঁছান পর্বতারোহী দলের সদস্যরা। ডোলমা খাং পর্বত চূড়ায় এই প্রথম বাংলাদেশিদের পা পড়ল।
পর্বতারোহী এম এ মুহিতের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দলে ছিলেন কাজী বাহালুল মজনু বিপ্লব, ইকরামুল হাসান শাকিল এবং রিয়াসাদ সানভী। নেপাল দলে ছিলেন কিলু পেম্বা শেরপা এবং নিমা নুরু শেরপা।
তাদের এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রথমবারের মত ‘দোগারি হিমাল’ শৃঙ্গে দুই দেশের পতাকা ওড়ানো।
সাড়ে ২২ হাজার ফুট উঁচু এই শৃঙ্গ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে অক্টোবরের মাঝামাঝি কাঠমান্ডু থেকে যাত্রা করেছিলেন দুই দেশের আট অভিযাত্রী। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া তাদের পথ খুঁজে নিতে দেয়নি। বাধ্য হয়ে পরিবর্তন আনতে হয় পরিকল্পনায়।
এম এ মুহিত বলেন, ১২ অক্টোবর পশ্চিম নেপালের রুকুম জেলার কাংড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন তারা। কাংড়ি থেকে জিপে তাকসারা পৌঁছে শুরু হয় দোগারি হিমাল বেজক্যাম্পের উদ্দেশ্যে ট্রেকিং।
“দোগারি হিমাল পর্বতে আগে কখনো অভিযান হয়নি বলে বেজ ক্যাম্পের পথ চেনার জন্য মাইকোট গ্রাম থেকে ভক্ত পুন মাগার নামে স্থানীয় একজনকে গাইড হিসেবে সাথে নিই। মাইকোট থেকে যাত্রা করে ডোলে ও ফেদী নামের জায়গাগুলো পার হয়ে আমরা ১৫ হাজার ৯২ ফুট উচুঁ নিমকুণ্ড ফুলগাড়ি নামের এক উপত্যকায় ক্যাম্প করি।”
এভারেস্টজয়ী এই বাংলাদেশি পর্বতারোহী জানান, বছরের এ সময়টায় হিমালয়ের এসব উপত্যকা সাধারণত ঘাসে আবৃত থাকে। কিন্তু সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবরের শুরু পর্যন্ত ভারী তুষারপাতের কারণে এবার সেখানে তিন থেকে চার ফুট উচুঁ বরফ জমে ছিল।
“দুই দিন সেখানে থেকে প্রতিদিনই আমাদের দুই দলের পর্বতারোহীরা বেজক্যাম্পের খোঁজে আরও উপরে যাওয়ার চেষ্ট করেছি, কিন্তু পাঁচ হাজার মিটারের কাছাকাছি পৌঁছে সাত থেকে আট ফুট উচুঁ বরফের কারণে আর সামনে এগোনো সম্ভব হয়নি।
“এর মধ্যে আবার তুষারপাত শুরু হয়। সার্বিক বিষয়ে নেপাল দলের নেতা কিলু পেম্বা শেরপার সাথে দফায় দফায় আলোচনা হয়। সবদিক বিবেচনা করে আমরা দোগারি হিমাল অভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ২৪ অক্টোবর কাঠমান্ডু ফিরে আসি।”
তবে পথে নেমে হাল ছেড়ে দিতে চাননি এই অভিযাত্রী দলের সদস্যরা। অভিযান আয়োজনকারী সংস্থা ইমাজিন নেপালের কর্ণধার পর্বতারোহী মিংমা গ্যালজে শেরপার সাথে আলোচনা করে বাংলাদেশ-নেপাল যৌথ অভিযানে ডোলমা খাং শিখরে যাত্রার সিদ্ধান্ত হয়।
বাংলাদেশের চার জন পর্বতারোহীর সাথে এ অভিযানে যোগ দেন নেপালের দুজন। ২৮ অক্টোবর তারা সিমিগাওয়ের উদ্দেশ্যে কাঠমান্ডু ত্যাগ করেন।
মুহিত বলেন, সিমিগাও থেকে ট্রেকিং করে ৩০ অক্টোবর তারা ১২ হাজার ২৭০ ফুট উচ্চতার বেদিং গ্রামে পৌঁছান, সেটাই ছিল এ অভিযানের বেজক্যাম্প। দুই রাত বেদিংয়ে থেকে ১ নভেম্বর দুপুরে পৌঁছান ১৬ হাজার ৭৬ ফুট উচ্চতার হাই ক্যাম্পে।
“সেদিন রাত ১টায় আমরা হাই ক্যাম্প থেকে শিখর জয়ের উদ্দেশ্যে চূড়ান্ত আরোহণ শুরু করি। প্রথমে পাথরের বোল্ডার পেরিয়ে রাত ৩টার দিকে বরফে মোড়ানো প্রান্তরের কাছে পৌঁছাই। সেখান থেকে ক্র্যাম্পনসহ প্রয়োজনীয় টেকনিক্যাল সরঞ্জামা পরে এক দড়িতে নিজেদের বেঁধে যাত্রা করি। ভোর ৬টার কাছাকাছি সময়ে আমরা প্রায় ৭০ থেকে ৯০ ডিগ্রি খাড়া কয়েকশ মিটার উচ্চতার এক দেয়ালের নিচে পৌঁছাই।
“সেই কঠিন দেয়ালে রোপ ফিক্স করেন নেপালি দলের নেতা কিলু পেম্বা শেরপা ও নিমা নুরু শেরপা। সেই দড়িতে শুরু হয় কষ্টকর জুমার ক্লাইম্বিং। এতই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল যে উপরের জনের পায়ের চাপে বরফ ও পাথর খসে পড়ছিল, যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারত মারাত্বক দুর্ঘটনা।”
মুহিত বলেন, “কষ্টকর সেই আরোহণ শেষে প্রায় ২৫ মিটার দীর্ঘ ভয়ঙ্কর ঝুঁকিপূর্ণ সরু এক রিজ লাইন পেরিয়ে আমরা ডোলমা খাং শীর্ষে পৌঁছাই। প্রথম বাংলাদেশি দল হিসেবে অভিযান এবং আরোহণের সাফল্যে আমরা আনন্দিত।"
অভিযানটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব ও ইমাজিন নেপাল। পৃষ্ঠপোষকতা করেছে ইস্পাহানী টি, স্কয়ার টয়লেট্রিজ ও ফার্স্ট সিকিওরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।
পুরনো খবর: