দগ্ধ কুলসুম মারা গেলেন সন্তানের স্পর্শ না পেয়েই

কুলসুমের সন্তান জন্মের পরপরই তার এবং শিশুর অবস্থা খারাপ হওয়ায় দুজনকে ‘এনআইএসইউ’ ও ‘আইসিইউতে আলাদা রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2023, 07:25 AM
Updated : 23 March 2023, 07:25 AM

নারায়ণগঞ্জে একটি ফ্ল্যাটে বিস্ফোরণে দগ্ধ হওয়া উম্মে কুলসুম সন্তান প্রসবের দশ দিনের মাথায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। 

জন্মের পর মা ও নবজাতক দুজনকে আলাদা করে ‘এনআইএসইউ’ ও ‘আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। ফলে একবারের জন্যও সন্তানকে স্পর্শ করে যেতে পারেননি কুলসুম। 

বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ‍ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে কুলসুমের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক সার্জন এসএম আইউব হোসেন। শরীরের ২৮ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল কুলসুমের। 

ডা. আইউব বলেন, “ভোরে বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কুলসুমের মৃত্যু হয়। জন্মের পর থেকে কুলসুমের নবজাতক সন্তানটি অসুস্থ থাকায় তাকে মায়ের কাছে নিতে পারেননি স্বজনেরা।“ 

তবে কুলসুমের তিন বছরের ছেলে দগ্ধ খালিদের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। 

গত ১২ মার্চ ফতুল্লার মাসদাইর এলাকায় খন্দকার ম্যানশন নামে ১০তলা ভবনের ষষ্ঠতলায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বাড়িতে থাকা অন্তঃসত্ত্বা কুলসুম বেগম ও তার তিন বছর বয়সী ছেলে খালিদ দগ্ধ হন। সেই সময় কুলসুমের ব্যবসায়ী স্বামী মো. মাসুদ বাসার বাইরে ছিলেন। 

দগ্ধদের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আনার পর কুলসুমকে গাইনি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়।পরদিন ১৩ মার্চ বেলা ১১টার দিকে এই তিনি একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। 

জন্মের পর মা ও শিশু দুজনের অবস্থাই খারাপ হওয়ায় নবজাতককে এনআইএসইউতে (নবজাতকদের বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্র) ও কুলসুমকে আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) রেখে চিকিৎসা চলছিল বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসক আইউব হোসেন। 

শিশুটি ‘গুরুতর’ অসুস্থ জানিয়ে কুলসুমের চাচা কাওসার আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চিকিৎসকরা আমাদের জানিয়েছেন শিশুটি এখনো শঙ্কামুক্ত নয়, তার ফুসফুস ঠিকমতো কাজ করছে না। বুধবারও শিশুটিকে রক্ত দিতে হয়েছে।“ 

দুঃখ করে তিনি বলেন, “মোবাইলে ছেলের ছবি তুলে কুলসুমকে দেখানো হয়েছিল। নিজের সন্তানকে কোলে না নিয়েই চলে যেতে হল কুলসুমকে। অবস্থা এমন যে চোখের পানি ফেলা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার ছিল না।“ 

ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহকারী পরিচালক আশরাফুল আলম বলেন, “ কুলসুমের এই শিশুটি এখনো সুস্থ নয়। তাকে এখন হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।“

তবে মায়ের সঙ্গে পুড়ে যাওয়া কুলসুমের তিন বছর বয়সী ছেলে খালিদের অবস্থা এখন ভালোর দিকে বলে জানান চিকিৎসক কাওসার আহমেদ।

“তবে খালিদ শুধু মায়ের কাছে যেতে চায়, তাকে সামলে রাখাও স্বজনদের জন্য অনেক কঠিন।“

কি ঘটেছিল?

পাইপে ছিদ্রের কারণে ঘরে জমা হওয়া গ্যাস থেকে খন্দকার ম্যানশনের ষষ্ঠ তলায় ওই বিস্ফোরণ হয় বলে প্রাথমিক ধারণার কথা জানিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।

কুলসুমের স্বামী মো. মাসুদ জানান, বিস্ফোরণের শব্দ শুনে ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে আগুন জ্বলতে দেখেন প্রতিবেশীরা।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আলম হোসেন জানান, তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন।

Also Read: বিস্ফোরণে দগ্ধ, হাসপাতালে প্রসব, মা ছেলে আইসিইউতে