শিক্ষক উৎপল হত্যা: ফরেনসিক প্রতিবেদনের জন্য আটকে তদন্ত প্রতিবেদন

এ বিষয়ে অগ্রগতির কোনো তথ্য সিআইডি কর্মকর্তারা দিতে পারেননি।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2023, 02:39 PM
Updated : 21 March 2023, 02:39 PM

ঢাকার আশুলিয়ায় হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আটকে আছে ফরেনসিক প্রতিবেদনের জন্য।

মামলার তদন্ত কমকর্তা আশুলিয়া থানার এস আই এমদাদুল হক মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সব কিছু শেষ, ১৬১ ধারায় সাক্ষীদের জবানবন্দি নেওয়া, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, সি সি ক্যামেরার ফুটেজের ফরেনসিক প্রতিবেদন– সব পেয়েছি। শুধু পাইনি ক্রিকেট স্ট্যাম্প, যা দিয়ে আঘাত করে পিটিয়ে  হত্যা করা হয়েছিল, তার ফরেনসিক প্রতিবেদন।

“সে কারণে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আশা করি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ থেকে তাড়াতাড়িই পেয়ে যাব।”

ফরেনসিক পরীক্ষার ওই প্রতিবেদন দেওয়ার কথা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি)। তবে এ বিষয়ে অগ্রগতির কোনো তথ্য সিআইডি কর্মকর্তারা দিতে পারেননি।

সোমবার ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার দিন ছিল। তবে তদন্ত কমকর্তা প্রতিবেদন দাখিলে আরও সময়ের আবেদন করেন। পরে বিচারক আগামী ১৫ মে প্রতিবেদন জমার পরবর্তী তারিখ রাখেন। 

২০২২ সালের ২৫ জুন দুপুরে আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্কুলমাঠে ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর আহত উৎপলকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুদিন পর তার মৃত্যু হয়।

Also Read: উৎপলের ভাইদের এখন আশুলিয়ায় ফিরতেও ভয়

Also Read: উৎপলকে হারিয়ে যেন সর্বহারা তার পরিবার

Also Read: উৎপল-বিউটির উদযাপনের লগ্ন এখন শোকের মঞ্চ

ঘটনার পরদিন নিহতের ভাই অসীম কুমার সরকার বাদী হয়ে স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতুসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। পরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগরহাওলা গ্রামে এক বন্ধুর বাড়ি থেকে জিতুকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

উৎপলের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার এলংজানির দত্তপাড়ায়। তার বাবা অজিত কুমার সরকার মারা গেছেন উৎপল ছোট থাকতে। মা গীতাবালা সরকার এখনও জীবিত। স্ত্রী বিউটি রাণী নন্দী ঢাকায় চাকরি করেন।

মামলার বাদী অসীম কুমার সরকারের মোবাইল ফোন গত দুই মাস থেকে বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে বিউটি নন্দীর ফোনও।

আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষক উৎপল ছিলেন প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে।

শিক্ষক উৎপল কুমারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার বর্ণনায় কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান বলেছিলেন, “আমাদের স্কুলে মেয়েদের ক্রিকেট খেলা চলছিল। দুপুরে মাঠের একপাশে দাঁড়িয়ে থাকা উৎপলকে হঠাৎ করে এসে ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে এলোপাথাড়ি আঘাত করতে থাকে ওই ছাত্র।

“তিনি (উৎপল) ছাত্রদের বিভিন্ন সময় চুল কাটতে বলাসহ বিভিন্ন আচরণগত সমস্যা নিয়ে কাউন্সেলিং করতেন। বিভিন্ন অপরাধের বিচারও করতেন তিনি। হয়ত কোনো কারণে সেই শিক্ষকের ওপর ক্ষোভ থেকে ছাত্রটি এই ঘটনা ঘটিয়েছে।”

গ্রেপ্তার হওয়ার পর হাকিমের কাছে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে আসামি আশরাফুল ইসলাম জিতু অপরাধ স্বীকার করে বলেন, কলেজ ক্যাম্পাসে এক মেয়ের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠভাবে ঘোরাফেরা করায়’ শিক্ষক উৎপল তাকে সতর্ক করেছিলেন। তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে সে শিক্ষককে পেটানোর পরিকল্পনা করে। বয়সে বড় বান্ধবীর কাছে নিজের বীরত্বের প্রমাণ দেখাতে চেয়েছিল সে।

এ মামলার অপর আসামি জিতুর বাবা মোহাম্মদ উজ্জ্বল হোসেনও হাকিমের কাছে জবানবন্দি দেন। পরে গত বছরের ২৮ নভেম্বর হাই কোর্ট থেকে জামিন পান তিনি। তবে তার ছেলে জিতু এখনও কারাগারে।