বিচারকদের গালাগালি-ধমক দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে।
Published : 10 Jan 2023, 06:21 PM
বিচারকের বিরুদ্ধে স্লোগান, গালাগালি দিয়ে আদালতের কাজে বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগের মুখে থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আরও ২১ জন আইনজীবীকে হাই কোর্টে তলব করা হয়েছে।
ওই ঘটনা নিয়ে স্থানীয় আইনজীবীদের আন্দোলনের মধ্যে মঙ্গলবার বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেয়।
তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুলও জারি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তার জবাব দিতে আগামী ২৩ জানুয়ারি ওই আইনজীবীদের হাজির হতে বলা হয়েছে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় সাংবাদিকদের বলেন, “ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২১ আইনজীবীকে ডাকা হয়েছে। তাদেরকে আগামী ২৩ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে।”
এই ২১ আইনজীবীর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মফিজুর রহমান বাবুল রয়েছেন। অন্যরা হলেন- মো. মিনহাজুল ইসলাম, এমদাদুল হক হাদি, নিজামুদ্দিন খান রানা, আনিছুর রহমান মঞ্জু, মো. জুম্মান চৌধুরী, রাশেদ মিয়া হাজারী, জাহের আলী, মো. আবদুল আজিজ খান, দেওয়ান ইফতেখার রেজা রাসেল, মো. ছদর উদ্দিন, মাহমুদুরু রহমান রনি, মো. মাহবুবুর রহমান, মো. আরিফুল হক মাসুদ, মীর মোহাম্মদ রাইসুল আহম্মেদ, মহিবুর রহমান, মো. জাকারিয়া আহমেদ, মো. মোবারক উল্লা, মো. ফারুক আহমেদ, সফিক আহমেদ ও ইকবাল হোসেন।
এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. তানভীর ভূঁইয়া, সম্পাদক (প্রশাসন) মো. আক্কাস আলী এবং আইনজীবী জুবায়ের ইসলামকে তলবের আদেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। তাদের ১৭ জানুয়ারি হাই কোর্টে হাজির হতে বলা হয়েছে।
তিন বিচারককে সরানোর দাবিতে আইনজীবীদের আন্দোলনের কারণে গত ১ জানুয়ারি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিচার কাজ বন্ধ রয়েছে।
আদালত সংশ্লিষ্টরা জানান, ঘটনার সূত্রপাত গত ১ ডিসেম্বর। সেদিন ছিল জেলা জজ আদালতের বছরের শেষ কার্যদিবস। একটি মামলা দায়েরকে কেন্দ্র করে আইনজীবী সমিতির নেতাসহ একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের কথা কাটাকাটি হয়েছিল।
এরপর এক মাসের অবকাশের মধ্যে জেলা আইনজীবী সমিতি ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুক এবং জেলা জজ শারমিন নিগারের অপসারণের দাবি তোলে। তাদের আদালত বর্জনের ঘোষণাও দেয়।
ছুটি শেষে আদালত খোলার পর ১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালে গিয়ে ফের বিচারক ফারুকের সঙ্গে তর্কে জড়ান আইনজীবীরা। ওই ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একজন আইনজীবী আদালত বর্জনের কথা বলে বিচারককে এজলাস থেকে নেমে যেতে বলেন। কথাবার্তার একপর্যায়ে আইনজীবীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এ সময় তারা বিচারকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং উচ্চস্বরে গলাগালি করেন।
পরদিন বিচারকি ফারুক এই আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়ে চিঠি দেন সুপ্রিম কোর্টে। তার পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া বারের সভাপতিসহ তিনজনকে তলবের আদেশ দেয়।
এদিকে এরপর থেকে আদালত বর্জনের করে নানা কর্মসূচি পালনের সময় জেলা জজ শারমিন নিগারের নামে কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ ওঠে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে। তাতে এই নারী বিচারকও সুপ্রিম কোর্টে চিঠি দিয়ে প্রতিকার চান।
তার পরিপ্রেক্ষিতে বারের সাধারণ সম্পাদকসহ ২১ আইনজীবীকে তলব করল হাই কোর্ট।