রায়ে বলা হয়েছে, বিনামূল্যে সকল প্রকার চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার।
Published : 15 Nov 2023, 02:42 PM
ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবনের দুই ঘটনায় ১০৪ শিশুর মৃত্যুতে ওষুধ প্রশাসনের ‘কঠিন দায়’ রয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে হাই কোর্ট।
পাশাপাশি ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধে একটি জাতীয় কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
মারা যাওয়া ওই ১০৪ শিশুর প্রত্যেকের পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে গত বছর যে রায় হাই কোর্ট দিয়েছিল, সেখানে এসব পর্যবেক্ষণ এবং নির্দেশনা এসেছে।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চ ২০২২ সালের ২ জুন ওই রায় ঘোষণা করে। বুধবার পূর্ণাঙ্গ রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
রায়ের আট দফা নির্দেশনায় বলা হয়েছে–
[১] বিনামূল্যে সকল প্রকার চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার এবং এ অধিকার তার বেঁচে থাকার অধিকারের অন্তর্ভুক্ত ঘোষণা করতে হবে।
[২] ওষুধে ভেজাল মিশ্রণ বন্ধে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(সি) অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
[৩] ১৯৯১ সালে ৭৬ জন এবং ২০০৯ সালে ২৮ জন – মোট ১০৪ জন শিশুর মৃত্যু ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষের কঠিন দায়।
[৪] এই ১০৪ শিশুর প্রত্যেকের পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হল। ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ ওই ক্ষতিপূরণের টাকা সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তি, ওষুধ কোম্পানি থেকে আদায় করতে পারবে।
[৫] একটি স্বাধীন ‘জাতীয় ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করতে হবে।
[৬] দরখাস্তকারীর সম্পূরক হলফনামায় বর্ণিত পরামর্শগুলো বিবেচনার জন্য প্রতিপক্ষদের নির্দেশ দেওয়া হল।
[৭] ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত জাতীয় ওষুধ নীতি-২০১৬ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
[৮] দেশের জনগণের চিকিৎসা সেবা অবকাঠামো যুক্তরাজ্যের আদলে গড়ে তুলতে হবে।
এ রায়ের অনুলিপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে পাঠাতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কী ঘটেছিল
১৯৯১ সালে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালসের ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবন করে ৭৬ শিশু মারা যাওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এরপর ২০০৯ সালে রীড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবনে আরও ২৮ শিশু মারা যাওয়ার অভিযোগে মামলা হয়।
এ দুই ঘটনা নিয়ে ওই সময় প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন যুক্ত করে ঘটনার দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি এবং যথাযথ নির্দেশনা চেয়ে ২০১০ সালে হাই কোর্টে জনস্বার্থে রিট আবেদন করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)।
সেই রিট আবেদনের বিষয়ে তখন শুনানি শেষে রুল জারি করে সংশ্লিষ্টদের ব্যাখ্যা নেয় আদালত। পরে ২০২২ সালে রুল নিষ্পত্তি করে আদালত ক্ষতিপূরণের রায় দেয়।
রীড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবন করে ২০০৯ সালের জুন থেকে অগাস্ট পর্যন্ত সময়ে দেশে ২৮টি শিশুর মৃত্যুর অভিযোগে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক মো. শফিকুল ইসলাম ঢাকার ড্রাগ আদালতে একটি মামলা করেন। সেখানে রীড ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমানসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়।
পরে ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর ঔষধ আদালত এ মামলার রায় দেয়। রায়ে পাঁচ আসামির সবাই খালাস পেয়ে যান। বাকি চার আসামি হলেন- মিজানুরের স্ত্রী কোম্পানির পরিচালক শিউলি রহমান, পরিচালক আব্দুল গণি, ফার্মাসিস্ট মাহবুবুল ইসলাম ও এনামুল হক।
ওই ঘটনার আরও দুই দশক আগে ১৯৯১ সালে অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালসের ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবন করে ৭৬ শিশু মারা যাওয়ার অভিযোগ উঠে।
ওই সময় অ্যাডফ্লেমের প্যারাসিটামলে বিষাক্ত উপাদান থাকায় বহু শিশু কিডনি সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাদের মধ্যে অন্তত ৭৬ জনের মৃত্যু হয়।
মামলা হলে ১৯৯৩ সালে অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালসের প্যারাসিটামল সিরাপে ডাই-ইথিলিন গ্লাইকলের উপস্থিতি ধরা পড়ে। ওই বছর জানুয়ারিতেই মামলা করেন ওষুধ প্রশাসনের পরিদর্শক আবুল খায়ের চৌধুরী।
ড্রাগ আদালতের বিচারক ২০১৪ সালের ২২ জুলাই অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালসের অন্যতম মালিক, ব্যবস্থাপকসহ তিনজনের ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়।
আরও পড়ুন:
ভেজাল প্যারাসিটামল: মৃতদের পরিবারকে ১৫ লাখ করে দিতে হবে ঔষধ প্রশাসনকে