দুর্বলতা থাকলে বাংলাদেশ থেকে ‘নিতে পারেন’: যুক্তরাজ্যকে মোমেন

“আমি বলেছি যে, আমরা একটি বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ, সুন্দর, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চাই।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 March 2023, 07:23 PM
Updated : 12 March 2023, 07:23 PM

স্বচ্ছ, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য বাংলাদেশে সব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে বলে দাবি করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

রোববার ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আন-ম্যারি ট্রেভেলিয়ানের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এই দাবি করেন। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাজ্যকেই বাংলাদেশ সহায়তা দিতে পারে।

পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মোমেন বলেন, “আমি বললাম যে, আমরা এটা তৈরি করেছি এবং আমরা জনগণের উপর বিশ্বাস রাখি। সুতরাং জনগণ অত্যন্ত সেয়ানা, তারা অত্যন্ত পরিপক্ব, ভোটের সময় তারা কখনও ভুল ভোট দেয় না। সুতরাং আপনাদের এসব নিয়ে দুঃশ্চিন্তার কোনো কারণ নাই।

“আমাদের রক্তে রয়েছে গণতন্ত্র, আমাদের রক্ত হচ্ছে ন্যায়পরায়ণতা, আমাদের রক্তের মধ্যে আছে ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার। সুতরাং আমাদের এগুলো নিয়ে আপনাদের, অন্য কেউ, শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ নাই। আপনারা দেখেন, আপনাদের যদি দুর্বলতা থাকে, আমাদের থেকে নিতে পারেন কিছু।”

মোমেনের সঙ্গে দেখা করতে রোববার বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান সফররত ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী আন-ম্যারি ট্রেভেলিয়ান।

বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের এক বছর বাকি থাকতে পশ্চিমাদের নানা প্রতিক্রিয়া আসছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত সাত দেশের কূটনীতিকরা রোববার বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করে। পশ্চিমাদের এমন সব তৎপরতার সমালোচনা করে আসছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।

যুক্তরাজ্যের প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনের বিষয়টি তিনি আগে তুলেছেন বলে জানান মোমেন।

তিনি বলেন, “আমি নিজেই বলেছি যে, আমাদের দেশে আগামী নির্বাচন, উনারা জিজ্ঞেসও করেন নাই।

“আমি বলেছি যে, আমরা একটি বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ, সুন্দর, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চাই। সেজন্য যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা উচিৎ, আমরা সেগুলো গড়ে তুলেছি। আমাদের ১৪ বছরে বহু নির্বাচন হয়েছে, সময় সময় নির্বাচন হচ্ছেই এবং সেটার প্রেক্ষিতে আমরা ফটো আইডি তৈরি করেছি, যাতে আগের মতো কারচুপি না হয়।”

বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্র, স্বচ্ছ ব্যালট বক্স তৈরির পাশাপাশি ‘শক্তিশালী, স্বাধীন ও গ্রহণযোগ্য’ নির্বাচন কমিশন গঠনের কথাও তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমরা অত্যন্ত শক্তিশালী, স্বাধীন ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন করেছি। তাদের অসম্ভব বেশি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তাদের বাজেটটাও স্বাধীন এবং নির্বাচনের সময় তারা যা চায়, তাই করতে পারেন, তখন অন্য কারও কোনো ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ থাকে না।

“এসব প্রতিষ্ঠান আমরা তৈরি করেছি, উদ্দেশ্য হচ্ছে আমরা স্বচ্ছ, সুন্দর, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চাই। আর আমাদের বিশ্বাস যে, জনগণ আমাদের ভোট দেবে, কারণ গত ১৪ বছরে বাংলাদেশের চেহারা বদলে গেছে।”

নির্বাচন নিয়ে এসব বক্তব্য দেওয়ার পর ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রীর কী প্রতিক্রিয়া ছিল, এমন প্রশ্নে মোমেন বলেন, “উনি এই সম্পর্কে কিছু বলেন নাই, শুনেছেন।

“উনি বলেছেন যে, গণতন্ত্রে ভিন্নমত থাকতে পারে। আমি বলেছি, অবশ্যই ভিন্নমত (থাকতে পারে), আমরা এটাকে উৎসাহিত করি।”

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সহযোগিতার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নে মোমেন বলেন, “কোনো কথা হয় নাই।”

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা বললাম যে, মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার জন্য। বললেন যে, ‘নতুন সেনা সরকারের সাথে আমাদের কোনো সংলাপ হয়েছে কি-না’। আমরা বললাম, ‘হ্যাঁ হয়েছে এবং খুব শিগগির ওদের কিছু প্রতিনিধি দেশে আসবেন। রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখার জন্য’।”

রাখাইনের পরিস্থিতি দেখার জন্য সম্প্রতি মিয়ানমারে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “ওরা রাখাইনে নিয়ে গেছে কয়েকজন রাষ্ট্রদূতকে, আমাদের জনসহ, দেখাতে যে তারা ওখানে কী কী ঘরবাড়ি তৈরি করেছে, রোহিঙ্গাগুলো ফেরত গেছে কোথায় থাকতে পারে। সুখবর দিচ্ছে; দোয়া করেন, যাতে সত্যি সত্যি ওরা যেতে পারে।”