পঙ্কজ ভট্টাচার্যের শেষকৃত্য মঙ্গলবার

মঙ্গলবার বিকাল ৪টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য পঙ্কজ ভট্টাচার্যের কফিন রাখা হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।

ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য। ছবি ফেইসবুক থেকে নেওয়া।

প্রবীন রাজনীতিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্যের শেষকৃত্য হবে মঙ্গলবার পোস্তাগোলা মহাশশ্মানে।

সোমবার সকা্লে ঐক্য ন্যাপের এসএম সবুরের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয় বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদ।

তিনি বলেন, “প্রয়াত নেতার বন্ধু-বান্ধবসহ আমরা যারা তার সহকর্মী ছিলাম, তারা আজকে সকালে হেলথ অ্যান্ড হোপ হসপিটালে বসেছিলাম। সেখানে পঙ্কজ দার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলবার বিকাল ৪টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কফিন রাখা হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখান থেকে শেষকৃত্যের জন্য মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে পোস্তাগোলায় মহাশশ্মানে।

এসএম সবুরের সভাপতিত্বে বৈঠকে ড. সারোয়ার আলী, রামেন্দ্র মজুমদার, কাজল দেবনাথ, তবারক হোসেন, নুর মো. তালুকদার, হারিছ উদ্দিন, লেলিন চৌধুরী, আসাদুল্লাহ তারেক, সাঈদ আহমেদ, অসীম বরণ রায় সহ ঐক্য ন্যাপের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

শেষকৃতের আগ পর্যন্ত পঙ্কজ ভট্টাচার্যের মরদেহ থাকবে শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে।

রোববার রাত ১২টা ২০ মিনিটে রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে মারা যান পঙ্কজ ভট্টাচার্য। তার বয়স হয়েছিলো ৮৪ বছর।

নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে গত ১৭ এপ্রিল তাকে পান্থপথের ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

বামপন্থি আদর্শে বিশ্বাসী এ রাজনীতিকের জন্ম ১৯৩৯ সালের অগাস্টে চট্টগ্রামের রাউজানের নোয়াপাড়া গ্রামে। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে।

১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি ও পরে কার্যকরী সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি।

ষাট দশকের ছাত্র আন্দোলনের সময় থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সব গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন বাম দলের (ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন-কমিটিউনিস্ট পার্টি) গেরিলা বাহিনীর সংগঠক ছিলেন।

১৯৬৭ সালে পঙ্কজ ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ‘স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র’ মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছাকাছি সেলেই রাখা হয়। তখন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহচার্য পান এবং তাদের মধ্যে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে উঠে।

স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

বাংলাদেশের সব আন্দোলন-রাজনৈতিক পালাবদলের প্রত্যক্ষদর্শী এই রাজনীতিবিদ ১৯৯৩ সালে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ছিলেন গণফোরামের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।

পরে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন নামে দেশের প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক মানুষের একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলেন।

চলে গেলেন প্রবীণ রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্য

২০১০ সালে পঙ্কজ ভট্টচার্য ঐক্য ন্যাপ প্রতিষ্ঠা করেন। সারাজীবন তিনি বাম রাজনীতির আদর্শ নিয়ে জীবন কাটিয়েছেন।

রাজনীতির বাইরে একসময় তিনি একজন কৃতি ফুটবলার ছিলেন।

প্রবীণ এই রাজনীতিকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে।

এ বছরের অমর একুশে বইমেলায় পঙ্কজ ভট্টচার্য এর আত্মজীবনীমূলক বই ‘আমার সেই সব দিন’ প্রকাশিত হয়।