রাষ্ট্রীয় সম্মানে সাংবাদিক ইহসানুল করিমকে শেষ বিদায়

বাসসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক ইহসানুল করিম ২০১৫ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তার আগে ছিলেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2024, 08:00 AM
Updated : 11 March 2024, 08:00 AM

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব, প্রবীণ সাংবাদিক ইহসানুল করিম হেলালের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার সহকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।

সোমবার সকালে তার কফিন জাতীয় প্রেসক্লাবে নেওয়া হলে সাংবাদিকরা ফুল দিয়ে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। সেখানে জানাজার পর রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয় একাত্তরের এই বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি।   

রোববার রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিসাধীন অবস্থায় মারা যান ইহসানুল করিম, তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর বছর। হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।

জাতীয় বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক ইহসানুল করিম ২০১৫ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তার আগে ছিলেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব।

সোমবার সকালে এলেনবাড়ি জামে মসজিদে এক দফা জানাজার পর ইহসানুল করিমের কফিন নেওয়া হয় জাতীয় প্রেসক্লাবে।

সেখানে তার জানাজায় অংশ নেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক কৃষি মন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রেস উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ।

শাহাজাহান সরদার, সাইফুল আলম, নঈম নিজামসহ বেশ কয়েকজন সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি, সংসদ সদস্য এবং সরকারি কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন জানাজায়।

জানাজার পরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল কবির আহমেদ প্রয়াত প্রেস সচিবের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং, আওয়ামী লীগ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, ডিআরইউ, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ফুল দেওয়া হয় ইহসানুল করিমের কফিনে।

ইহসানুল করিমের জন্ম কুষ্টিয়া জেলায়, ১৯৫১ সালের ৫ জানুয়ারি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা করেন। পরে ভারতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর করেন।

তারুণ্যে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া ইহসানুল করিম ১৯৬৭ সালে কুষ্টিয়া সদর মহুকুমা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে তিনি তরুণ ছাত্রনেতা হিসেবে ছাত্রদের সংগঠিত করেন।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দেন ইহসানুল করিম। বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ)-এর সদস্য হিসেবে পশ্চিম রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবে জানাজার পর ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই বীর মুক্তিযেদ্ধার প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান জানায় পুলিশের একটি চৌকস দল। এ সময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর।

ইহসানুল করিম ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য। শ্রদ্ধা নিবেদনে আগে ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমীন ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত প্রয়াত এই সাংবাদিকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। ইহসানুল করিমের স্ত্রী ও ছেলেসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে ১৯৭২ সালে ইহসানুল করিমের কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯৯৭ সাল থেকে পাঁচ বছর তিনি নয়া দিল্লিতে বাসসের ব্যুরো প্রধান ছিলেন।

বিবিসি, পিটিআইসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বাংলাদেশ প্রতিবেদক হিসেবেও কাজ করেছেন ইহসানুল করিম, সহকর্মীদের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘হেলাল ভাই’ হিসেবে।

২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে অবসরে যান ইহসানুল করিম। ওই বছরই তাকে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

২০১৫ সালের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় ইহসানুল করিমকে। এরপর কয়েক দফা তার মেয়াদ বাড়ানো হয়।

পরিবারের সদস্যরা জানান, জোহরের নামাজের পর আরেক দফা জানাজা শেষে ইহসানুল করিমকে বনানী কবরাস্থানে দাফন করা হবে।