বর্তমানে আইসিইউতে আছেন সাতজন; বাকিদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
Published : 14 Mar 2024, 09:31 PM
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গ্যাসের আগুনে দগ্ধ হয়ে যে ৩২ জন ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে একজনকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। আর শঙ্কামুক্ত হওয়ায় আরেকজন হাসপাতালের ছাড়পত্র পেয়ে বাসায় ফিরে গেছেন।
বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে রাব্বি নামের ১৩ বছরের কিশোরকে লাইফ সাপোর্টে দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তির পর তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। তার শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়েছে।
আর বৃহস্পতিবার ছাড়পত্র পাওয়া ২৪ বছর বয়সী আজিজুল হকের শরীরের ৩ শতাংশ দগ্ধ হয়।
বার্ন ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও আইসিইউ কনসালটেন্ট একরামুল হক সজল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিকালে ওই শিশুটিকে (রাব্বি) লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। এছাড়া আইসিইউতে যারা আছেন, তাদের কারও অবস্থাই ভালো না।
“তাদের সবার অবস্থাই খুব খারাপ। তাদের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। তার মধ্যে আবার ৮০ শতাংশ, ৯০ শতাংশ এমনকি ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত পুড়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই এদের কামব্যাক করার সুযোগ কম।”
বুধবার সন্ধ্যায় ইফতারের আগে আগে গ্যাসের আগুনে বিপুল সংখ্যক মানুষের দগ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক তেলিরচালা এলাকায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা জানান, যে বাসায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে গ্যাস বের হতে থাকা গরম সিলিন্ডার ভেজা চট দিয়ে মুড়িয়ে বাইরে রেখে যান পরিবারের কেউ একজন। স্থানীয়দের অনেকে কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে এসেছিলেন কী হচ্ছে সেটা দেখতে। সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বেরিয়ে যে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে, তা বুঝতে পারেনি কেউ।
সে সময় পাশের আরেকটি বাসায় চুলা ধরাতে গেলে পুরো রাস্তায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তাতেই দগ্ধ হয় সবাই।
ওই ঘটনার পর মারাত্মকভাবে দগ্ধ ৩২ জনকে রাতেই ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়। তাদের অর্ধেকেরই পোড়ার মাত্রা ৫০ শতাংশের বেশি।
রোগীদের প্রায় সবার অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
বৃহস্পতিবার সকালে বার্ন ইনস্টিটিউটে তিনি বলেন, “যারা এসেছেন তার মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি বার্ন আছে ১৬ জনের। ৯০ শতাংশ দগ্ধের রোগী ১০ জনের বেশি, তার মধ্যে বাচ্চা আছে।
“এতো বড় খারাপ ঘটনা, খুবই মর্মান্তিক, রোগীগুলোর এতো বাজে অবস্থা সবারই শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। কালকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে, তিনি আমাকে ফোন করেছিলেন, সর্বাত্মক চেষ্টা করার জন্য সরকার থেকে বারবার বলা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করবো। বাকিটা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল।"
ভর্তি রোগীরা শঙ্কামুক্ত নয় জানিয়ে ডা. সামন্ত লাল বলেন, “এদের মধ্যে ৬ জন অলরেডি আইসিইউতে আছেন। আপনারা তো বুঝতেই পারেন ৯০ শতাংশের বেশি বার্ন।"
পরে সুলাইমান মোল্লা (৪৫) নামের আরেকজনকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। তার শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিশুদের শরীরের ১০ শতাংশের বেশি এবং বয়স্কদের ১৫ শতাংশের বেশি পুড়ে গেলেই তাদের জীবনের ঝুঁকি থাকে। যাদের শরীর এর চেয়ে বেশি পুড়েছে, তাদের সবারই জীবন নিয়ে শঙ্কা আছে।”
গাজীপুরে গ্যাসের আগুনে দগ্ধ বেশিরভাগের অবস্থা ‘আশঙ্কাজনক’
ভেজা চট পেঁচিয়ে রাখা সিলিন্ডার দেখে কৌতূহলীদের ভিড়, তখনই আগুন