এ ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য যে গতিপথ, তাতে বাংলাদেশের দিকে আসার শঙ্কা দেখছে না আবহাওয়া অধিদপ্তর।
Published : 03 Dec 2023, 10:46 AM
দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরো ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেওয়ায় বন্দরে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত জারি করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেওয়ার পর এ ঘূর্ণিবায়ুর চক্র নাম পেয়েছে মিগযাউম (Michaung, উচ্চারণ Migjaum), যা মিয়ানমারের দেওয়া নাম।
এ ঘূর্ণিবায়ুর চক্রের সম্ভাব্য যে গতিপথ, তাতে বাংলাদেশের দিকে আসার শঙ্কা দেখছে না আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদ মো. আবুল কালাম মল্লিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘূর্ণিঝড়টি দক্ষিণ অন্ধ্র উপকূল অতিক্রম করতে পারে আগামী মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যার মধ্যে। তবে এটি আমাদের দিকে আসার কোনো সম্ভাবনা নাই।”
গত ২৮ নভেম্বর দক্ষিণ আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ দশা পেরিয়ে পরিণত হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ে।
আবুল কালাম মল্লিক বলেন, বাংলাদেশের দিকে না এলেও সম্ভাব্য এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আগামী মঙ্গলবার দেশের উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাত হবে।
“খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে রাজশাহী ও রংপুরের দিকে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সিলেটের দিকে সামান্য হতে পারে।”
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় মিগযাউম রোববার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৫৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৪৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
ওই সময় গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত নামিয়ে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
ভারতীয় আবহাওয়া অফিস বলছে, বর্তমান অবস্থান থেকে উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে হতে আরও ঘনীভূত হবে ঘূর্ণিঝড় মিগযাউম। রোববার সকাল নাগাদ পরিণত হতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে। উত্তরপশ্চিম দিকে এগিয়ে সোমবার দুপুর নাগাদ দক্ষিণ অন্ধ্র প্রদেশ ও সংলগ্ন উত্তর তামিলনাড়ু উপকূলের কাছে পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগরে পৌঁছাতে পারে এ ঘূর্ণিবাত্যা।
তারপর ভারতীয় উপূকল রেখার মোটামুটি সমান্তরালে উত্তরপশ্চিম দিকে এগিয়ে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে নেল্লোর ও মাচিলিপত্তমের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে দক্ষিণ অন্ধ্র উপকূল অতিক্রম করতে পারে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মিগযাউম।
তখন ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ হতেপারে ঘণ্টায় ৮০-৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার ডে পূর্বাভাস দিয়েছে, সেখানেও এ ঝড়ের সম্ভাব্য গতিপথ দেখানো হয়েছে একইরকম।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া সবশেষ ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ গত ১৭ নভেম্বর দুপুরে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানে। তাতে গাছপালা ও ফসলের ক্ষতি ছাড়াও মৃত্যু হয় নয়জনের।