প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাংকক সফরে পাঁচটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে।
Published : 22 Apr 2024, 06:45 PM
বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড; প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাংকক সফরে এ বিষয়ে একটি আগ্রহপত্র সই করতে যাচ্ছে দুই দেশ।
প্রধানমন্ত্রীর থাইল্যান্ড সফর নিয়ে সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে দ্বিপক্ষীয় সফরে বুধবার ব্যাংককে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পাঁচ দিনের এই সফরে জাতিসংঘের এশিয়া প্রশান্তমহাসগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনইএসসিএপি) ৮০তম অধিবেশনেও যোগ দেবেন তিনি।
হাছান মাহমুদ জানান, সরকারপ্রধানের এই সফরে এফটিএ’র আলোচনা শুরুর বিষয়ে ‘লেটার অব ইনটেন্ট’ সই করার পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে চারটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে।
“মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরুর জন্য লেটার অব ইনটেন্ট সই করা হবে। আমরা যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরু করব, সেজন্য লেটার অব ইনটেন্ট। আমরা দুইপক্ষই আগ্রহী।”
থাইল্যান্ডের হাতে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানির সুযোগ থাকায় দেশটির সঙ্গে বরাবরই বড় রকমের বাণিজ্য ঘাটতিতে থাকে বাংলাদেশ। এ কারণে বেশ কিছু পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে বাণিজ্য সুবিধা চেয়ে আসছে সরকার।
ব্যাংক অব থাইল্যান্ডের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১১৮ কোটি ডলারের বেশি। এর মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানির হিস্যা ৯ কোটির ডলারের মত।
২০২২ সালেও বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ডে পণ্য গেছে মাত্র ৮ কোটি ৩১ লাখ ডলারের; বিপরীতে আমদানি হয়েছে ১১৭ কোটি ডলারের পণ্য।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বড় রকমের এই তফাৎ কমিয়ে আনতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছে সরকার।
শেখ হাসিনার সফরে অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত চুক্তি এবং জ্বালানি, পর্যটন ও শুল্ক সংক্রান্ত পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ক তিনটি পৃথক সমঝোতা স্মারক সই হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এই সফরের মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির জন্যে ‘মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির’ পর্যালোচনার পাশাপাশি অন্যান্য অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়, বিশেষত বিনিয়োগ, পর্যটন, জ্বালানি, স্থল এবং সমুদ্র সংযোগ, উন্নয়ন প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা বর্ধিতকরণের বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হবে।”
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড পর্যটন খাতের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে মানবসম্পদ উন্নয়ন, বৌদ্ধ সার্কিট পর্যটন প্রচারণা, পর্যটন অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে যৌথ কার্যক্রম ও দক্ষতা বিনিময়ের মাধ্যমে পারস্পরিক সুবিধা অর্জন করতে পারে।
“পর্যটন শিল্পে এই সহযোগিতার ফলে উভয় দেশে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতি করা হলে উভয় দেশের সরকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগাযোগ সহজতর হবে এবং বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও প্রশিক্ষণে সরকারী কর্মকর্তারা সময়মতো যোগদান করতে পারবেন।”
২৬ এপ্রিল গার্ড অব অনার প্রদানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করবেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী শ্রেথা থাভিসিন।
এরপর থাইল্যান্ডের গভর্নমেন্ট হাউসে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। একই দিন প্রধানমন্ত্রী শ্রেথার আয়োজনে রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা।
সফরে থাইল্যান্ডের রাজপ্রাসাদে দেশটির রাজা ভাজিরালংকর্ন এবং রানী সুথিদার সঙ্গেও সাক্ষাৎ হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সার্বিক দিক বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর সফর দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচন করবে বিধায় এটি উভয় দেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ।”
দ্বিপক্ষীয় আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগে ২৫ এপ্রিল ইউএনইএসসিএপি’র ৮০তম অধিবেশনের শুরুতে জাতিসংঘ এজেন্ডা ২০৩০ ও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বিষয়ে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের নির্বাহী সচিব আরমিডা সালসিয়াহ আলিশাবানা সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
রোহিঙ্গাদের ফেরাতে থাইল্যান্ডের সহযোগিতা ‘চাওয়া হবে’
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরানোর ক্ষেত্রে আসিয়ানের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য থাইল্যান্ডের সহযোগিতা চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, “এ সফরে আসিয়ানের ‘সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার’ মর্যাদা প্রাপ্তির জন্য বাংলাদেশের আবেদনের বিষয়ে আরও জোরালোভাবে অনুরোধ করা হবে।
“এছাড়া, মিয়ানমারে চলমান রাজনৈতিক সংঘাতে এবং রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন নিশ্চিতকরণে থাইল্যান্ডসহ আসিয়ান সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে অধিকতর সক্রিয় ও কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য জোরালো আহ্বান জানানো হবে।”
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, “আমরা যেমন মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত মানুষকে আশ্রয় দিয়ে নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি এবং এ সমস্যাটা গত সাত বছর ধরে জিইয়ে রাখা হয়েছে বা মিয়ানমার তাদেরকে ফেরত নেয়নি।
“একইসাথে মিয়ানমার থেকে অনেক বিতাড়িত মানুষ থাইল্যান্ডেও আশ্রয় নিয়েছে। তারাও একই সমস্যা মোকাবেলা করেছে। সুতরাং স্বাভাবিকভাবে এই আলোচনাগুলো হবে।”
তিনি বলেন, “একইসাথে আসিয়ান দেশগুলোর বিরাট একটা প্রভাব রয়েছে, মিয়ানমারের ওপর। যেহেতু মিয়ানমার আসিয়ানের সদস্য, আসিয়ানের একটি বোনাফাইড সদস্য হচ্ছে থাইল্যান্ড।
“সুতরাং তাদের সহযোগিতা আমরা আগেও চেয়েছি, এখনও তাদের সহযোগিতা আমরা চাইব। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িতদের, মিয়ানমার যেন তাদের নাগরিকদের সসম্মানে ফেরত নিয়ে যায়।”
থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়ে সফরে আলোচনা হবে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমাদের নৌ বাণিজ্য এবং অন্যান্য বিষয়ে অবশ্যই আলোচনা হবে। কানেক্টিভিটির ক্ষেত্রে নৌ, আকাশ ও সড়কপথে সব বিষয় রয়েছে।”
দুদেশের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরুর লক্ষ্যে ২০২১ সালে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছিল থাইল্যান্ডের বন্দর কর্তৃপক্ষ (পিএটি) এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখনো সেই চুক্তির বাস্তবায়ন হয়নি।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে চট্টগ্রাম-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাছান মাহমুদ বলেন, “এগুলো আলোচনা হবে। আমি এই বিষয়টি তুলে ধরতে খুব আগ্রহী।”