“সন্তান কতটা শিখছে, কতটা ভাল মানুষ হচ্ছে, তার দৃষ্টি কতটা প্রসারিত হচ্ছে, মানবিক মানুষ হয়ে উঠছে কি না- সেই বিষয়গুলো দেখাও জরুরি,” বলেন দীপু মনি।
Published : 13 Sep 2022, 07:19 PM
আগামী বছর থেকে নতুন যে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হতে যাচ্ছে, তা বাস্তবায়নে দৃষ্টিভঙ্গিকে বড় বাধা হিসেবে দেখছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “একভাবে পড়িয়ে আমরা অভ্যস্ত। আমাদের অভিভাবকরাও এক ধরনের শিক্ষাব্যবস্থায় অভ্যস্ত। তার সন্তান কত নম্বর পেল, শ্রেণিতে কোন জায়গায় তার অবস্থান, সেগুলো থেকে বেরিয়ে এসে তার সন্তান কতটা শিখছে, কতটা ভালো মানুষ হচ্ছে, তার দৃষ্টি কতটা প্রসারিত হচ্ছে, মানবিক মানুষ হয়ে উঠছে কি না- সেই বিষয়গুলো দেখাও জরুরি।
“নইলে আমাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে দূরত্ব বেশি হলে আমরা নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে সফল হব না। প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের সকলের ভূমিকা রয়েছে।”
রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে জাতীয় শিক্ষা রূপরেখা-২০২১ এর অনলাইন প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন দীপু মনি।
এই রূপরেখা অনুযায়ী, তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কোনো পরীক্ষা দিতে হবে না। আর নবম ও দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক কিংবা বাণিজ্যের মত বিভাগ থাকবে না। শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষেই যেন অধিকাংশ পাঠ গ্রহণ করতে পারে, সেই ব্যবস্থা নতুন শিক্ষাক্রম রাখা হয়েছে।
শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোথাও কোনো ভুল বা সমস্যা থাকলে, সেগুলো ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “কোনো ভুল থাকলে ধরিয়ে দিন, এক্ষেত্রে চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যাবেন না। এই শিক্ষাক্রম যতখানি নিঁখুত সম্ভব, আমরা করতে চাই। সবার প্রচেষ্টার মাধ্যমেই সেটি করতে আমরা সক্ষম হব।”
নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন হবে যেভাবে
শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ‘মূল সেনানী’ হিসেবে বর্ণনা করে দীপু মনি বলেন, “আমাদের শিক্ষকরা এতদিন যে আঙ্গিকে শিখন-শেখানোর কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন, এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে পরিচালনা করা হবে। শিক্ষায় যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন, এতে শিক্ষকদের প্রস্তুত করতে প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই।
“এজন্য মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রত্যেক শিক্ষককে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। সারা দেশের সকল শিক্ষককে একই সময়ে একই প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।”
অনুষ্ঠানে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখার অনলাইন প্রশিক্ষণের অ্যাপ উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী। চার লাখেরও বেশি শিক্ষককে নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
দীপু মনি বলেন, “এই অনলাইন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকরা বুঝতে পারবে, এই কারিকুলামে তাদের ভূমিকা কী থাকবে, তারা নিজেদের প্রস্তুতের সুযোগ পাবে।”
২০২৫ সাল নাগাদ নতুন শিক্ষাক্রম পুরোপুরি বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণির বইয়ে ও পড়াশোনায় পরিবর্তন আসবে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, “আমরা নতুন বছরে যে বইগুলো হাতে দেব, সেগুলোই চূড়ান্ত নয়। আমরা যে ফিডব্যাক পেয়েছি, তার ওপর ভিত্তি করেই বইগুলো তৈরি করেছি। ৭/৮ মাসের পাইলটিংয়ের ফলেই আমরা সবকিছু চূড়ান্ত করছি না।
“৬২টি স্কুলে পাইলটিং চলছে, আগামী বছর থেকে দেশের ৩৩ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হবে। শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থীরা কী পরিবর্তন চায়, আমরা যত ফিডব্যাক পেতে থাকব, তার আলোকে বইয়ে পরিবর্তন আনব। এটি চলতে থাকবে।”
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বক্কর ছিদ্দীক, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. কামাল হোসেন ও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. ফরহাদুল ইসলাম।