ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে দুই সপ্তাহ আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক এমদাদুল হক এই অভিযোগপত্র জমা দেন।
Published : 03 Jul 2023, 02:14 PM
ঢাকার আশুলিয়ায় হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার হত্যা মামলার কলেজছাত্র আশরাফুল আহসান জিতুকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।
এছাড়া জিতুকে পালাতে সহায়তা করায় তার বাবা উজ্জ্বল হোসেনকেও অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক এমদাদুল হক দুই সপ্তাহ আগে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেন।
অভিযোগপত্রে তিনি বলেছেন, “আসামি উজ্জ্বল ঘটনার পর আসামি জিতুকে অর্থ জোগান দিয়ে আত্মগোপনে থাকার জন্য সহায়তা করেন। তবে ঘটনার সঙ্গে অপর কোনো আসামির সংশ্লিষ্ট থাকার পক্ষে কোনো সাক্ষী পাওয়া যায়নি। আসামি জিতু গুরুতর আঘাত করে উৎপলকে হত্যা করেছে এবং উজ্জ্বল তাকে পলাতক থাকতে সহায়তা করেছেন।“
অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষে ৩৬ জনকে সাক্ষী রাখা হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান আদালত পুলিশের এস আই সাইফুল ইসলাম।
প্রসিকিউশন পুলিশের কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, “আগামী ৬ অগাস্ট অভিযোগপত্র গ্রহণ সংক্রান্ত কার্যক্রম হবে। আমরা বাদীকে অবহিত করব। তার কোনো আপত্তি না থাকলে অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হবে।“
কি ঘটেছিল?
২০২২ সালের ২৫ জুন দুপুরে আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্কুলমাঠে ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর আহত উৎপলকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুদিন পর তার মৃত্যু হয়।
ঘটনার পরদিন নিহতের ভাই অসীম কুমার সরকার বাদী হয়ে স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতুসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। পরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগরহাওলা গ্রামে এক বন্ধুর বাড়ি থেকে জিতুকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
উৎপলের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার এলংজানির দত্তপাড়ায়। তার বাবা অজিত কুমার সরকার মারা গেছেন উৎপল ছোট থাকতে। মা গীতাবালা সরকার এখনও জীবিত। স্ত্রী বিউটি রাণী নন্দী ঢাকায় চাকরি করেন।
আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষক উৎপল ছিলেন প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে।
শিক্ষক উৎপল কুমারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার বর্ণনায় কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান বলেছিলেন, “আমাদের স্কুলে মেয়েদের ক্রিকেট খেলা চলছিল। দুপুরে মাঠের একপাশে দাঁড়িয়ে থাকা উৎপলকে হঠাৎ করে এসে ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে এলোপাথাড়ি আঘাত করতে থাকে ওই ছাত্র।
“তিনি (উৎপল) ছাত্রদের বিভিন্ন সময় চুল কাটতে বলাসহ বিভিন্ন আচরণগত সমস্যা নিয়ে কাউন্সেলিং করতেন। বিভিন্ন অপরাধের বিচারও করতেন তিনি। হয়ত কোনো কারণে সেই শিক্ষকের ওপর ক্ষোভ থেকে ছাত্রটি এই ঘটনা ঘটিয়েছে।”
গ্রেপ্তার হওয়ার পর হাকিমের কাছে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে আসামি আশরাফুল ইসলাম জিতু অপরাধ স্বীকার করে বলেন, কলেজ ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীর সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠভাবে ঘোরাফেরা করায়’ শিক্ষক উৎপল তাকে সতর্ক করেছিলেন। তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে সে শিক্ষককে পেটানোর পরিকল্পনা করে। বয়সে বড় বান্ধবীর কাছে নিজের বীরত্বের প্রমাণ দেখাতে চেয়েছিল সে।
এ মামলার অপর আসামি জিতুর বাবা মোহাম্মদ উজ্জ্বল হোসেনও হাকিমের কাছে জবানবন্দি দেন। পরে গত বছরের ২৮ নভেম্বর হাই কোর্ট থেকে জামিন পান তিনি। তবে তার ছেলে জিতু এখনও কারাগারে।
পুরনো খবর
শিক্ষক উৎপল হত্যা: ফরেনসিক প্রতিবেদনের জন্য আটকে তদন্ত প্রতিবেদন
উৎপলের ভাইদের এখন আশুলিয়ায় ফিরতেও ভয়