“আমাদের দুঃখের সময় ইন্ডিয়াই পাশে থাকে,” বলেন শেখ হাসিনা।
Published : 06 Sep 2022, 05:38 PM
তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিসহ ভারত ও বাংলাদেশের অন্যান্য অমীমাংসিত বিষয়গুলোর দ্রুত সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, “ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং নিকটতম প্রতিবেশী। গত ৫০ বছরে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব তৈরির মাধ্যমে দুই দেশ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করছে।”
মঙ্গলবার দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউজে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে অনেক অনিষ্পন্ন সমস্যার সমাধান ইতোমধ্যে করেছি। আমি আশা করি তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তিসহ অন্যান্য অনিষ্পন্ন বিষয়গুলো শিগগির সম্পন্ন করতে পারব।
“আমি প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ধন্যবাদ জানাই, আজকে আমরা কুশিয়ারা ইস্যু সমাধান করেছি এবং আমি আশাবাদী, মোট যে ৫৪টি নদী আছে, সেগুলো… আমি জানি, যতক্ষণ পর্যন্ত মোদী আছেন, বাংলাদেশ-ভারত আমরা সব সমস্যার সমাধান করে ফেলব।”
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের আগে দুই দেশের পানি সম্পদ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়ে দুইপক্ষ একমত হয়েছিল। মনমোহন সিংয়ের সফরেই বহু প্রতীক্ষিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় তা আটকে যায়।
নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার ভারতের ক্ষমতায় আসার পর তিস্তা চুক্তি নিয়ে আশার কথা শোনা গেলেও মমতার মত বদলায়নি। ফলে দুই দেশের মধ্যে গত এক যুগে অধিকাংশ বৈঠকেই তিস্তার প্রসঙ্গ আলোচনায় এসেছে।
গেল অগাস্টের শেষে দিল্লিতে দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনের খুঁটিনাটি চূড়ান্ত হয়, যা নিয়ে মঙ্গলবার দুই দেশ সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, “৫৪টি অভিন্ন নদী এবং চার হাজার কিলোমিটার সীমান্ত বেষ্টিত বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশ তাদের জনগণের সম্মিলিত কল্যাণে বদ্ধপরিকর।”
বাংলাদেশ ও ভারত অংশীদার হিসেবে একসঙ্গে কাজ করতে পারলে কেবল তা দুই দেশের জন্যই নয়, বরং পুরো অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে এবং আমাদের দুই দেশের ও আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে আমি ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একমত হয়েছি।”
দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষর হওয়া বেশ কিছু সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “যেটা আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে আরও উন্নত করবে।আর আমাদের দুই দেশের মানুষের আরও বেশি উন্নতি হবে, সেই সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।”
বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ‘প্রতিবেশী কূটনীতির’ রোল মডেল হিসেবে দেখার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বছর পূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী আয়োজিত ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’র সফল সমাপ্তির জন্য ভারতকে অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা।
দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বৈঠককে আরেকটি ‘ফলপ্রসূ আলোচনা’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, এই বৈঠকের ফল দুই দেশের জনগণকেই উপকৃত করবে বলে তিনি আশা করছেন।
দুই দেশের মধ্যকার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন এবং পারস্পরিক অগ্রাধিকারমূলক বিষয় আলোচনায় স্থান পায় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “কানেক্টিভিটি, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা, সীমান্ত এবং ঋণ সুবিধার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা হয়।”
ভারতের সরকারপ্রধান নরেন্দ্র মোদীর দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, “এটি আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও গতি প্রদান করেছে।”
প্রতিবেশীদের সমস্যা যে আলাপ-আলোচনার মধ্যে সমাধান করা যায়, বাংলাদেশ-ভারত সেই দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদীজির ভাষণে আপনারা সেটা পেয়েছেন।”
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত সরকার এবং দেশটির জনগণের ত্যাগের কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, সেই সময় থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ইতিহাস, সংস্কৃতি, পারস্পরিক আস্থা ও সম্মান, দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তিন বছর পর আবার ভারত সফর করছেন, এটা তার জন্য আনন্দের। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্য ঘাতকের হাতে নিহত হওয়ার পর ছয় বছর ভারতে নির্বাসিত জীবন কাটানোর কথাও শেখ হাসিনা বলেন।
“১৯৭৫ সালে যখন বাবা, মা ভাই- সব হারিয়ে আমরা দুই বোন অসহায় এই ইন্ডিয়াতেই আশ্রয় পেয়েছিলাম। শুধু আমি না, আমাদের পরিবারের আরও যারা আপনজন হারিয়ে কেউ গুলিতে আহত অবস্থায় এখানেই আশ্রয় নিয়েছিল। কাজেই সব সময় আমাদের দুঃখের সময় ইন্ডিয়া আমাদের পাশে থাকে।”