এবার মেলায় যেসব ত্রুটি ছিল তা আগামীবার সংশোধনের কথা বলেছেন মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক নূরুল হুদা।
Published : 02 Mar 2024, 10:00 PM
বই বিক্রি নিয়ে মেলা চলাকালীন সময়ে প্রকাশকরা নানান কথা বললেও বিক্রি আগের চেয়ে উল্লেখযোগ পরিমাণ বাড়ার তথ্য জেনেই মাসব্যাপী বইমেলার স্টল গোটাচ্ছেন অংশগ্রহণকারীরা।
মেলা শেষের দিন শনিবার এসে জানা গেল, এবারের একুশে বইমেলায় বিক্রি ও বই প্রকাশের সংখ্যা দুটোই। এবার ৬০ কোটি টাকার কেনাবেচার তথ্য দিয়ে মেলা পরিচালনা কমিটি বলছে, আগেরবার ৪৭ কোটি টাকার বই কিনেছিলেন ক্রেতারা।
এবার নতুন বই এসেছে ৩ হাজার ৭৫১টি, যা ২০২৩ সালে ছিল ৩ হাজার ৭৩০টি।
শনিবার বিকালে মেলার মূল মঞ্চে বইমেলার সমাপনি অনুষ্ঠানে এসব তথ্য দিয়েছে মেলা পরিচালনা কমিটি। এতে বইমেলার প্রতিবেদন তুলে ধরেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক সাহেদ মন্তাজ।
দুই দিন সময় বাড়িয়ে মাসব্যাপী এ মেলা শেষ হয় শনিবার রাতে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, "আমাদের বইমেলার মতো বইমেলা পৃথিবীর আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমাদের বইমেলা আবেগের বইমেলা, জাতির অভিপ্রায়ের বইমেলা।"
একুশে ফেব্রুয়ারিতে সাহিত্য সংকলন প্রকাশ না হওয়ার আক্ষেপও ঝড়ে তার কণ্ঠে। তিনি বলেন, "আগে একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে নানা রকম সাহিত্য সংকলন বের হত। এখন তেমনটি দেখা যায়নি। আমরা আবার সেটি নিয়ে চিন্তা করতে পারি, কীভাবে নানা রকম চিন্তার সাহিত্য সংকলন প্রকাশ করা যায়।"
শুক্রবার রাতে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন নাহিদ ইজাহার খান। বইমেলার সমাপনি অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, “গত পহেলা ফেব্রুয়ারি বইমেলা যখন শুরু হয়, উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমি এসেছিলাম। তখনও ভাবতে পারিনি আমি সমাপনি অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে অংশ নেব।“
এটিই প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ বলে জানান তিনি।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক নূরুল হুদা বলেন, "এবার মেলায় আমরা কিছু ত্রুটির সম্মুখিন হয়েছি। সাংবাদিকরাও সেসব ত্রুটি নিয়ে লিখেছেন, আগামীবার আমরা সেই ত্রুটি সংশোধন করার চেষ্টা করব।"
মেলা বাংলা একাডেমিতে থাকবে তো?
একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে বইমেলা আগামী বছর চলে যাবে বলে যে গুঞ্জন উঠেছে তা নিয়েও বক্তব্য উঠে আসে অনুষ্ঠানে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, “আমরা নতুন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী পেয়েছি। আমি নতুন প্রতিমন্ত্রীকে বইমেলার স্থান পরিবর্তনের আলোচনার বিষয়ে বলেছি।তিনি আমাকে বলেছেন- মেলা কীভাবে বাংলা একাডেমিতে রাখা যায়। প্রয়োজনে সামনের রাস্তাটি ব্যবহার করে এখানে রাখা যায় কি না, সেই চেষ্টা করা হবে। এবার মেলা যেভাবে আছে, আগামী বছর সেভাবেই হবে বলে আশা করছি।“
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ বলেন, "বইমেলা কীভাবে একটি স্থায়ী কাঠামোতে যেতে পারে, সেটি নিয়ে ভাবা হচ্ছে।"
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান বলেন, "আমি কোনো প্রতিশ্রুতি দেই না। আমি জেনেছি, আগামীবার এই মাঠে বইমেলা করার অনুমোদন পাওয়া যাবে না। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব, কীভাবে বইমেলা এই প্রাঙ্গণে রাখা যায়।"
পুরস্কার
অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে যেসব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘গুণিজন স্মৃতি পুরস্কার’ পেতে যাচ্ছে, তাদের নামের তালিকা আগেই প্রকাশ করেছিল বাংলা একাডেমি।
শনিবার মেলার সমাপনি অনুষ্ঠানে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
২০২৩ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কথাপ্রকাশ পায় চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার ২০২৪।
গত বছর প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা বই হিসেবে নির্বাচিত মনজুর আহমদ রচিত ‘একুশ শতকে বাংলাদেশ: শিক্ষার রূপান্তর' এর জন্য প্রথমা প্রকাশন, মঈন আহমেদ রচিত ‘যাত্রাতিহাস: বাংলার যাত্রাশিল্পের আদিঅন্ত' এর জন্য ঐতিহ্য এবং আলমগীর সাত্তার রচিত ‘কিলো ফ্লাইট' এর জার্নিম্যান বুকসকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়।
২০২৩ সালে গুণমান বিচারে সর্বাধিক সংখ্যক শিশুতোষ বই প্রকাশের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ময়ূরপঙ্খি পায় রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার।
এছাড়া নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেঙ্গল বুকস, নিমফিয়া পাবলিকেশন ও অন্যপ্রকাশকে কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৪ প্রদান করা হয়।